বিনোদন

প্রচারণা যার সিনেমার মুল্লুক তার

প্রচারই প্রসার। বাজারজাতকরণের বেলায় এ কথাটির বিকল্প কিছু নেই। যে পণ্যের প্রচার যত বেশি সেই পণ্যটির তত বেশি কাটতি থাকে বাজারে। বিশ্বের সব বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক বা কর্তাব্যক্তিরা প্রচারকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন পণ্যের প্রসারে। আজকের বিশ্বে চলচ্চিত্র নির্মাণ গণমাধ্যমের ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে পরিণত হয়েছে লাভজনক একটি ব্যবসায়। ব্যক্তিগতভাবে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি বলিউড গেল কয়েক বছর ধরেই চলচ্চিত্র ব্যবসা দিয়ে রাষ্ট্রকে বিরাট অঙ্কের রাজস্ব উপহার দিচ্ছে। উপার্জন করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও।

Advertisement

স্বভাবতই লক্ষণীয়, বলিউডের বাজারে সিনেমার প্রচার আলাদা করে একটি শিল্প হয়ে উঠেছে। পরিচালকরা ছবি নির্মাণের বাজেটে গুরুত্ব দিয়েই তালিকাভুক্ত করছেন প্রচারের বাজেট। নিশ্চিন্তে থাকার জন্য তারা বেছে নিচ্ছেন শাহরুখ-গৌরির রেডি চিলিস, করণ জোহরের ধর্ম প্রডাকশন, চোপড়া পরিবারের যশরাজ ফিল্মসের মতো প্রযোজনা ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কারণ একটাই, এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলচ্চিত্রের প্রচারকে গুরুত্ব দেয় দারুণভাবে। একটি সিনেমাকে বিশ্বজুড়ে প্রচার করতে অভিনব সব আইডিয়া তারা সামনে নিয়ে আসে এবং দর্শককে হলে টেনে আনতে সফল হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এদের দেখে আরও অনেক তারকা ও ব্যবসায়ীরা ছবির পরিবেশনার ব্যবসায় নাম লেখাচ্ছেন।

সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প ও ব্যবসায়। দিন দিন ম্লান হয়ে এসেছে ঢাকাই ছবির জৌলুস। এর কারণ হিসেবে অনেকেই অনেক কিছুকে দায়ী করেন। তবে প্রচারের দৈন্যতাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। এটা গেল কয়েক বছরে প্রমাণ হয়ে গেছে দারুণভাবে, প্রচারই ঢাকাই ছবিকে পিছিয়ে রাখার পেছনে দায়ী। উদাহরণ হিসেবে মনের মাঝে তুমি, হৃদয়ের কথা, মোল্লা বাড়ির বউ, মনপুরা, পোড়ামন, ছুঁয়ে দিলে মন, আয়নাবাজি, নবাব, শিকারী, রাজনীতি, সুলতানা বিবিয়ানা, ঢাকা অ্যাটাকের নাম নেয়া যায়। এ ছবিগুলো গেল ১০-১৫ বছরের সেরা ব্যবসাসফল।

নানা সঙ্কট আর সমস্যার মধ্যেও ছবিগুলো সব শ্রেণির দর্শককে হলে টেনেছিল প্রচারের চাকচিক্যেই। এগুলোর সব যে গল্প-নির্মাণে আহামারি টাইপের সিনেমা তা বলা যাবে না। কিছু কিছু ছবি ছিল যেগুলো কেবল প্রচারের কারণেই বাজিমাত করে দিয়েছে। সে তালিকায় নাম আসবে ‘আয়নাবাজি’, ‘নবাব’, ‘রাজনীতি’, ঢাকা অ্যাটাক’র। আবার ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ‘জালালের গল্প’, ‘অজ্ঞাতনামা’র মতো ছবিগুলো খুব ভালো হলেও প্রচারের অভাবে হল পায়নি, ব্যবসাও পায়নি। তবে ‘ভয়ংকর সুন্দর’, ‘অঙ্গার’, ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’, ‘ধ্যাততেরিকী’র মতো ছবিগুলো ভালো প্রচারণা পেলেও ছবির গল্প, নির্মাণ ও পাত্রপাত্রীর জন্য দর্শক পায়নি।

Advertisement

সাম্প্রতিককালের খতিয়ানে চোখ রাখলে দেখা যাবে অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ ছবিটি প্রচারের কারণেই টানা এক মাসেরও বেশি সময় দর্শক হলে টেনেছে। এরপর ‘শিকারী’, ‘নবাব’ ছবি দুটিও প্রচারের কারণে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। আর গেল রোজার ঈদে বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’ ছবির ব্যবসা নিয়ে যখন সবাই শঙ্কায় ছিলেন তখন দেখা গেল বহুদিন পর আড়াল ভেঙে অপু বিশ্বাসের প্রকাশ্যে এসে ছবিটির জন্য প্রচারণা চালানোর পর দর্শক দারুণভাবে সাড়া দিয়েছেন।

একইভাবে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিটিও বাজিমাত করেছে প্রচারের আধিপত্যেই। আবার ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’, ‘রংবাজ’, ‘অহংকার’, ‘সত্তা’ ছবিগুলো হাই প্রোফাইল তারকাসম্পন্ন ছবি হওয়ার পরও ব্যবসার মুখ দেখেনি।

আমাদের সফল নির্মাতা আছেন, ভালো গল্পকার আছেন, দর্শকপ্রিয় শিল্পীরাও আছেন, দক্ষ টেকনিশিয়ান ও যন্ত্রপাতি আছে। বছরে বেশ কিছু ভালো ছবি নির্মিতও হচ্ছে। কিন্তু নেই সঠিক প্রচারণা। এজন্য প্রয়োজন ব্যক্তি উদ্যোগ। সেই উদ্যোগ তৈরিতে উৎসাহী করতে ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে সরকার ও এফডিসিকে ভূমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি পরিচালকদেরও উচিত হবে সিনেমার বাজেটেই প্রচারের জন্য মোটা অঙ্কের উল্লেখ রাখা।

প্রশ্ন আসতে পারে প্রচার হচ্ছে না এ দাবি কেন? গণমাধ্যমগুলোতে তো সিনেমা নিয়ে খবর ও ফিচার ছাপা হচ্ছেই। তার উত্তরে বলা যাবে, সিনেমার প্রচার এখন কেবল ছবির খবর আর শিল্পীদের সাক্ষাৎকার-ফিচারে সীমাবদ্ধ নয়। ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল চলচ্চিত্রে যেমন এসেছে বহুমাত্রিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের ছোঁয়া তেমনি এসেছে প্রচারেও। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এখন প্রচারের সবচেয়ে বড় মাধ্যম অনলাইন। ফেসবুক, ইউটিউব দিয়ে যে ছবিগুলো বা যারা তাদের ছবির প্রচারণার হাইপ তুলতে পারছেন তারাই এখন সফল হচ্ছেন।

Advertisement

ছবির যাত্রা শুরু থেকেই ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া। শুটিংয়ের ছবি ও খবর গোপন রাখা। ছবিতে কিছু চমক রেখে দেয়া যা কেবল হলে গিয়েই দেখবেন দর্শক। যেমনটি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির পরিচালক দীপঙ্কর দীপন করেছেন তাসকিন রহমানের চরিত্রটি উপহার দিয়ে।

তবে এ প্রচারের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে ‘আয়নাবাজি’। ছবিটি তার শুটিং শুরুর মুহূর্ত থেকেই ফেসবুক ব্যবহার করেছে প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে। কোনো গণমাধ্যমে শুটিংয়ের ছবি প্রকাশ করেছে ফেসবুকে। সেই ছবি দেদারছে শেয়ার হয়েছে, সেখান থেকে নিয়ে গণমাধ্যমে নিউজ হয়েছে। শুটিং শেষ করার পর থেকেই পোস্টার, গান ও ট্রেলার ছেড়ে আলোচনার জন্ম দিয়ে ছবিটিকে দেশের সব দর্শকের মনে গেঁথে দিয়েছে। এর পেছনে মূলমন্ত্র ছিলেন ছবিটির প্রযোজক গাওসুল আজম শাওন ও গিয়াসউদ্দিন আদিল। তারা দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞাপনী সংস্থা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। প্রচারণার সঙ্গে নিত্যদিনের সখ্য তাদের। তারা জানেন কীভাবে কোনো পণ্যকে সবার সামনে নিয়ে আসতে হয়। তারা মার্কেট নিয়ে ভাবেন, ভেবেছেন সিনেমার দর্শক নিয়েও। সে গবেষণার ফলেই আয়নাবাজির সাফল্য এসেছে।

ছবিটি মুক্তির পর হলে দর্শকের লাইনের ছবি দিয়ে ‘হাইপ’ তুলে একেবারে বিপ্লব ঘটিয়ে দিল। সেই বিপ্লবের ফল ভোগ করেছে ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, ‘নবাব’, ‘শিকারী’, ‘রাজনীতি’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’। সেই ফল ভোগের অপেক্ষায় রয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’। বিস্তর আলোচনা করা যায় এই ছবিটির প্রচারণা নিয়ে। ফারুকী তার ছবির ঘোষণার শুরু থেকেই নেগেটিভ মার্কেটিংয়েই হয়তো ভরসা করতে চেয়েছিলেন। তাই দেশের বাইরে নিজের ছবিটিকে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনী দাবি করলেও মেহের আফরোজ শাওনের প্রতিবাদের মুখে পুরোটাই অস্বীকার করেন। তিনি কিছু যুক্তিও দেখান ছবিটি হুমায়ূনের জীবনী নয় দাবি করে।

একদিকে তার ছবির শিল্পী ইরফান খান, পার্নো মিত্র, রোকেয়া প্রাচী সাক্ষাৎকারে বলছেন, ‘ডুব’ হুমায়ূনের জীবনী অন্যদিকে ফারুকী বলছিলেন মোটেও তা নয়। তিনি টেনে এনেছিলেন সাহিত্যিকদের ইতিহাস। বলেছিলেন, অনেক সাহিত্যিকের জীবনের সঙ্গেই এ ছবিটি মিলে যাবে। সেটা হুমায়ূনেরও হতে পারে। কিন্তু এটা এককভাবে হুমায়ূনের জীবনী নয়। অথচ ছবির ট্রেলার মুক্তির পর ফারুকীর সেই যুুক্তি মিথ্যা বলেই অনুমান করা যায়। তিনি যে পুরোপুরিভাবেই হুমায়ূন আহমেদের জীবনীটাকে তার ছবির উপজীব্য করেছেন তাতে কোনো সন্দেহও থাকে না। হুমায়ূন পুত্র নুহাশ আহমেদের চোখের চশমার ফ্রেমটা পর্যন্ত তিনি নিয়েছেন তার ছবিতে।

তবে শাওনের আপত্তির মুখে সেন্সর ছবিটির বেশ কিছু দৃশ্য কেটেও দিয়েছে, পরিচালককে দিয়েছেন সংশোধনীর নির্দেশ। ফলে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। সে যাই হোক, ছবিটিকে তিনি প্রচার করতে পেরেছেন প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। বাংলাদেশে আজকাল যারা সিনেমা দেখেন তারা কেউই আর এ ছবিটি সম্পর্কে জানতে বাকি নন। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার ‘ডুব’ এখন বহুল প্রচারিত একটি নাম। ছবিটি ব্যবসার তালিকায় ঢাকাই ছবির ইতিহাসকে কতটা সমৃদ্ধ করবে সেটা জানা যাবে ২৭ অক্টোবর, তবে আপাতত পরিচালক ও এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সফল বলা যায় প্রচারের ক্ষেত্রে।

কিন্তু ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’ সেটি পারেনি। পারছেন না এফডিসি ঘরানার নির্মাতারা। তার কারণ, তথ্যপ্রযুক্তিতে খুব বেশি দক্ষতা তাদের নেই। পাশাপাশি তারা নিজেদের ছবির পরিবেশনার জন্য কারও মুখাপেক্ষীও হন না। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে ছবির প্রচারে তৃতীয় পক্ষের যে অবদান বা অবস্থান থাকে সেটা আমাদের দেশে এখনও গড়ে ওঠেনি।

গাউসুল আজম শাওন ও তার প্রতিষ্ঠান সফল হলেও তারা নিয়মিত নন। কেউ কেউ জাজ মাল্টিমিডিয়াকে পরিবেশনার দায়িত্ব দেন। এ প্রতিষ্ঠানটি কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই টিকে আছে। তাই নিজেদের জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো নিয়ে তাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। নিজেদের প্রযোজনার ছবিগুলোকে তারা যেভাবে প্রচার করেন অন্যের ছবির প্রচারের বেলায় সেটা থাকে ফ্যাকাশে। কেবলমাত্র হল বুকিং দিয়েই তারা দায়িত্ব পালন শেষ করেন। পরিচালক বা প্রযোজককে কোনো পরামর্শ দেন না কীভাবে ছবিটি দর্শকের আগ্রহে নিয়ে যাওয়া যায়। তবে পরিবেশক হিসেবে জাজের নামে চোখ বন্ধ করে প্রশংসা করা যায়। কারণ, এটা প্রমাণিত, তারা ইচ্ছা করলে যে কোনো ছবিকে ভালো মানের হল ও বেশিসংখ্যক হলের ব্যবস্থা করে দিতে পারে।

আবার এটাও ঠিক তারা ইচ্ছা করলেই যে প্রচারণায় ঝড় তুলতে পারে সে নজিরও আছে। যার উদাহরণ হবে নুসরাত ফারিয়াকে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, ‘অঙ্গার’, ‘রক্ত’, ‘প্রেমী ও প্রেমী’ ছবিগুলোর প্রচার। নানা রকম গুজব ছড়িয়ে বলিউডের নায়িকা পর্যন্ত বানিয়েছে তারা নুসরাত ফারিয়াকে। তা সে ফারিয়া বলিউডে ছবি করুক বা না করুক নায়িকা হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়ে গেছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আবার উল্লেখ করা ছবিগুলো তেমন কোনো মানের পর্যায়ে না পড়লেও প্রচারের ঢামাঢোলে সেগুলো দেখতে দর্শককে হলে টেনেছেন। সেটা দেখার পর দর্শক সমালোচনা করেছেন ফেসবুকে। ফলে হাইপ উঠে গেছে নেতিবাচক। আর প্রভাব পড়েছে সিনেমার ব্যবসায়। এখান থেকে এ কথটাও কিন্তু বলা যায় যে, এখনকার দিনে সিনেমার সবচেয়ে বড় প্রচারকারী দর্শক।

ছবি দেখে তৃপ্তি পেলে দর্শকরা ফেসবুকে ছবিটি নিয়ে ইতিবাচক লিখছেন। সেটা দেখে হলে দর্শকের ভিড় বাড়ছে। এ ফর্মুলায় আসতে হলে ভালো মানের ছবি বানানোর বিকল্প নেই। ছবি ভালো হলে মুক্তির প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন মন্দা গেলেও বাজার ঘুরে যেতে পারে দর্শকের প্রচারণায়। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘আয়নাবাজি’, ‘রাজনীতি’ ও ‘ঢাকা অ্যাটাক’।

মজার ব্যাপার হলো জাজের প্রতিটি প্রচারেই নেতিবাচকতা থাকে সর্বাগ্রে। মূলত নেতিবাচক প্রচার দিয়েই তারা সফল হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তাদের সর্বশেষ ছবি ‘ডুব’কেও তারা আলোচনায় এনেছে নেতিবাচক প্রচার দিয়ে। নেতিবাচক বা ইতিবাচক যাই হোক, দিন শেষে লোকে ‘ডুব’কে চিনেছে, ছবিটি নিয়ে সবার মনে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, এটাই প্রাপ্তি। আর নেতিবাচক প্রচারণার নজির অবশ্য বিশ্বের সব দেশের ইন্ডাস্ট্রিতেই আছে। শাহরুখ তার ছবি হিট করানোর জন্য নেতিবাচক প্রচার ছড়ান। আমির খান তার ছবির খবর সবার কাছে পৌঁছে দিতে প্রেম করার মতো মিথ্যা খবর ছড়ান। টম ক্রুজ ছবির শুটিং করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন বলে গুজব ছড়ায়। আদতে সবই প্রচারের ধান্দা। সেদিক থেকে জাজকে বাহবা দেয়া ছাড়া উপায় কী!

আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নাম বলা যেতে পারে প্রচারের আলোচনার টেবিলে। সেটি হলো ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। তবে দিন দিন প্রতিষ্ঠানটি তার গৌরব হারিয়েছে। গৃহপালিত ‘টাইপ’ কিছু নির্মাতাদের বাইরে গিয়ে তারা ছবি নির্মাণ করেন না। সেই ছবির যতটা না উদ্দেশ্য থাকে দর্শককে বিনোদিত করা তারচেয়ে বেশি মুখ্য হয় নিজেদের ঘরের শিল্পীকে সিনেমায় কাজ করানো, বিশ্বের নানা প্রান্তের পুরস্কার অর্জন। তাই বাংলাদেশের সিনেমা হলে ব্যবসা করা নিয়ে ইমপ্রেসের কোনো মাথাব্যথাই নেই। স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন পড়ে না প্রচারণার ঝক্কি ঝামেলার।

এর বাইরে উল্লেখ করা যাবে টাইগার মিডিয়া, ঋদ্ধি টকিজসহ আরও কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম। যারা তৃতীয় পক্ষ হয়ে ছবির প্রচার ও পরিবেশনার কাজ করে। কিন্তু যতটা কৌশলী, তথ্যপ্রযুক্তিতে আপডেট হওয়া প্রয়োজন ততটা তারা হয়ে উঠতে পারেনি। অভাব আছে দক্ষ লোকবলের, যারা বিশেষ আইডিয়া দিয়ে ছবিটিকে দর্শকের আগ্রহে নিয়ে যেতে পারবেন।

তবে ছবির প্রচারণাকে জমিয়ে তুলতে এগিয়ে আসতে পারে এশিয়াটিক সোসাইটি, মিডিয়াকম, টপ অব মাইন্ড, মাইন্ড শেয়ারের মতো অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো। তাদের হাত ধরে এ দেশে অনেক বড় প্রতিষ্ঠানই প্রচারণার বাজারে রাজত্ব কায়েম করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সিনেমার প্রচারণা নিয়ে সিরিয়াস হলে অন্যান্য দেশের মতো এ ইন্ডাস্ট্রিতেও সিনেমার প্রচারণা হয়ে উঠবে লাভজনক ব্যবসায়। এ ক্ষেত্রটিতে প্রতিযোগিতা আসবে, বাড়বে সিনেমার বাজেট ও মান, যা খুব বেশি প্রয়োজন।

কারণ বর্তমানে ঢাকাই সিনেমার আলোচনায় বারবার উঠে আসছে এ কথাটাই-প্রচারেই সিনেমার সাফল্য। অর্থাৎ সিনেমাকে প্রচার দিন, সিনেমা আপনাকে ব্যবসা দেবে।

এলএ