খেলাধুলা

দেশের বাইরে খেলার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন

একজন ফাস্ট বোলার কত জোরে বল করেন, কার বলের গতি কত বেশি? তা মাপার যন্ত্র আছে। ব্রেট লি আর শোয়েব আখতার কে কত জোরে বল করতে পারতেন, তা সবার জানা। সেটা স্পিড মিটার দিয়েই মাপা গেছে। এখনো যায়। এ মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতির বোলার কে, স্পিড মিটারই তা বলে দেবে।

Advertisement

কিন্তু কার বলের সুইং কত? কোন স্পিনার কতটা বল ঘোরাতে পারেন? কার বোলিং মেধা-সামর্থ্য কেমন? তা মাপার আসলে কোন যন্ত্র নেই। সেটা বলের কারুকাজ দেখে খানিক আন্দাজ-অনুমান করা গেলেও শেষ পর্যন্ত একজন বোলারের মেধা যাচাইয়ের সত্যিকার ও প্রকৃত মানদন্ড যাচাইয়ের কোনই যন্ত্র নেই। তিনি ফাস্ট বোলার কিংবা স্পিনার যাই হোন না কেন- একজন বোলার কতটা ভাল, তার বোলিং কতটা ধারালো ও বিধ্বংসী? তা নিরুপনের জন্য শেষ অবধি পরিসংখ্যানই সবচেয়ে বড় মাপকাঠি।

কে কত উইকেট পেয়েছেন? কার ম্যাচ পিছু উইকেট কত, কে কতবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন, ১০ উইকেট কার কতবার? কার গড় কত? কে ওভার পিছু কম রান দিয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন কিংবা কার স্ট্রাইক রেট কত- এসব দিয়ে একজন বোলারের মেধা ও সামর্থ্য যাচাই করা হয়।

ঠিক একইভাবে একজন ব্যাটসম্যান কত প্রতিভাবান? তার ব্যাটিং মেধা কত বড়? তিনি কত উঁচু মাপের উইলোবাজ, তার সত্যিকার সামর্থ্য কতটা- এসব যাচাইয়েরও সত্যিকার অর্থে কোন যন্ত্র নেই। আর বোলিং গতি যাচাইয়ের মত কারো ব্যাটিং প্রতিভা ও সামর্থ্য আসলে কোন যন্ত্র দিয়েও মাপা সম্ভব নয়। এখানেও ঘুরেফিরে সেই পরিসংখ্যানই মূল মানদণ্ড।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত একজন ব্যাটসম্যানকে মাপা হয়, হচ্ছে ওই পরিসংখ্যান দিয়েই। সন্দেহ নেই শচীন টেন্ডুলকার আর ব্রায়ান চার্লস লারাই গত দুই তিন দশকের সেরা উইলোবাজ। তাদের পরিসংখ্যানও তাই বলে।

সেরকম পরিসংখ্যানই পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহদের চেয়ে হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, ডু প্লেসিস আর এবি ডি ভিলিয়ার্সরা অনেক বড় মাপের ব্যাটসম্যান। তাদের সাথে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পরিসংখ্যানের তুলনায় বেশ পিছিয়ে। একইভাবে কাগিসো রাবাদা আর ইমরান তাহিরের তুলনায় বাংলাদেশের যে কোন বোলারের পরিসংখ্যান খুবই দূর্বল। তারপরও এ সিরিজে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স অনেক বেশি অনুজ্জ্বল মনে হয়েছে।

সেই ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ, ডিসেম্বর ২০১৬ আর চলতি বছর জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফর এবং গত জুনে ইংল্যান্ডের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি- কোথাও ব্যক্তিগত পারফরমেন্স এতটা খারাপ হয়নি। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাই দুই সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছিলেন। তামিম, মুশফিক আর সাকিব- সবার ব্যাট থেকেই হাফ সেঞ্চুরি বেরিয়ে এসেছিল।

এরপর নিউজিল্যান্ড সফরেও সাকিব-মুশফিক বুক চিতিয়ে লড়েছেন। রানও করেছেন। এবারো আয়ারল্যান্ডের মাটিতে তিন জাতি আসরে সৌম্য, তামিম, মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ নিয়মিত রান করেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহীমের অসাধারণ উইলোবাজিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও ৩০৫ রানের বড় স্কোর গড়ার রেকর্ড আছে টাইগারদের।

Advertisement

আর এই দলটিই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে বীর বিক্রমে নিউজিল্যান্ডের ২৬৫ রানের লড়াকু স্কোর টপকে গেছে। সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জোড়া সেঞ্চুরিতেই মিলেছির নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে পেলো ঐতিহাসিক জয়ের দেখা। ৩৩ রানে চার উইকেট পতনের পর পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ২২৪ রানের জুটি উপহার দিয়েছিল দেশের ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম স্মরনীয় জয় (৫ উইকেটে)।

সেই ক্রিকেটাররাই এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে নাকাল। দেখে মনে হলো যেন ব্যাটিং-বোলিং দুটোই ভুলে গেছেন। এমন হতো যে, নির্ভরযোগ্য পারফরমারদের তিন-চারজন নেই। তাও নয়। টেস্টে সাকিব ছিলেন না। আর তামিম ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ খেলেননি। তাতে নিশ্চয়ই পারফরমেন্স এত খারাপ হবার কথা নয়। কাজেই শুধু অপরিকল্পতা, কম প্রস্তুতি আর কন্ডিশনের কারণেই ব্যক্তিগত পারফরমেন্স খারাপ হয়েছে, তা মানা কঠিন। কারণ এই ক্রিকেটাররাই তো গত দু’তিন বছর দেশে ও বাইরে নজরকাড়া সাফল্য উপহার দিয়েছেন। 

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি