ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ওয়াকফ এস্টেটের জমিগুলো একের পর এক বেদখল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ২০ বছর যাবত মোতাওয়াল্লি না থাকায় বেশিরভাগ জমি দখল করে নিচ্ছে দখলকারীরা।
Advertisement
ইতোমধ্যে ওয়াকফকৃত ২০০ বছরের পুরনো মসজিদ, গোরস্থান ও পুকুর সিএস খতিয়ানে ভুয়া দলিল করে নিজের নামে করে নিয়েছেন প্রয়াত খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা। যা ভোগ দখল করে আসছেন প্রয়াত খাদেমুল ইসলামের বংশধর শামসুল আরেফিন চৌধুরী ও ডা. মিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সোনাসহ ভোগদখলকারীরা। এতে করে অন্যান্য ভোগদখলকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এর বাইরে এক শ্রেণির ভূমিদস্যু ওয়াকফ সম্পত্তিগুলো জোর করে দখল করছে। উচ্চ প্রভাবশালীরা ওয়াকফ সম্পত্তি বে-আইনিভাবে কম দামে কিনেও নিচ্ছে। এই সকল ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে ভোগদখলকারীদের মধ্যে আদালতে মামলাও চলছে। ফলে সরকারকে ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বড় অংকের রাজস্ব।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জামালপুর ইউনিয়নের জমিদার নুনূ মোহাম্মদ চৌধুরীসহ ৩ ভাই ২ হাজার ৫৬৫ একর জমির মালিক ছিলেন। ১৮৯০ সালে নুনূ মোহাম্মদ চৌধুরী, আজমত আলী চৌধুরী ও শাহাদাতুল্যা চৌধুরী এই তিন ভাইয়ের সর্বসম্মতিক্রমে নালিশি সম্পত্তিসহ আরও অন্যান্য সম্পত্তিকে ভোগ দখল অবস্থায় মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান, জমিদারবাড়ি, পুকুর, মেহমান মুসাফেরখানা সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
Advertisement
তাদের ছেলে, সন্তান, পরিবার ও ভবিষ্যৎ ওয়ারিশদের মঙ্গলার্থে ঠাকুরগাঁও সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ৮১৭ নং ওয়াকফ আওতাকৃত দলিলের মাধ্যমে অত্র নালিশি সম্পত্তিসহ যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ওয়াকফ আওলাদ করে দেন তারা।
তখন উক্ত ওয়াকফ স্টেটের প্রতিষ্ঠাতা মোতাওয়াল্লি হাজী বদির উদ্দিন আহম্মদ চৌধূরীকে নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে সিএস রেকর্ড হলে নুনূ মোহাম্মদ চৌধুরী ওয়াকফ স্টেটের অত্র নালিশি সম্পত্তিসহ যাবতীয় সম্পত্তি মোতাওয়াল্লি বদিরউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীকে শুদ্ধভাবে সিএস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করে দেন। যাহার সিএস খতিয়ান নং-২৬৮।
উক্ত ওয়াকফ স্টেটের দলিলে সর্বমোট ২৫টি মৌজা রয়েছে যা জামালপুর ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত। মোতওয়াল্লি বদিরউদ্দিন চৌধুরীসহ অন্যান্য জমিদারগর মৃত্যুর পর এই সকল মৌজার জমি ভোগ দখল করছে জমিদার পরিবারের লোকজন।
সর্বশেষ ওই ওয়াকফ সম্পত্তির মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব নেন মোস্তাফিজার রহমান। গত ২০ বছর আগে তিনি ওয়াকফ সম্পত্তির মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব থেকে সরে যান। এরপর থেকে ভোগদখলকারীদের মধ্যে কয়েকজন প্রভাব বিস্তার করে বে-আইনিভাবে মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান, জমিদারবাড়ি, পুকুর, মেহমান মুসাফেরখানা প্রয়াত খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর নামে রেকর্ডভুক্ত করে নেন।
Advertisement
এছাড়া প্রভাবশালী ভোগদখলকারীরা কয়েকজন একত্রিত হয়ে জামালপুর মৌজার বিভিন্ন এলাকায় ওয়াকফ সম্পত্তি নিজের নামে ভুয়া সিএস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওয়াকফ সম্পত্তি ভুয়া খতিয়ানে মালিকানা দাবিকারী শামসুল আরেফিন চৌধুরী জানান, ওয়াকফ আইন অনুযায়ী জালামপুর ওয়াকফ স্টেট পরিচালিত হয়ে আসছে।
মসজিদ ও কবরস্থান ভুয়া খতিয়ানের অভিযোগের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিলামের মাধ্যমে মসজিদ, কবরস্থান ও আবাদের জমি নেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে এই বিষয়ে আদালতে মামলা হলেও রায় আমরাই পেয়েছি। তাছাড়া মসজিদ ও কবরস্থান সকলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
সাবেক মোতাওয়াল্লি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমি ৩ বছরের জন্য মোতায়াল্লি দায়িত্বে ছিলাম। পরবর্তীতে অনেকদিন যাবত জামালপুর ওয়াকফ স্টেটে মোতাওয়াল্লি ছিল না। শরিকগণ বিভিন্নভাবে ওয়াকফ স্টেটের জমি ভোগ দখল করে আসছেন বলে তিনি উল্লেখ্য করেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা ওয়াকফ নিরীক্ষক পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, জামালপুর ওয়াকফ্ স্টেটের জমিগুলো নানা রকম অনিয়নের মধ্যে শরিকগণ ভোগ দল করে আসছে। সেখানে দীর্ঘদিন যাবত কোনো মোতায়াল্লী নেই। জেলা ওয়াকফ্ প্রশাসন অফিস থেকে তাদের একাধিক বার নোটিশ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ওয়াকফ স্টেটের মসজিদ, কবরস্থান কোনো ব্যক্তি নিজ নামে খতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত করার কোনো বিধান নেই। কেউ যদি ভুয়া খতিয়ানে অন্তুভুক্ত করে তাহলে ওয়াকফ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, ওয়াকফ প্রশাসন এই সকল বিষয় দেখাশুনা করে। ওয়াকফ আইনের বাইরে কোনো ব্যক্তি যদি অনিয়ম করে তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রবিউল এহসান রিপন/আরএআর/জেআইএম