দেশজুড়ে

ইলিশ ধরতে প্রস্তুত উপকূলের লাখো জেলে

কথা বলার ফুসরত নেই যেন কারও। কেউ ট্রলারে জাল তুলছে, কেউ আবার শেষবারের মত জাল দেখে নিচ্ছে। কাছাকাছি নদীর তীর ঘেঁষে কয়েকজন মাঝবয়সী জেলে জাল মেরামতে ব্যস্ত। কিশোর বয়সী আরও কয়েকজন জাল টেনে ট্রলারে তুলছে। শনিবার বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার মাছের খাল এলাকার শেষ বিকেলের চিত্র এটি।

Advertisement

প্রজনন মৌসুমে শিকারে নিষেধাজ্ঞা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও হঠাৎ করে সাগরে জলদস্যুদের উৎপাত সব মিলিয়ে উপকূলীয় বরগুনা জেলার জেলেদের সময় খুব একটা ভালো কাটেনি। মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে অবরোধে কাটিয়েছেন বেকার সময়। রোববার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে ইলিশ শিকারের সরকারি নিষেধাজ্ঞা। তাই জেলেদের আবারও শুরু হচ্ছে ব্যস্ততা।

জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যানুযায়ী জেলার ছয়টি উপজেলায় মোট ২৯ হাজার ৫৪১টি জেলে পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে সদরে সাত হাজার, আমতলী উপজেলায় সাত হাজার ২শ, পাথরঘাটায় নয় হাজার ৭১ জন, বামনায় একহাজার একশ ও বেতাগী ও তালতলী উপজেলায় চার হাজার একশ ৭০টি জেলে পরিবারের বসবাস।

তবে বেসরকারি হিসেবে বরগুনায় জেলেদের সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে জেলার পাথরঘাটা, আমতলী ও তালতলী এলাকা ভৌগলিক কারণেই জেলে অধ্যুষিত। এসব এলাকায় অন্তত ৪০ হাজার জেলে পরিবারের বসবাস। যারা বংশ পরম্পরায় পেশাজীবী জেলে। এসব জেলেদের জীবন-জীবীকার প্রধান উৎস বঙ্গোপসাগর ও স্থানীয় নদ-নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শিকার।

Advertisement

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবদুল মান্নান মাঝি বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও জলদস্যুদের হামলা ও অপহরণের শিকার হয়েছে উপকূলীয় জেলেরা। একদিকে সংসারের ভরণ-পোষণের ব্যর্থতা, অপরদিকে অপহরণ থেকে উদ্ধার পেতে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে অনেক জেলে। ফলে অনেকেই পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে দেনার দায়ে এলাকা ছাড়া হয়েছেন।

উপকূলীয় এলাকায় রয়েছে দু’শ্রেণির জেলে। এর মধ্যে এক শ্রেণি গভীর সমুদ্রের ও অন্যরা প্রান্তিক জেলে। উভয় প্রকার জেলেদের জীবন পুরোপুরি মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলদস্যুদের হানার শিকার গভীর সমুদ্রগামী জেলেদের এখন ঘোর দুর্দিন। পাশপাশি জেলার পায়রা বলেশ্বর ও বিষখালীকে কেন্দ্র করে প্রান্তিক জেলেদেরও একই অবস্থা। বিশেষ করে প্রান্তিক জেলেরা এ বছর নানা হয়রানীর শিকার হয়েছেন।

পদ্মা এলাকার জেলে মো. আবুল কালাম বলেন, আমার ট্রলারে মোট ১১ জন জেলে মাছ শিকার করে। আমরা সারা বছরই মাছ শিকারের রোজগারে পরিবার নিয়ে চলি। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে আমি প্রায় দু’লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আবারও মহাজনের কাছ থেকে দু’লাখ টাকা দাদন নিয়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরি বলেন, জেলার সবচেয়ে জেলে অধ্যুষিত পাথরঘাটা ও আমতলী উপজেলা। দুই উপজেলার মোট জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাছের উপর নির্ভরশীল। সরকারি হিসাবের তুলনায় এই দুই উপজেলায় জেলে সংখ্যা অনেক বেশি। মা ইলিশ রক্ষার জন্য সরকারি নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকার জেলেদের কোনো সহায়তা না দেয়ার ফলে জেলে পরিবাগুলোতো এখন চরম দুর্দশা চলছে। মহাজনের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এখানকার অনেক জেলে পরিবার ভিটে-মাটি বিক্রি করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাড়ি দিয়েছে।

Advertisement

এ বিষয়ে র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আনোয়ারুজ্জান বলেন, বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে র‌্যাব-৮ এর যে অস্থায়ী ক্যাম্পটি ছিল সেটি র‌্যাব-৬ এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই ক্যাম্পের র‌্যাব সদস্যরা জেলেদের সাগরে মাছ ধরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এফএ/এমএস