‘ব্লু হোয়েল’ গেম খেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বেঁচে গেছেন ফয়সাল আহমেদ হৃদয়। মরণফাঁদ খ্যাত এ গেমটি খেলে চ্যালেঞ্জ ‘আত্মহত্যা’ করতে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে বেঁচে গেলেও এখন তিনি ‘ভারসাম্যহীন’। গতকাল (বুধবার) সকালে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী এখন বাঁচতে চান।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) হৃদয়ের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘আমি কখন, কেন, কী অবস্থায় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েছিলাম জানি না। কোথা থেকে কেমন করে আমার হাতে ব্লেড এসেছিল তাও বলতে পারব না। কোথায় ব্লেড আছে, আমাকে সেখানে কে নিয়ে গেল জানি না। আমার হাতে ব্লেড আসলো, আমি ব্লেড দিয়ে কেটে হাতে তিমি আঁকলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইংরেজিতে এফ ৫৭ (F 57) লিখলাম। সারা শরীরে কাটাকুটি করলাম। পায়ের আঙুলে সুই ঢুকিয়ে দিয়েছি রক্ত বের হচ্ছে। আমি তা দেখে আনন্দ পাচ্ছি। আমার মাথা ঘুর ঘুর করে। শরীর একদম হালকা লাগছে। শরীরের উপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমার ইচ্ছা হচ্ছে সকল আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করি। আমার হয়তো সময় শেষ। আমি এখন বাঁচতে চাই।’
প্রবাসী আব্দুল মালেকের দুই ছেলে এক মেয়র মধ্যে সবার বড় ফয়সাল আহমেদ হৃদয়। সে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ‘ব্লুল হোয়েল’ খেলে মানসিকভাবে চরম ‘ভারসাম্যহীন’ হৃদয়কে বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Advertisement
হৃদয়ের মা গৃহিনী জাহানারা আক্তার লাকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে তার (ফয়সাল) গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হয়। এক পর্যায়ে দেখি, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেডের আঁচড়। সেখান থেকে রক্তও বের হচ্ছে। কিন্তু তার কোনো ভাবান্তর নেই। কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে ঘর থেকে ব্লেড, ছুরি-চাকু, দা নিরাপদ দূরে সরিয়ে রাখি। পরের দিন দেখি আবারও কেটেছে। হাতে মাছের প্রতিকৃতি আঁকা।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই। কিন্তু গত দু’দিন আগে দুপুর ২টার দিকে বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে। এরপর আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কথা বলে চাঁদপুর জেলা শহরের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সালেহ আহমেদের কাছে যাই। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে হৃদয় জানান, ‘যে ভিডিওগুলো আমি দেখেছি সেগুলো আমার মাথায় ঢুকে আছে। আমাকে সেই ভিডিও থেকে নির্দেশ করা হয় কখন কী করতে হবে। আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার মাথায় কী যেন ঘুরপাক করছে। আমি শুধু নানা ছবি দেখি। কিন্তু আমি আর সে সব দেখতে চাই না। আমি এখন বাঁচতে চাই।’
হৃদয়ের কাজিন কলেজ ছাত্র মেহেদী আশরাফ লিমন জানান, ‘বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে হৃদয়কে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মানসিক বিভাগে পাঠিয়ে দেন। এখন হৃদয় মানসিক বিভাগে চিকিৎসাধীন আছে।’
Advertisement
ইকরাম চৌধুরী/আরএস/আরআইপি