এবার ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান (কর্পোরেট স্পন্সর) বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
Advertisement
ডিএসই জানিয়েছে, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের কাছে ইসলামী ব্যাংকের ৩৭ লাখ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানাটির ব্যাংকটির ১ লাখ শেয়ার বিক্রি করবে। বিদ্যমান বাজার দরে পাবলিক মার্কেটে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এ শেয়ার বিক্রি করবে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর কুয়েত ফাইন্যান্স হাউজ ইসলামী ব্যাংকের সব শেয়ার বিক্রি করে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছিল ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮২টি শেয়ার, যা ব্যাংকের মোট শেয়ারের সোয়া ৫ শতাংশ।
এদিকে কুয়েত ফাইন্যান্স হাউজ সব শেয়ার বিক্রি করলেও ইসলামী ব্যাংকে এখনও কুয়েতের আরেক প্রতিষ্ঠান দ্য পাবলিক ইনস্টিটিউট ফর সোস্যাল সিকিউরিটির নামে ১০ কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪১ শেয়ার রয়েছে, যা ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ। গুঞ্জন রয়েছে এ শেয়ারও বিক্রি করে দেবে কুয়েত।
Advertisement
শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশে ১৯৮৩ সালে বেসরকারি উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় ব্যাংকটির মোট শেয়ারের প্রায় ৭০ শতাংশই ছিল বিদেশিদের হাতে। তবে ২০১৪ সাল থেকে বিদেশিরা ব্যাংকটির শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করে। বর্তমানে বিদেশিদের কাছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার আছে ৩৫ শতাংশের মতো।
ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্যোক্তা বাহরাইন ইসলামিক ব্যাংক ২০১৪ সালে ইসলামী ব্যাংকের সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ২০১৫ সালে সব শেয়ার বিক্রি করে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক। এটিও ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আসে। পরিবর্তনের পর গত মে মাসে ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক আইডিবি (ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংক) ৮ কোটি ৬৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করে।
বর্তমানে বিদেশিদের কাছে ইসলামী ব্যাংকের যে শেয়ার রয়েছে তার মধ্যে-আল রাজি কোম্পানি ফর ইনস্টেমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড’র ৯ দশমকি ৯০ শতাংশ, আরাবাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট’র ৯ দশমকি ৯০ শতাংশ, আবদুল্লাহ আবদুল আল রাজি’র ৭ দশমকি ৫৮ শতাংশ, পাবলিক ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল সিকিউরিটির ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, আইডিবি’র ২ দশমিক ১০ শতাংশ, জেপি মরগানের গ্রাহকের ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং আবদুল্লা আবদুল আজিজ আল রাজি’র ১ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
Advertisement
অপরদিকে দেশি শেয়ারের মধ্যে-এক্সেল ডাইং’র ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, মোর্তেজা অ্যাসেটের ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ, আইসিবি’র ২ দশমিক ৪২ শতাংশ, ইবনে সিনা ট্রাস্টের ২ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং গ্র্যান্ড বিজনেস, আরমাডা স্পিনিং মিলস, জেএমসি বিল্ডার্স, ব্লু ইন্টারন্যাশনাল, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, এবিসি ভেঞ্চার, প্লাটিনাম এনডেভেয়ার্স, এক্সেলসিওর ইমপেক্স ও মারশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ’র ২ শতাংশ করে শেয়ার রয়েছে। এছাড়া বায়তুল শরীফ ফাউন্ডেশন, ইসলামিক ইকোনমিক রিসার্চ ব্যুরো ও বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের কাছেও ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, একদিকে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমেছে, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে পরিচালন নগদ অর্থের সংকট। চলতি বছরের তিন প্রান্তিকের মধ্যে সর্বশেষ প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে কম মুনাফা হয়েছে ব্যাংকটির। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (সমন্বিত) হয়েছে মাত্র ৩১ পয়সা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা কমেছে ১৫ পয়সা।
প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের শেয়ার প্রতি মুনাফা শুধু আগের বছরের তুলনায় নয়, ২০১৫ সালের তুলনায়ও কমে গেছে। ২০১৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ৩৩ পয়সা।
আর চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২ টাকা ১১ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৬১ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় প্রতিটি শেয়ারের বিপরীত মুনাফা কমেছে ৫০ পয়সা।
এদিকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেখা দেয়া নগদ অর্থ সংকট থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি ইসলামী ব্যাংক। চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ বা শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১১ টাকা ৬০ পয়সা।
এর আগে জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ২০১৬ সালে ২৩ পয়সা, ২০১৫ সালে ১৪ টাকা ৪৭ পয়সা, ২০১৪ সালে ২৯ টাকা ৮২ পয়সা, ২০১৩ সালে ১২ টাকা ৬০ পয়সা, ২০১২ সালে ৯ টাকা ৭৬ পয়সা, ২০১১ সালে ১২ টাকা ৯৫ পয়সা শেয়ার প্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ ছিল ব্যাংকটির। অর্থাৎ চলতি বছর বাদ দিলে আর কোনো বছরে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়নি।
এমএএস/এএইচ/জেআইএম