বিনোদন

পরিচালক-প্রযোজকের দ্বন্দ্বে কুয়াকাটায় জিম্মি শুটিং ইউনিট

হোটেলের বিল পরিশোধ না করায় শুটিং ইউনিটকে দুদিন ধরে আটকে রেখেছে হোটেল কুয়াকাটা ইন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি হোটেল। বিল পরিশোধ না করায় ক্যামেরা, লাইট ও শুটিংয়ের মালামালসহ তাদের আটকে রাখা হয়েছে বলে জানান বিশ্বজিৎ দত্ত। তিনি এ নাটকের ক্যামেরাম্যান। তার ভাষ্য, দুটি নাটকের জন্য ওই হোটেলে থাকা খাওয়া বাবদ বিল হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার।

Advertisement

অথচ নাটকের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কিংবা পরিচালকসহ দায়িত্বশীল কেউই কোনো ধরনের সমাধানে এগিয়ে আসছেন না বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ তুলেছেন। তবে সেই নাটকের অভিনয় শিল্পীরা শুটিং শেষে আগেই ঢাকা ফিরেছেন।

জানা গেছে , ‘ডিজিটাল মিসকিন’ ও ‘গাইড’ নামের দুটি নাটকের পরিচালনা করছেন অনন্ত হীরা। শুটিং স্পট ঠিক করা হয় কুয়াকাটায়। শুটিং শুরু হয় গেল বৃহস্পতিবার থেকে। কিন্তু পরিচালক নিজে শুটিং স্পটে যাননি। তিনি সহকারী পরিচালক দিয়ে নাটকের কাজ চালানোর চেষ্টা করেছেন।

এ ব্যাপারে ক্যামেরাম্যান বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, ‘আমি অনেক সেটে কাজ করেছি কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কখনও পারিনি। অনন্ত হীরা ভাইয়ের সহকারী পরিচালক সুমন মল্লিক আমাকে এই দুটি নাটকে কাজ করার প্রস্তাব দেন। এরপর হীরা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে নাটক দুটির স্ক্রিপ্ট বুঝে নিই। কিন্তু পরে তিনি আর কুয়াকাটায় শুটিংয়ে আসেননি। তার মনোনীত একজনকে পাঠান শুটিং পরিচালনার জন্য। কিন্তু কাজ করার পর ভোগান্তিতে পড়লাম। আমাদের পারিশ্রমিক তো পাইনি উল্টো এখানকার থাকা খাওয়ার যে খরচ তার বিলও পরিশোধ না করায় আমাদের আটকে রাখা হয়েছে। খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার। হোটেল মালিক যাচ্ছে তাই ব্যবহার করছেন।’

Advertisement

অনন্ত হীরার সহকারী সুমন মল্লিক জানিয়েছেন, অসুস্থতার কারণে এ নাটক দুটি পরিচালনা করতে পারেননি অনন্ত হীরা। তাই আমাকেই পরিচালনা করতে হলো। আর পরিচালক নিজে না যাওয়ার কারণেই ডুয়েট ডট কমিউনিকেশনের ব্যানারে নির্মিত নাটক দুটির নির্বাহী প্রযোজক মায়দুল ইসলাম পাভেল এতে ক্ষিপ্ত হন এবং নির্মাণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম মাসুদ। তিনি বলেন, যেহেতু পরিচালক নিজে যাননি তাই প্রযোজক তাকে নাটকের খরচ দিতে রাজি নন। এ প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘নাটকটির নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে ছিলেন মায়দুল ইসলাম পাভেল। শুটিং শুরুর আগে তিনি কিছু টাকা দিয়েছেন। বাকীটা পরে দেয়ার কথা। কিন্তু শুটিং সেটে মায়দুল সাহেব এসে দেখেন পরিচালক হীরা ভাই নেই। এরপর তিনি চলে যান। আমি তাকে বিষয়টি বোঝাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি মানতে নারাজ। হীরা ভাই পরিচালনা না করলে এ দুটি নাটকে তিনি টাকা ইনভেস্ট করবেন না। এজন্য আমরা কুয়াকাটায় এসে ফেঁসে গেছি।’

এ প্রসঙ্গে অন্তত হীরার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পরিচালকদের সমিতি ডিরেক্টর গিল্ড’স-র সাধারন সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি শুনেছি। খুবই বিব্রতকর ব্যাপার। পরিচালক ও প্রযোজকের কারণে টেকনিশিয়ানরা আটকে আছে এটা আমাদের কাজের জন্য সম্মান হানিকর।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই প্রযোজকের নাম কখনো শুনিনি। তাই খোঁজ নিচ্ছি তার সম্পর্কে। সামনে বসে আলাপ না হলে এর সমাধান হবে না। আমি হীরা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, আটকে থাকাদের ছাড়িয়ে আনতে এক লাখ টাকা তিনি পাঠিয়েছেন। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ ১ টাকা বাকি রেখেও তাদের ছাড়বে না। আর সেখানে বকেয়া হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার। বাকি দায়িত্বটুকু প্রযোজককে নিতেই হবে।’

এইদিকে অভিযোগ উঠেছে হোটেল কুয়াকাটা ইন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের বিরুদ্ধেও। নাটক দুটির প্রযোজনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘হোটেল কর্তৃপক্ষ বিল করেছেন ৩ লাখ টাকা। কিন্তু হোটেল বুক করার আগে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছিল মোট বিল হবে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মোট বিল থেকে আমাদের সম্মানে কিছু টাকা কম নেবেন তারা। কিন্তু তারা এখন সেটা তো করছেই না বরং আমাদের কাছে আরো বেশি টাকা চাচ্ছেন এবং আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে। এখনো বিষয়টি সমাধান হয়নি। দেখা যাক কী হয়।’

Advertisement

এই দুটি নাটকটিতে অভিনয় করেছেন আনিসুর রহমান মিলন, নাজিরা মৌ, অরিন, আশিক চৌধুরী, অঞ্জলি সাথি প্রমুখ।

এদিকে এমন অগোছালো আয়োজনে নাটক নির্মাণ করতে যাওয়ায় অনন্ত হীরার সমালোচনায় মেতেছেন শোবিজের মানুষেরা। অন্যদিকে ওই দুই নাটকের প্রযোজকের দায়হীন আচরণের জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে নাটকের প্রযোজকদের সংগঠনকে অনুরোধ করেছেন অনেকেই।

এনই/এলএ/পিআর