আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গারা মানবিকতা, মানবাধিকারের দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি : জাতিসংঘ

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের ডাকা সম্মেলনে ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আয়োজিত জাতিসংঘের তহবিল গঠন সম্মেলনে এ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে ২৮ জাতিগোষ্ঠীর এই সংস্থা।

Advertisement

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে এ সম্মেলন আয়োজন করেছে জাতিসংঘ।

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে দেশটির সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে বাংলাদেশে প্রায় ৬ লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়েছে। গত অাগস্টের শেষে দিকে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অর্ধেকই শিশু।

সাম্প্রতিক পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যাদের আশ্রয় হয়েছে মিয়ানমার সীমান্তের কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে।

Advertisement

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান জেনেভায় ওই সম্মেলনে বলেছেন, তার দেশ বর্তমানে অস্থির পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু মিয়ানমার বার বার বলছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী।

রোহিঙ্গারা নিজেদেরকে রাখাইনের পশ্চিমাঞ্চলের আদিবাসী গোষ্ঠী হিসাবে দাবি করে; যারা হাজার বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কুয়েতের উদ্যোগে জাতিসংঘ জেনেভায় একদিনের এই সম্মেলন আহ্বান করেছে। সম্মেলন শুরুর আগেই বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ১০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) উপ-প্রধান এলিজাবেথ রাসমুসন বলেন, আজ আমরা এখানে একটি কারণে সমবেত হয়েছি; দুর্ভাগ্যজনক হলো আমরা যে সহায়তা প্রদান করছি সেখানকার চাহিদা তার চেয়েও অনেক বেশি।

Advertisement

‘মানুষের পক্ষ থেকে আমরা সহায়তার চেষ্টা করছি। আমরা অবশ্যই আরো সহায়তার অনুরোধ জানাবো।’

বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে সেটাকে ‘মানবিকতা এবং মানবাধিকারের দুঃস্বপ্ন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়ক মার্ক লোকক।

রাখাইনে মানবিক ত্রাণ তৎপরতা পুরোদমে চালানোর অনুমতি দিতে মিয়ানমারের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রাখাইনে আন্তর্জাতিক দাতা ও ত্রাণ সংস্থাগুলোকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি মিয়ানমার।

২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংঘবদ্ধ হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ভয়াবহ অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, আগস্টের শেষের দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনী এবং উগ্র রাখাইন বৌদ্ধরা হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের মতো অপরাধ করছে। রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের চেষ্টায় এসব অপরাধ করা হচ্ছে।

সূত্র : রয়টার্স, এপি।

এসআইএস/এমএস