বিনোদন

সঞ্জু থেকে অনন্ত জলিল

এমএ জলিল অনন্ত। এই নামটি বললে তাকে চিনতে কারও অসুবিধা হয় না। ব্যবসায়ী পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন। নানাভাবে গত কয়েক বছর ধরে বিনোদন অঙ্গনের আলোচিত ব্যক্তি তিনি। নতুন কাজ, পরিকল্পনা ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানা-অজানা অনেক কথা বললেন তিনি। এফডিসির চার নম্বর ফ্লোরে নতুন বিজ্ঞাপনের কাজের ফাঁকে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে।নতুন বিজ্ঞাপন নিয়ে জানতে চাই।অনন্ত : এটা বাংলাদেশি পোশাক বিক্রয় ও টেইলারিং শপ ‘আপ অ্যান্ড টপ’-এর বিজ্ঞাপনচিত্র। তারা রেমন্ডের বাংলাদেশি পরিবেশক। বিজ্ঞাপনের কাহিনীটি বেশ ভালো লেগেছে। পণ্যের সঙ্গে থিমটির কাহিনী দর্শকদের ভালো লাগবে আশা করি। এখানে একদিকে ব্যবসায়ী অনন্ত ও অন্যদিকে তারকা অনন্তকে দেখবেন দর্শকরা। এটি নির্মাণ করেছেন তানভীর শেহজাদ। এর বাইরে মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান গ্রামীনফোনের আরেকটি নতুন বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছি। এর গলে।প আমার কথায় দিন হবে রাত, রাত হবে দিন। এটি নির্মাণ করেছেন শহীদ ইবনে হোসাইন।অনন্ত জলিল নামটি কার দেওয়া?অনন্ত : আমি এটা কোথাও বলিনি। আমার নাম ছিল আসলে সঞ্জু। ছোটবেলায় অনেক দুষ্ট ছিলাম। অনেক মারামারি করতাম। তাই বাবার কাছে সন্ধ্যার পর প্রায়ই আমার নামে নালিশ আসত। আমাদের বাড়ি তখন ছিল শুক্রাবাদে। আমাদের বাসায় একজন গৃহশিক্ষক ছিলেন, তার নাম ছিল এমএ জলিল। অনেক ভদ্র ছিলেন তিনি। বাবা তখন আবার আকিকা করে নাম পরিবর্তন করে এমএ জলিল নাম রাখেন আমার। তবে এ নাম নিয়ে আমি মোটেও সন্তুষ্ট ছিলাম না। কয়েকদিন কান্নাকাটি করে কেটেছে। পরে আমার বড় ভাই (সিকান্দার) আমাকে বোঝালেন, ‘দেখ তোর নাম তো ভালোই রাখা হয়েছে। অনন্ত অর্থ সীমাহীন আর জলিল অর্থ দয়ালু। আর দেখবি তুই বড় হলে এমন মানুষই হয়েছিস। তোর নাম অনন্তকাল মানুষের মনে বেঁচে থাকবে।’ একথা শোনার পর ভালো লাগলো। এরপর থেকে আমার নাম এমএ জলিল অনন্ত। আমার বড় ভাই বেঁচে নেই। ২০০৮ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।ছোটবেলায় কি হতে চেয়েছিলেন?অনন্ত : ছোটবেলা থেকেই বড় ব্যবসায়ী হতে চাইতাম। আমার সে ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে।ছবিতে অভিনয় করার ইচ্ছে কীভাবে হলো?অনন্ত : এটা লম্বা গল্প। ২০০৮ সালের ঘটনা। তখন আমি পুরোপুরি একজন ব্যবসায়ী। ছবিতে অভিনয় করার ইচ্ছে আমার ছিল না। আমার যে বিদেশি পোশাক ক্রেতা রোলস রয়েলস কোম্পানি ভারতীয় ছবি আমদানির সঙ্গেও যুক্ত। তারাই আমাকে বাংলা ছবি নির্মাণ ও আমদানিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। কারণ ইংল্যান্ডে অনেক বাঙালি দর্শক আছে। তারপর তাদেরকে বাংলাদেশি কিছু ছবির ডিভিডি দেই। কিন্তু তারা শব্দ, রঙ, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস-সহ প্রযুক্তিগতভাবে আরও উন্নত ছবি প্রত্যাশা করছিল। ২০০৮ সালের এপ্রিলে বর্ষার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর বর্ষাও ছবিতে অভিনয় করতে চাইলো। তবে কাদের নিয়ে কাজ শুরু করব ভেবে সাহস পাচ্ছিলাম না। তখন কিছু বাংলা ছবি দেখা শুরু করলাম। দেখার পর মনে হলো, এই গল্পগুলো কোথাও কোথাও আমি দেখেছি। গল্প এক। তারপরও নতুন কিছু করার চেষ্টা নিয়ে বর্ষাকে নিয়ে ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করলাম। পাশাপাশি হয়ে গেলাম অভিনেতা। গল্প, অ্যাকশনে অনেক বেশি মনোযোগী হলাম।কোথাও লেখা- হচ্ছে, কোথাও লেখা- হচ্ছে না; কোনটা ঠিক?অনন্ত : সবাইকে জানিয়ে সংবাদটা দিতে চেয়েছিলাম। ওই সময় জাপানে ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’র প্রচারণার কাজে ছিলাম। তখন আমার মিডিয়া ম্যানেজার সজিবকে বললাম, একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দাও-এখনই আমরা এ বিষয়ে অফিসিয়ালি কিছু জানাতে চাই না। বর্ষা মা হচ্ছেন কি-না সময় হলে আমি নিজেই জানাবো। দুঃখজনক হলো আমাদের সঙ্গে কথা না বলে অনেকে খবরটি প্রকাশ করেছেন।পাঠকরা জানতে চায়, বর্ষা কবে মা হচ্ছেন?অনন্ত : এখন আর লুকোচুরি করতে চাই না। ছয় মাসের বেশি হয়ে গেলো বর্ষা সন্তানসম্ভবা। চিকিৎসক জানিয়েছেন, আমাদের পুত্রসন্তান হবে। তাই ওর নাম ঠিক করেছি আরিজ। হাদীস শরীফ থেকে নামটা পেয়েছে বর্ষা।নতুন কাজের খবর কী?অনন্ত : নতুন ছবি ‘স্পাই’-এর কাজ শুরু করব। বর্ষা ও আমার পাশাপাশি এতে নতুন দুটি মুখ থাকবে। তারা নায়ক-নায়িকা না হলেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাজ করবে। আমার এবারের ছবির বাজেটও বড়। মুম্বাইয়ে যেমন নতুন নতুন মুখকে সুযোগ দেওয়া হয় তেমনি আনকোড়া শিল্পী খুঁজে বের করব। আর প্রযোজনা করলেও আমি আর বর্ষা আমাদের সব ছবিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করব। কারণ দর্শক অনন্ত ও বর্ষাকে দেখতে চাইবে। তাই সব ছবিতেই আমাদের পর্দা উপস্থিতি থাকবে। তাহলে আপনি প্রযোজক হিসেবে অন্য নায়ককে দিয়ে ছবি তৈরির পরিকল্পনা করছেন?অনন্ত : হ্যাঁ, কাজ শুরু করেছি। আমার এ উদ্যোগ জানাজানির পর থেকে অনেকে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিচ্ছে। আমরা ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চাই। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবো।আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?অনন্ত : আমার নতুন তিনটি ছবির জন্য সারা বাংলাদেশ থেকে বাছাই করে নতুন মুখ বেছে নেবো। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তিনটি ছবির জন্য শুধু নতুন মুখই নয়, যারা ভালো ছবি নির্মাণের চিন্তা করছেন তাদেরকে সুযোগ দেবো। আমার ভবিষৎ টার্গেট শুধু হিরো-হিরোইন নয়, খলনায়ক, বাবা-মা, ভাবী সব ধরনের চরিত্রের জন্য বাছাই করে নতুন মুখ খুঁজে বের করা। যারা আগামীতে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পে দীর্ঘদিন কাজ করতে পারে। বাংলাদেশের ছবিকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই।

Advertisement