জাতীয়

অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন

রাতের স্তব্ধ প্রকৃতি। মাঝে মধ্যে দু-একটি ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক কানে আসে। পাশেই ভবন নির্মাণ শ্রমিকের হাঁকডাক। গভীর নিদ্রায় ডেমরার কোনাপাড়াবাসী। হঠাৎ নিদ্রা ভঙ্গ হয় এক শিশুর চিৎকারে। রাত তখন ৩টা।

Advertisement

৩০ সেকেন্ড না যেতেই হুলস্থুল কান্না আর চিৎকার। একই ছাদের নিজের অন্য ভাড়াটিয়াদের বিপদ বুঝে বিছানায় থাকতে পারেননি আরিফ। ঘর থেকে বের হতে গিয়ে জানালা ভেঙে উড়ে বাইরে পড়েন আরিফ। এরপর জ্ঞান হারান তিনি। জ্ঞান যখন ফেরে তখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায়।

সোমবার রাত ৩টার দিকে রাজধানীর ডেমরা কোনাপাড়ার আল-আমিন রোডের একটি ভাড়া বাসায় একই পরিবারের সাতজন দগ্ধ হন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ হন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত আরিফ।

অগ্নিদগ্ধরা বলছেন, বাসায় গ্যাসের চুলার লাইনে লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণ। আর সেই বিস্ফোরণে সবার জীবন আজ বিপন্ন।

Advertisement

বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ। সেখানে তিনটি রুমে ভাড়া থাকতেন আলমগীর হোসেনের সাত সদস্যের পরিবার। ওই বাসায়ই ৪ নম্বর ছোট একটি কক্ষে সাবলেট থাকতেন আরিফ।

রাতের অগ্নিকাণ্ডের পর স্থানীয়রা সোমবার ভোর ৫টার দিকে দগ্ধ আটজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসেন।

দগ্ধরা হলেন- মো. আলমগীর (৪৫), তার স্ত্রী ফেরদৌসী (৩৫), ছেলে ঈমন (১৫), শিপন (১২), তাহসিন (২) এবং তার ভাতিজা তোফায়েল (২৪) ও তার স্ত্রী রত্না (১৭)। ও সাবলেট ভাড়াটিয়া আরিফ (৩৪)।

সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের ভিড়, ভেতরে দগ্ধদের চিকিৎসায় ব্যস্ত চিকিৎসকরা।

Advertisement

এরই ফাঁকে কথা হয় অগ্নিদগ্ধ তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। তিনি ব্যাগ তৈরির কারখানায় চাকরি করেন।

তোফায়েল বলেন, রাত ১০টার দিকে সবাই খাবার সেরে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে শিশু তাহসিনের কান্নায় ঘুম ভাঙে। চারদিকে সব জ্বলছে। বারান্দার দরজা খুলতেই উড়ে যাই। দেখলাম সবকিছু পুড়ছে, জানালা, দরজা সব উড়ে যাচ্ছে। সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। সবকিছু হঠাৎই হারিয়ে গেল।

পাশের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন আরিফ। তিনি বলেন, অল্প বেতনে চাকরি করি। তাই ওদের সঙ্গে সাবলেট হিসেবে বাসা নিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে জীবনটা থেমে যাবে বুঝতে পারিনি।

তিনি বলেন, কান্না আর চিৎকারে মনে হলো পাশেই কারও বিপদ। দৌড়ে দরজা খুলি। দেখি সবই জ্বলছে। দু’ পা না যেতেই জানালা ভেঙে উড়ে পড়ি বাইরে। এরপর এখন হাসপাতালে।

দগ্ধ আলমগীরের বড় ভাই জয়নাল মিয়া জানান, ভাই আলমগীর ভ্যান চালিয়ে পরিবার চালাত। গত মাসে ওরা এ বাসায় উঠেছে। কিন্তু এভাবে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে চিন্তাও করতে পারছি না।

ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, দগ্ধ আটজনের মধ্যে সবারই অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে চারজন বেশি দগ্ধ হয়েছেন। সবারই শ্বাসনালী কম বেশি পুড়ে গেছে। চারজনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ভর্তি করা হয়েছে। সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

জেইউ/একে/আরআইপি