ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের মাঠে রিয়ান ব্রেস্টারের পেছনে ছুটলো ইংল্যান্ডের গোটা দল। মুহুর্তের মধ্যেই সতীর্থ খেলোয়াড়দের মাঝে হারিয়ে গেলেন লিভারপুলের এ ফরোয়ার্ড। ব্রেস্টারের কাছেই যে ৩-১ গোলে হেরে গেলো ব্রাজিল! তার হ্যাটট্রিকে অধরা যুব বিশ্বকাপের ট্রফি জায়ের শেষ মঞ্চে উঠলো ইংল্যান্ড।
Advertisement
মাঠের আরেক পাশে তখন ভিন্ন চিত্র। যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সবুজ ঘাসে হাত-পা টান করে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ব্রাজিলের কয়েকজন ফুটবলার। কোচ কার্লোস আমাদেউ মাঠে ঢুকে সবাইকে সান্তনা দিলেন। কয়েকবার তাকালেন সল্ট লেগের প্রায় পূর্ণ গ্যালারিরের দিকে। ২৮ অক্টোবর এ মাঠেই যে আবার নামবেন তারা। তবে ফাইনাল নয়, তৃতীয় স্থানের জন্য।
যুব ভারতীর চিত্রটা অনেকাংশেই মিলে গেলো ২০১৪ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে সেমিফাইনালে ব্রাজিলের হারের পর বেলো হরিজন্তের সঙ্গে। বুধবার কলকাতার যুব ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনে আরেকটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলো নেইমারের দেশ। ইংল্যান্ড গতিময় ফুটবল খেলেই ব্রাজিলবধ করে প্রথমবারের মতো উঠলো ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে।
কলকাতাবাসীর জন্য এ ম্যাচটি ছিল বোনাস। এ শহরের মানুষও তাদের দিয়েছে বুকভরা ভালোবাসা। গ্যালারির ৮০ ভাগই ছিল হলুদ জার্সিধারীদের সমর্থক। যখনই ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা বল নিয়ে ইংল্যান্ডের রক্ষণে ঢুকেছেন তখনই ব্রাজিল ব্রাজিল স্লোাগানে মুখরিত হয়েছে স্টেডিয়াম। শেষ পর্যন্ত ব্রাজিল সমর্থকদের হতাশ করে ফাইনালের টিকিট নিয়ে নিলো ইংল্যান্ড।
Advertisement
এই সল্ট লেকেই বড়দের হয়ে জার্মানির বিপক্ষে মধুর এক প্রতিশোধ নিয়েছিল ব্রাজিলের ছোটরা। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা পিছিয়ে পড়েও হোটেলে ফিরেছিল দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে। মাত্র চারদিনের ব্যবধানেই সেই সল্ট লেকেই অনুজ্জ্বল নেইমাদেরর উত্তরসূরিরা। যেভাবে শুরু করেছিলেন পলিনহো, লিনকন ও অ্যালানরা তাতে মনে হয়েছিল সল্ট লেকে আরেকটি ব্রাজিলীয় কাব্যই রচিত হচ্ছে।
ব্রাজিলকে বেশি সময় দেয়নি ইংল্যান্ড। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটা একবার নিয়ে আর ছড়েইনি। গতি আর ডিফেন্সচেরা পাসে তছনছ করে দিয়েছে ব্রাজিলের রক্ষণ। আর পরিকল্পিত সে আক্রমণগুলো কাজে লাগিয়ে হ্যাটট্রিক করলেন রিয়ান ব্রেস্টার। কোয়ার্টার ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের পর সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে ৭ গোল নিয়ে এখন সবার উপর এ ইংলিশ যুবক।
১০ মিনিটে ব্রাজিলের গোলরক্ষক গ্যাবরিয়েলের ভুলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। বাম দিক দিয়ে হাডসনের ক্রস থেকে ব্রেস্টারের নেয়া শট হাতে পড়লেও আটকাতে পারেননি ব্রাজিল গোলরক্ষক। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় বল জালে পাঠিয়ে ব্রেস্টার স্তব্ধ করে দেন গ্যালারি। ১১ মিনিটের মধ্যে ব্রাজিল ফিরলো ব্রাজিলের মতো করেই।
কিছু সময়ের জন্য ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগ নাচলো ব্রাজিলীয় ফুটবল ছন্দে। বল দেয়া-নেয়া করে একেবার বক্সে ঢুকে পড়লেন ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডরা। তবে গোলটি পেলেন না ফরোয়ার্ডদের কেউ। দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে সমতা আনলেন ব্রাজিলের রাইটব্যাক ওয়েসলে। মুহুর্তেই জেগে উঠলে ঝিমিয়ে পড়া যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারি।
Advertisement
শুরুর পর কয়েক মিনিট আর সমতায় ফেরার আগের কয়েক মিনিট ছাড়া মাঠে আর ব্রাজিলকে পাওয়া গেলো না ব্রাজিলের মতো করে। ইংল্যান্ড মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে আক্রমণগুলো তৈরি করেছে। তাদের প্রতিটি আক্রমণই ছিল ক্ষুরধার। জ্যামিতিক ছকে ফুটবল খেলেছে বেকহ্যামদের উত্তরসূরিরা। তাদের পরিকল্পিত ও গতিময় ফুটবলের সামনে রীতিমতো অনুজ্জ্বল হয়ে থাকলো ব্রাজিল। ল্যাটিন আমেরিকার দলটির রক্ষণের দূর্বলতটাই তাদের ডোবালো সেমিফাইনালে।
পলিনহো ও লিনকন এ ম্যাচে ছিলেন নিজেদের ছায়া। জার্মানীর বিপক্ষে দুর্দান্ত গোল করে ব্রাজিলকে সেমিফাইনালে তোলা পলিনহোকে বোতলবন্দী করে রেখেছিলেন ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগ। তার ওপর প্রথমার্ধের শেষ দিকে আঘাত পান ভাস্কো দ্য গামার ফরোয়ার্ড। লিনকনও আতঙ্ক ছড়াতে পারেননি গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচে।
তারপরও যে সুযোগগুলো পেয়েছিল ব্রাজিল তা বিফলে গেছে ব্রেস্টারের মতো একজন ফিনিশারের অভাবে। ম্যাচ ২-২ করার সুযোগও পেয়েছিল ব্রাজিল। গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল বাইরে পাঠিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন ব্রেনার। উল্টো ৭৭ মিনিটে ব্রেস্টারের হ্যাটট্রিক পূরণ করা গোলে হারের ব্যবধান ১-৩ হয় ব্রাজিলের।
আরআই/আইএইচএস/এমএস