‘বৃহষ্পতি তুঙ্গে’ না থাকলেও মাঝে সময়টা বেশ ভালই কাটছিল। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের সাথে পিছিয়ে থেকেও বীরের মত লড়ে টেস্ট জয়ে সিরিজ সমতা, তারপর শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আর দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ-তিনটিতেই ১-১ এ ড্র করে দেশে ফেরা।
Advertisement
এরপর দেশের মাটিতে প্রবল পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার সাথেও টেস্ট সিরিজ ড্র। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রাখার পর শুরু হয়েছে 'শনির দশা'। যেন শনি ভড় করেছে টাইগারদের ওপর। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে চরম নাকাল মুশফিকুর রহীমের দল। এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ মাশরাফিরা।
মাঠে খারাপ পারফরমেন্স আর করুণ পরিণতির সাথে যোগ হয়েছে ইনজুরি। প্রথমে পেসার মোস্তাফিজ, পরে তামিম ইকবাল ইনজুরির শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। সব মিলে দক্ষিণ আফ্রিকায় সময়টা খারাপ যাচ্ছে টাইগারদের। এরকম অবস্থায় আজ থেকে শুরু টি টুয়েন্টি সিরিজ। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় শুরু প্রথম ম্যাচ।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পারফরম্যান্স দিয়েই বাংলাদেশের ওয়ানডে পরিসংখ্যানকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। এই সিরিজটি ছাড়া গত তিন চার বছর বাংলাদেশ একদিনের ক্রিকেট মানে ৫০ ওভারের ম্যাচে যথেষ্ট ভাল ক্রিকেট খেলেছে। সে তুলনায় টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির রেকর্ড খারাপ।
Advertisement
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ভাল দল। সেটা মাশরাফির সাহসী , দক্ষ, যোগ্য আর গতিশীল নেতৃত্বে। সাথে তামিম, সৌম্য, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ , সাব্বির, মিরাজ , মোস্তাফিজ, রুবেলরাও গড়পড়তা অবদান রাখছেন। সবার সন্মিলিত প্রচেষ্টায় একটা ইউনিট গড়ে উঠেছে।
সেখানে হাতে গোনা ক'জন নয়, বেশ কজন পারফরমার প্রায় নিয়মিতই পারফরম করেছেন। কেউ ব্যাট হাতে , কেউ বোলিংয়ে কার্যকর অবদান রাখছেন। আর সে কারণে টিম পারফরম্যান্সও হয়েছে ভালো। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে সে অবস্থা নেই।
টেস্টে তামিম, মুশফিক ধারাবাহিকভাবে রান করলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাদের ব্যাটও সেভাবে কথা বলে না। ক্রিকেটের এই ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশের চালিকশক্তি সাকিব। রানও করেন সাকিব, বল হাতে উইকেটও নেন এ বাঁহাতি স্পিনার। সাকিবের ব্যাট ও বল হাতে জ্বলে ওঠার ওপর অনেকটাই সাফল্য নির্ভর করে বাংলাদেশের।
সাকিব ভাল খেলেননি, কিছুই করতে পারেননি ; অথচ বাংলাদেশ জিতেছে- এমন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খুব কম। বেশী দূর যাবার দরকার নেই। এ বছর গত ৬ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সর্বশেস টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও সেরা পারফরমার ছিলেন সাকিব।
Advertisement
শুধু ম্যাচ সেরাই নন, ব্যাট হাতে ৩৮ রান করার পাশাপাশি ২৪ রানে ৩ উইকেট দখল করে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক হন সাকিব। কাজেই আজ দ. আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের আশা ভরসার কেন্দ্র বিন্দুও এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
কেন যেন ওয়ানডেতে তার সাম্প্রতিক পারফরমেন্স তেমন ভাল যাচ্ছেনা। কিন্তু টেস্টে বল ও ব্যাট হাতে সাকিবের ফর্ম ভালই। শেষ পাঁচ টেস্টে তার ব্যাট থেকে একটি সেঞ্চুরি আর দুটি বিগ ফিফটি (৮২, ১১৬, ৮৪) । আর বল হাতে আছে দু'দুটি ৫ উইকেটের স্পেল (৫/৬৮, ৫/৮৫)।
ওয়ানডেতে সাকিবের ব্যাটে রান থাকলেও বল হাতে চেনা সাকিবের দেখা মিলছে না। ৫০ ওভারের ফরম্যাটে শেষ ১১ ইনিংসে একটি শতরান ও দুটি ফিফটি আছে। তার শেষ ১১ ইনিংস ছিল এরকম : ৫৪+১৪+৬+১৯+১০+২৯+১১৪+১৫+২৯+৫+৬৩।
কিন্তু বল হাতে অচেনা সাকিব। শেষ ১০ ম্যাচে ৭ বার উইকেট শুন্য ! যে বাঁহতি স্পিনার বল ধরলেই দুই বা তিন উইকেট- সেই সাকিব গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় লঙ্কানদের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচ আর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সবে শেষ হওয়া তিন ম্যাচ সহ শেষ পাঁচ ম্যাচে চার বারই উইকেট পাননি।
তবে টি-টোয়েন্টির হিসেব আলাদা। এই ফরমেটে ব্যাট ও বল হাতে চেনা সাকিবের দেখাই মিলেছে। শেষ ম্যাচে সাকিবের রান ২২৯। আর শেষ ১০ ম্যাচে তার ঝুলিতে উইকেট জমা পড়েছে ১৩ টি।
পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে , সাকিব টি-টোয়েন্টিতে ফর্মেই আছেন। কেউ কেউ হয়ত ফোড়ন কাটবেন। বলবেন, ওপরের পরিসংখ্যান তো আর দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়। তা ঠিক। ওপরে যে কয়টা ম্যাচের কথা বলা হয়েছে, তার একটিও প্রোটিয়াদের বিপক্ষে না। তারপরও বলা , টেস্ট সিরিজ ছাড়া সবগুলোই কিন্তু দেশের বাইরে। দেশের বাইরে বরাবর ভাল খেলার রেকর্ড যার, সেই সাকিব এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জ্বলে উঠবেন না , তাই বা কি করে বলা ?
কাল শেষ প্র্যাকটিস সেশনে তার মুখ থেকে উচ্চারিত শেষ সংলাপ , ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট হচ্ছে ছোট্ট পরিসরের খেলা। এখানে এত চিন্তা ভাবনার কিছু নেই।' এ সংলাপই বলে দেয় সাকিব অন্য ধাতুতে গড়া। ভয়-ডর তাকে গ্রাস করতে পারে না। আজ ব্লুমফন্টেনের রাতটা সাকিবের হতেও পারে। আর যদি তাই হয়, তাহলে স্পেশালিষ্ট সাকিবের হাত ধরে সিরিজে প্রথম বারের মত অন্য বাংলাদেশের দেখা মিলবে হয়তো!
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম