ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং যেকোনো প্রয়োজনে পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের সদস্যরা থাকেন পিওএম ব্যারাকে। ২০০৭ সালে দাঙ্গা পুলিশের নাম বদলে করা হয় পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট। চার ভাগে বিভক্ত এ বিভাগ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ।
Advertisement
সম্প্রতি জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। পিওএমের আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা, পুলিশ সদস্যদের কর্মঘণ্টা ও দৈনন্দিন খাবারের মানসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেন এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে যেকোনো সেক্টরে সফলতার সঙ্গে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। এ জন্য দরকার টিমওয়ার্ক, অদম্য চ্যালেঞ্জিং মানসিকতা ও ধৈর্য। ঐকান্তিক চেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে বদলে গেছে এক সময়ের দাঙ্গা পুলিশের অবস্থা।’
পিওএম প্রসঙ্গে বলেন, ঢাকা মহানগরীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শহরের অবকাঠামো বৃদ্ধি, অফিস আদালত ও রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিএমপিও সম্প্রসারিত হয়েছে। ৪৯টি থানা ও আলাদা পুলিশ লাইন হয়েছে।
Advertisement
১৯৮৫ সালে গঠিত দাঙ্গা পুলিশ বদলে যায় ২০০৭ সালে। তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার দাঙ্গা পুলিশের নাম বদলে করেন ‘পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট।’
ডিএমপির জনবল এখন প্রায় অর্ধলাখ। ডিএমপির প্রয়োজনেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করে চলেছে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট- পিওএমের চারটি শাখা। এর মধ্যে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের ভেতরে রয়েছে তিনটি- উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম। পূর্ব বিভাগটি রাজারবাগে অবস্থিত। সম্প্রতি নতুন করে ডিএমপির জন্য ডেমরা পুলিশ লাইন্স নির্মাণ করা হচ্ছে। ডেমরা পুলিশ লাইন্সে থাকবে পিওএম পূর্ব বিভাগ।
পিওএম সম্পর্কে মানুষের একটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাদের আবাসন ও মানসম্মত খাবার নিয়ে প্রশ্ন আছে। এর কারণ কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নেতিবাচক ধারণা থাকাই স্বাভাবিক। কারণ প্রতিষ্ঠাকালে ব্যারাক ছিল একটি। জনবল ছিল হাজারের বেশি। দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করতে হতো পুলিশ সদস্যদের। টিনশেড ব্যারাকের ওপর থেকে পানি পড়ত। খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন ছিল, অভিযোগ ছিল। কিন্তু সময় গড়িয়েছে, পরিবর্তন এসেছে সবদিকেই। বেড়েছে অনেক সুযোগ-সুবিধা।
Advertisement
দীর্ঘ সময় আমার এখানে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ হয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে এখানে সহকারী কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছি। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বলব, আগের অবস্থা এখন নেই। আমূল পরিবর্তন এসেছে।
পিওএমের আবাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে জনবল বেড়েছে। প্রতিষ্ঠাকালে জনবল ছিল হাজারের বেশি। সেজন্য ব্যারাক ছিল মাত্র একটি। এখন সবমিলে জনবল প্রায় সাত হাজার। কিন্তু ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে ১১টি। এরপরও প্রতিটি হলরুমে থাকছেন ৭৮ পুলিশ সদস্য। তবে আশার কথা হলো- আরও একটি ১৮তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। তখন আর আবাসন নিয়ে এতটুকুও অসুবিধা থাকবে না।
পুলিশ সদস্যদের দৈনন্দিন খাবারের মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে অন্য যেকোনো ইউনিটের চেয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে ভালো খাবার দেয়ার। খাবারের মানোন্নয়নে বাবুর্চিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সাপ্তাহিক খাবারে মেন্যুতে রয়েছে বড় মাছ, মাংস, ছোট মাছ, ডিম, হালুয়া ও রুটি। মাসে দুই লাখ টাকার ঘাটতি বাজেটেও মানসম্মত খাবারের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার অফিস থেকে ভর্তুকি দেয়া হয়। মাসে দুইবার বড়খানা দেয়া হয়। সেখানে পায়েস, জরদা, পোলাও, রোস্টের ব্যবস্থা থাকে। সঙ্গে দেয়া হয় দই, মিঠাই ও সফট ড্রিংকস। খাবারের তদারকির জন্য একজন এডিসি ও চারজন এসি কাজ করেন। এ ছাড়া আমি নিজেও দেখভাল করি। হঠাৎ হঠাৎ স্বয়ং ডিএমপি কমিশনার স্যারও হাজির হন। খাবারের টেস্ট করেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। খাবারের মান নিয়ে কারও কোনো পরামর্শ কিংবা অভিযোগ থাকলে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
কর্মঘণ্টা প্রসঙ্গে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, শুরুতেই বলেছি, জনবল কম থাকায় দুই শিফটে দায়িত্ব একসময় পালন করতে হতো পুলিশ সদস্যদের। কিন্তু এখন জনবল অনেক বেড়েছে। পুলিশ সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য কাঙ্ক্ষিত মানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যই শ্রমঘণ্টা কমিয়েছন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এখন তিন শিফটে আট ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন শেষে ব্যারাকে ফেরেন পুলিশ সদস্যরা। এ নিয়ে আর কোনো অভিযোগ থাকার কথা নয়।
মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়েও আমরা সচেতন আছি। চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে আমরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে আপাতত দুইজন চিকিৎসক চিকিৎসা দিচ্ছেন। গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে পাঠানো হয় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। তবে এত জনবলের জন্য আমরা আলাদা একটি মেডিকেল সেন্টার বা হাসপাতাল চেয়ে পুলিশ সদরে আবেদন করেছি। সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে এখানে ১০ শয্যার একটি মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। আশা করি, অনুমোদন পেয়ে যাব।
আমি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রত্যেক মাসে তিনটি করে কল্যাণ সভার আয়োজন করেছি। সেখানে সরাসরি পুলিশ সদস্যদের দাবি-দাওয়া, অভিযোগ শোনা হয়। পুলিশ সদস্যদের কেনাকাটার জন্য শপিংমল করা হয়েছে। সম্প্রতি বুথ বসানো হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়েও।
কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। প্রতি ব্যাচে ১৮-২০ জন করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক জিমনেসিয়াম। আগামীতে ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
পিওএমের সফলতার জন্য গৃহীত পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে পুলিশের এ যুগ্ম কমিশনার বলেন, পিওএমের করণীয় বিষয় সম্পর্কে সবাই জানেন কিন্তু সফলতা সবাই পান না। সফলতার প্রথম শর্ত টিমওয়ার্ক। এখানকার প্রত্যেকটি পুলিশ সদস্যকে নিজের সন্তানের মতো মনে করি। এতে করে ওদের সঙ্গে আমার কাজের সম্পর্কটা সহজ হয়ে যায়। তখন ওদের সুযোগ-সুবিধা, অভাব সবই অভিভাবকের মতোই পূরণ করতে হয়। আমার মনে হয়, দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে এ দুটি বিষয় মাথায় রেখে পরিকল্পনা করলে কোনোটাই অপূর্ণ থাকে না।
জেইউ/এমএআর/বিএ