খেলাধুলা

টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক সাকিবের দ্বিতীয় ইনিংস

তার কত নাম? কত বিশেষণ! অনেকেই তাকে বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। কারো কারো চোখে তিনিই টিম বাংলাদেশের প্রধান চালিকাশক্তি। আবার কেউ কেউ তাকে ‘সব্যসাচি’ বলেও ডাকেন।

Advertisement

যে নামেই ডাকা হোক না কেন, আসল সত্য হলো, সব ফরম্যাটে তিনিই বাংলাদেশের সফলতম পারফরমার। যার ব্যাট যেমন আস্থার প্রতীক। তেমনি বোলিংয়েও সবচেয়ে বড় নির্ভরতা। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটে ব্যাট ও বল হাতে সাকিব আল হাসানের সাফল্য, অর্জন ও কীর্তিও দারুণ। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সাকিব বাংলাদেশ দলের এক নম্বর অলরাউন্ডার।

টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম ইকবালের (৩৮৮৬) পর দ্বিতীয় সর্বাধিক (৩৫৯৪) রান সংগ্রহকারী সাকিব। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বাধিক (১৮৮) উইকেট শিকারিও বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিব।

৫০ ওভারের ফরম্যাটেও অলরাউন্ডার সাকিবের জয়জয়কার। এখানেও তামিম ইকবালের (৫৭৬৬) পর রান তোলায় সাকিব (৫০৮০) দ্বিতীয়। বল হাতেও মাশরাফির (২৩১) পর দ্বিতীয় সর্বাধিক (২২৬) উইকেট শিকারি।

Advertisement

আর টি-টোয়েন্টিতে রান (৫৯ ম্যাচে ১২০৮) এবং উইকেট শিকারে (৭০ উইকেট) সংগ্রহে সবার ওপরে সাকিব।

এতো গেল পারফরমার সাকিবের সাফল্যের সাতকাহন। এবার আসা যাক অধিনায়ক সাকিব প্রসঙ্গে। না এসে উপায় কি? অধিনায়ক সাকিবের ক্যারিয়ারে এক নতুন সূর্য্য যে হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে!

আগামীকাল থেকে শুরু টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান যুগ। মাশরাফি বিন মর্তুজা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসরের পর ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট্ট পরিসরের আসরে তার কাঁধেই দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ দল পরিচালনাার দায়িত্ব।

আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ব্লুমফন্টেইনের মাঙাউঙ্গ ওভালে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিবের নতুন ক্যারিয়ার। এটুকু শুনে আবার ভাববেন না সাকিব আগে কখনো টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব করেননি। করেছেন।

Advertisement

সবার জানা এর আগে সাকিব টেস্ট এবং ওয়ানডেতে বেশ ক’বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে। এর আগে টেস্টে ৯ বার বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছেন সাকিব। আর ওয়ানডেতে সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৫০ ম্যাচ খেলেছে।

অধিনায়ক সাকিবের টেস্ট পরিসংখ্যান বেশ খারাপ; ৯ ম্যাচে জয় মাত্র একটিতে। হার আটটিতে। তবে ওয়ানডে ক্যাপ্টেন সাকিবের সাফল্যের হার মন্দ নয়। ৫০ ম্যাচে সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জিতেছে ২৩টিতে। হেরেছে ২৬টিতে। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত।

টেস্ট এবং ওয়ানডের তুলনায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ‘ক্যাপ্টেন সাকিবের’ ক্যারিয়ার ছোট। ইতিহাস জানাচ্ছে এর আগে মাত্র ৪বার টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। সেটা ২০০৯ থেকে ২০১০ মৌসুমে।

সাকিব প্রথম টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব করেন ২০০৯ সালের ২ আগষ্ট বেষ্টারে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সাথে। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ৫ উইকেটে। সেই ম্যাচ খেলা চারজন (সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, রুবেল ও শফিউল ) আছেন এই দলে।

এরর ২০১০ সালের ৩ ফেব্রæয়ারি হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রোটিয়াদের সাথে আবার সাকিব নেতৃত্ব দেন। কিন্তু এ ম্যাচে বাংলাদেশ খুব বাজে ভাবে হারে। ৭৮ রানে অলআউট (১৭.৩ ওভারে) হয়ে যায় সাকিবের দল।

বø্যাক ক্যাপ্সরা জিতে যায় ১০ উইকেটে। ২০১০ সালের মে মাসে ইংল্যান্ডে হওয়া আইসিসি বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতেও অধিনায়ক ছিলেন সাকিব, গ্রসআইলেটে পাকিস্তানের সাথে আইসিসি বিশ্ব টি-টোয়েন্টি আসরে। পাকিস্তান ২১ রানে জয়ী। সাকিব ৩১ বলে ৪৭ রান।

২০১০ সালের ৫মে ব্রিজটাউনে অস্ট্রেলিয়ার সাথে আইসিসি বিশ্ব টি-টোয়েন্টি আসরের ম্যাচটিই ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অধিনায়ক সাকিবের শেষ ম্যাচ।

যে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ২৭ রানে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিসংখ্যানই জানিয়ে দিলো অধিনায়ক সাকিবের নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জয় অধরাই রয়ে গেছে।

প্রায় সাড়ে সাত বছর পর আবার অধিনায়ক সাকিব। তবে এমন এক সময় যখন টাইগারদের দিনকাল ভাল যাচ্ছে না মোটেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় আগামী কাল থেকে শুরু হবে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।

এ সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ আর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থতার ঘানি টেনেছে টাইগাররা। অর্জন, প্রাপ্তির ভান্ডার শূন্য। পারফরমেন্সের গ্রাফও ছিল অনেক নিচে।

এ রকম এক কঠিন সময়ে আবার অধিনায়ক সাকিব। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি অনিধায়ক সাকিবের নতুন জীবন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজা সরে দাঁড়ানোর কারনেই তিনি অধিনায়ক।

তাই মাশরাফিকে সাথে পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারপরও দায়িত্ব শুরুর প্রথম দিন সাকিব সাথে পাবেন না বন্ধু তামিম ইকবালকেও।

এমনিতেই, ব্যাটিং বিশেষ করে টপ অর্ডারের অবস্থা করুণ। তারওপর সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের এক নম্বর ওপেনারের সার্ভিস পাবেন না। ইনজুরির কারনে দেশে ফেরত এসেছেন তামিম। কঠিন ও দুঃসময়ে ভাঙ্গাচোরা দল নিয়ে দেখা যাক শুরু কেমন হয় সাকিবের?

এআরবি/আইএইচএস/এমএস