জাতীয়

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে উৎসাহিত করুন : সুচি

নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার জন্য উৎসাহিত করার কথা বলেছেন সুচি।

Advertisement

মিয়ানমার সফর থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে গত ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে আরও ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। গত সোমবার ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে মিয়ানমার সফরে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (মিয়ানমারের) মন্ত্রী যখন এসেছিলেন তখনই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের আইডিয়া দেয়া হয়েছিল। সেই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ দিক-নির্দেশনা দেবে এবং তাদের মাধ্যমে রিপ্যাট্রিয়েশন (রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া) ও অন্যান্য বিষয়সহ বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ফয়সালা করবে। আমি এটা টাইমবাউন্ড করার জন্য বলেছি, আমার প্রপোজাল ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করতে হবে, টিওআরগুলোও (কার্যপরিধি) ফাইনাল করতে হবে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন সেখানে যাবেন তখন তিনি এটাকে চূড়ান্ত রূপ দেবেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনা অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি হবে। কর্মপরিধিও এর আগেই ফাইনাল হবে, পরাষ্ট্রমন্ত্রী যাওয়ার আগে।’

‘কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফার ভিত্তিতে যারা আমাদের এখানে ঢুকে পড়েছে তাদের ফেরত নিতে হবে। তারা (মিয়ানমার) এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। তারা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যেসব কথাবার্তা হয়েছে সে বিষয়ে কোনটাই তারা অস্বীকার করেনি, কিংবা করবেন না এমন কিছুও বলেননি।’

‘তারা বলতে চেয়েছিল এরা বাংলাদেশ থেকে (মিয়ানমার) গিয়েছে, সেটা আমরা স্ট্রংলি প্রতিবাদ জানিয়েছি যে, বাংলাদেশ থেকে কেউ কোনদিন তোমাদের দেশে যায়নি। আমাদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা ভালো।’

Advertisement

মন্ত্রী বলেন, ‘এরা বেশিদিন থাকলে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়লে আমরা যেমন অসুবিধায় পড়ব তোমরাও অসুবিধায় পড়বে। এজন্য সময় থাকতে এগুলোর ব্যবস্থা নাও। তারা সবই রাজি হয়েছে। তবে তারা বলছেন একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব ফাইনালাইজ করবেন।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গেও একই কথাবার্তা বলেছি আমি। আমি বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দেশটা যে জায়গায় নিয়ে গেছেন আপনি সেই জায়গায় নিতে পারবেন সেটাই বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে।’

কিছু দুষ্কৃতিকারী রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বলে মিয়ানমার দাবি করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের সহযোগিতা করতে বলেছেন। আমি স্পষ্ট করে বলেছি আমরা কোন দুষ্কৃতকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেই না। বলেছি তোমাদের কাছে যদি জঙ্গিদের কোন লিস্ট থাকে তবে দাও আমরা ব্যবস্থা নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসার সময় সুচি বলেছেন, তোমরা তাদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য উৎসাহিত কর, তারা তো আর আসতে চায় না। আমি বললাম আসতে কেন চায় না তা আপনি নিশ্চয়ই জানেন। আসার পরিবেশটা তৈরি করতে হবে। যেটা নাকি কফি আনান কমিশনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সবই তারা শুনেছেন, বলেছেন সবই করবেন। আমরা মনে করি তারা পর্যায়ক্রমে এগুলো করবেন।’

সুচি কি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেছেন? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো বললাম তিনি ফিরিয়ে নেবেন। ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তিনি গ্রাউন্ডওয়ার্ক শুরু করেছেন। কফি আনানের সুপারিশ নিয়ে তিনি পর্যায়ক্রমে কাজ করবেন। (রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে) তিনি পরিবেশ সৃষ্টি করবেন সেটা বলেছেন।’

‘আমরা মনে করি আমরা হাঁটা শুরু করেছি, আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব’ মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা উচিত, আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাই চান। বলেছি, তা না হলে আমরা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জায়গায় যাব।’

সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখার বিষয়ে আপনারা কি বলেছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা বলেছেন এটা দুষ্কৃতকারীরা পুঁতে রেখেছে, সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে তা পরিষ্কার করবে।’

মিয়ানমার দুষ্কৃতকারীদের কোন তালিকা দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা দুষ্কৃতকারী বলে একটা তালিকা দিয়েছে কিন্তু ঠিকানাবিহীন। বাবার নাম নেই, মায়ের নাম নেই, কিছুই নেই। শুধু নামের একটি অংশ দিয়ে কাউকে বের করা দুঃসাধ্য। আমরা বলেছি আরও ডিটেইল দেয়ার জন্য।’

কতজনের নাম দিয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘না দেখে বলতে পারব না। আমাদের আইজিপি সাহেব বলেছেন তিনি এটা পেয়েছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আলোচনায় তারা রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেনি। আমরাও করিনি, আমরা বলেছি মিয়ানমারের নাগরিক।’

চাপের মুখে থাকা মিয়ানমার এভাবে ডেকে আইওয়াশ করে পার পেতে চাইছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোন কিছু নেগেটিভলি দেখি না। আমি মনে করি এটা তাদের প্রবলেম এটা তারা সলভ করবে। এটা আমরা বিশ্বাস করি, আমরা মনে করি। আমাদের এই সমস্যা সমাধান করতেই হবে।’

মিয়ানমার সফরের বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ফিক্সড এজেন্ডাগুলো নিয়ে আলাপ করেছি, এমওইউ সাইন হয়েছে। আমাদের বর্ডার গার্ড ও তাদের বিজিপির সঙ্গে একটা সম্পর্ক হোক এটা আমরা চাচ্ছিলাম। তারা বিলম্ব করছিল। এবার তারা বলেছে যেকোনো সমস্যা তারা সমাধান করবে এজন্য বর্ডার লিঁয়াজো অফিস নামে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এটা অনুযায়ী তিন মাস পরপর বিজিবি-বিজিপির সভা হবে। ছয় মাস পরপর সচিব পর্যায়ে ও সময় অনুযায়ী যদি প্রয়োজন হয় তবে মন্ত্রী পর্যায়েও কথা হবে। সেভাবেই এমওইউ সাইন হয়েছে।’

তিনি আর বলেন, ‘বর্ডার সিকিউরিটি অ্যান্ড ডায়ালগ নিয়েও একটি এমওইউ সাইন হয়েছে। নাফ নদীর সীমানা আগেই নির্ধারিত হয়েছে। যেকোনো সময় আমাদের রাষ্ট্রদূত ও তাদের ওখানকার কর্ণধার সাইন করবেন। সমুদ্রের কিছু কিছু এলাকায় তাদের জেলেরা ও আমাদের জেলেরা ভুলক্রমে ঢুকে যায়, সমঝোতার মাধ্যমে এগুলো আমরা খেয়াল রাখব। তাদের সীমানা ঘেঁষে সেন্টমার্টিন যাওয়ার বিষয়ে সমস্যা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।

মাদকদ্রব্য যাতে তাদের দেশ থেকে আমাদের দেশে না আসে সেজন্য আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি, তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’

আরএমএম/ওআর/জেআইএম