বিশেষ প্রতিবেদন

পরিত্যক্ত ট্রলিব্যাগে অবুঝ এক শিশুর সুখের ঘুম!

রাত সাড়ে ৯টা। নিউমার্কেট- নীলক্ষেত মোড়ে রাস্তার আইল্যান্ডে নয়-দশ বছর বয়সী একটি শিশু একটি ট্রলিব্যাগের হাতল ধরে সামনে পেছনে দোলাচ্ছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে দুই শিশু। ওরা তিনজনই খোশগল্পে মত্ত হলেও মাঝে মাঝে ট্রলিব্যাগের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।

Advertisement

একটু লক্ষ্য করতেই দেখা যায়, ট্রলিটির ওপর শুয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে আনুমানিক এক বছর বয়সী এক শিশু। শিশুটির গায়ে এক চিলতে কাপড়। একটি ছোট্ট প্লাস্টিকের বোতলে লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা। দুহাতের দুপাশে আরও দুটি পানি ও কোমলপানীয়ের শূন্য বোতল।

মঙ্গলবার এ এলাকায় ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশার সংখ্যা নগন্য। রাস্তা ফাঁকা থাকার সুযোগে নয়-দশ বছর বয়সী শিশুটি মাঝে মাঝে ট্রলিব্যাগের চাকা ঠেলে শিশুটিকে রাস্তার এপার-ওপার আনা-নেয়া করছিল।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সুমন নামের ওই শিশুটি জানায়, ট্রলিতে শুয়ে থাকা শিশুটির নাম আরিফ। সুমন আর আরিফ সম্পর্কে খালাতো ভাই। আরিফের মা ডাস্টবিনে ময়লা কুড়ানোর কাজের পাশাপাশি কুড়িয়ে পাওয়া ভাঙারি বেচাকেনা করে। জীবিকার তাগিদে দিনভর ব্যস্ত থাকতে হয় বলে আরিফকে সে দিনভর দেখাশোনা করে।

Advertisement

সুমন জানায়, এ ট্রলি ব্যাগটি সে টিএসসির সামনে টবে (ডাস্টবিন) পরিত্যক্ত অবস্থায় কুড়িয়ে পেয়েছে। ব্যাগের চেইন নষ্ট থাকলেও চাকাগুলো ভালো আছে। তাই ব্যাগটিকে বিছানা বানিয়ে আরিফকে ঘুম পাড়ায়, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আনা-নেয়া করে।

সে জানায়, ওরা মা-খালারা কামরাঙ্গীরচরে থাকেন। সকাল বেলা ওরা দলবেঁধে নিউমার্কেটে আসে। আশেপাশের ডাস্টবিন থেকে কাগজ ও লোহা-লক্কড় কুড়ায়। শুধু সে কুড়াতে যায় না। সুমনের দায়িত্ব আরিফকে দেখে রাখা। ট্রলি পাওয়ার আগে সারাদিন কোলে রাখতে কষ্ট হতো। এখন ট্রলিতে শুইয়ে রাখে বলে আগের মতো কষ্ট হয় না। সন্ধ্যা না নামতেই ঘুমিয়ে পড়ে আরিফ। এ ট্রলিতে শোয়ার পর থেকে তার ঘুমও বেশ ভালো হয় বলে জানায়। কিছুক্ষণ পর আরিফের মা এলে ছুটি পায় সুমন।

এমইউ/বিএ

Advertisement