মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা যে ধরনের মানবিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছেন তাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে বর্ণনা করেছে আন্তর্জাতিক সেবাসংস্থা রেডক্রস। রোহিঙ্গা সঙ্কটে বিশ্ব ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।
Advertisement
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট স্যোসাইটির প্রধান এলহাজ আস সি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘এই সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধান দরকার। কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়া বিশ্ব নেতাদের রোহিঙ্গা ইস্যুকে গুরুত্ব সহকারে নেয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
রাখাইনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রবেশের অনুমতি দেয়নি মিয়ানমার। মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠেছে।
তবে ২৫ আগস্টের পর সহিংসতায় বিধ্বস্ত রাখাইনের কিছু অংশে আটকে পড়া হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের মাঝে জরুরি সহায়তা সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে রেডক্রস। মিয়ানমারে এবং প্রতিবেশি বাংলাদেশে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় তহবিল গঠনের জন্য ৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়েছে।
Advertisement
এলহাজ আস সি বলেন, ‘আমরা এখানের সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছি। যা শুধু এই পরিসরেই নজিরবিহীন নয় বরং বহু ক্ষেত্রেই; যেখানে বঞ্চণার শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা।’
‘অন্যদের চেয়ে রাখাইনে প্রবেশে রেডক্রসের বড় ধরনের সুযোগ আছে। কিন্তু পুরো দায়িত্ব শুধুমাত্র রেডক্রসের ঘাড়ে বয়ে নেয়া সম্ভব নয়। সেখানে অন্যান্য মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।’
জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৬ লাখ ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তারা তেরপলের নিচে এবং কর্দমাক্ত আশ্রয় শিবিরে ভয়াবহ পরিবেশের মধ্যে বসবাস করছেন। ইউনিসফ বুধবার বলছে, এদের অধিকাংশই শিশু।
রেডক্রসের প্রধান বলেন, ‘আমি কখনোই এত শিশুকে কোনো ধরনের সঙ্কটে শরণার্থী হতে দেখিনি। শিশুরা এই সঙ্কটটের ভয়াবহতা দেখছে; কিন্তু এটি হওয়া উচিত ছিল না। এই শিশুরা তাদের শৈশব হারাচ্ছে।’
Advertisement
২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া রাখাইনের রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসাবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। তবে গত ২১ সেপ্টেম্বরে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দেশটির নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি বলেন, তিনি জানেন না কেন মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে মিয়ানমার। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে। যদিও মিয়ানমারের নেত্রী সু চি মঙ্গলবার নেইপিদোতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আবারও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলেছেন।
এসআইএস/আইআই