খেলাধুলা

সাকিবের জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় গুরু সালাউদ্দীন

বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর বদ্ধমুল ধারণা ও স্থির বিশ্বাস, দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ দলকে যতটা অনুজ্জ্বল দেখাচ্ছে তারা ততটা অনুজ্জ্বল দল নয়। ক্রিকেটাররা যেমন খেলছেন, তারচেয়ে ভাল খেলার সামর্থ্য তাদের আছে; কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ও দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ডিশন এবং প্রোটিয়াদের শক্তি -সামর্থ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি না নেয়ার কারণেই ঘটেছে বিপত্তি। সে কারনেই বাংলাদেশ সামর্থ্যরে সেরাটা দিয়ে খেলতে পারছে না।

Advertisement

এদিকে বাংলাদেশ বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম দক্ষ ও কুশলি প্রশিক্ষক মোহাম্মদ সালাউদ্দীন মনে করেন, অ্যাপ্লিকেশনটাই যত নষ্টের মূল। অ্যাপ্লিকেশন ভাল ও যথার্থ হচ্ছে না।

বিকেএসপিতে যার হাতের ছোঁয়ায় সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম পূর্ণতা পেয়েছেন, সেই সালাউদ্দীন জাগো নিউজের সাথে আলাপে অনেক কথার ভীড়ে একটি কথা জোর দিয়ে বলেছেন।

তার ব্যাখ্যা, ‘কন্ডিশনের দোহাই দিয়ে লাভ নেই। কন্ডিশন মোটেই প্রতিকুল নয়। বরং শেষ ম্যাচের উইকেট ছিল অনেকটাই বাংলাদেশের মত। আসল সমস্যা হলো অ্যাপ্লিকেশনে। পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য মোটেই কঠিন ছিল না। তাই কন্ডিশনকে কঠিন ভাবার সুযোগ নেই। উইকেট ছিল আমাদের দেশের উইকেটের মতই। প্রচন্ড গতি, বিপজ্জনক বাউন্স আর বিব্রতকর সুইং নেই। তবে একটা বড় পার্থক্য হলো স্পিনাররা হেল্প পাচ্ছে না। সাধারণত মনে হচ্ছে, সুন্দর ব্যাটিং ট্র্যাক। সেখানে অ্যাপ্লিকেশন ভাল হওয়া খুব দরকার। সামর্থ্যরে যথাযথ ও সময়মত প্রয়োগ খুব জরুরি। সে কাজটিই মনে হয় হচ্ছে না। অ্যাপ্লিকেশন ভাল হলেই হয়ত পারফরমেন্স এমন অনুজ্জ্বল দেখাতো না।’

Advertisement

সালাউদ্দীনের ধারনা, ব্যাটসম্যানরা যথাযথ দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারছে না। তারা যার যার দায়িত্বটা ঠিকমত পালন করতে পারলে অবস্থা আরও ভাল হতে পারতো। পার্লের ম্যাচের চালচিত্র দেখে তার মনে হয়েছে, ইমরুল কায়েস পজিটিভ ছিলেন। মুশফিক শুরু থেকেই ভালই খেলে আসছে। খেলছেও। আসল সমস্যা হচ্ছে মিডল অর্ডারে।

সালাউদ্দীনের অনুভব, ‘আগের ম্যাচে মিডল ওভারে ইমরুল, সাকিব আর মুশফিক তাড়াতাড়ি আউট হওয়ায় খেলা ঘুরে গেছে।’

মিডল অর্ডারের ঘাটতি পুরনে প্রিয় শিষ্য সাকিব আল হাসানের দিকে তাকিয়ে গুরু সালাউদ্দীন। তার উপলব্ধি, মাঝখানে যে ফাঁক-ফোকর দেখা দিয়েছে, তা কাটাতে সাকিবকে এগিয়ে আসতে হবে। সাকিবের কাছ থেকে লম্বা ইনিংস জরুরি।

তাই তো মুখে এমন কথা, ‘মিডল অর্ডারে সাকিব সব সময়ই বড় ভরসা। সাকিবের বড় ইনিংস পাওনা হয়ে গেছে। সাকিব বড় খেলতে পারলে ম্যাচ ক্লোজ হতে পারতো। ক্লোজে যাওয়া সম্ভব ছিল।’

Advertisement

সালাউদ্দীন বিশ্বাস করেন, পার্লে ২৫ ওভার পর্যন্ত বেশ ভাল মতই ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ। ইমরুল আর মুশফিক যেমন খেলছিলেন, তা ধরে রাখতে পারলে জেতাও অসম্ভব ছিল না।

‘আমার তো মনে হয়, ২৫ ওভার পর্যন্ত জেতারও সুযোগ ছিল। মনে করি না সেখানে হারার অবস্থা ছিল; কিন্তু মাঝখানে গিয়েই আমরা ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছি। একদম ইনিংসে মাঝামাঝি আমরা খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তিন থেকে চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। শুধু আমরা বলেই নয়, একদিনের খেলায় যে কোন দল ইনিংসের মাঝমাঝি তিন চার উইকেট হারিয়ে ফেললেই সর্বনাশ। আর ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। জেতার আর সুযোগও থাকে না। মিডল অর্ডারটা ঠিক থাকলে আর ওভাবে অত অল্প ব্যবধানে তিন চার উইকেট না পড়লে পার্লের চিত্র ভিন্ন হতে পারতো। মিডল অর্ডাররা ম্যাচ ধরে রাখতে পারলে হয়ত শেষ ১০ ওভারে ওভারপিছু ৮ থেকে ১০ রান প্রয়োজন পড়তো। ওই পিচে সেটা অসম্ভব ছিল না একদমই।’

কথাবার্তায় বোঝা গেল কোচ সালাউদ্দীন পেসারদের পারফরমেন্সে একটু বেশি অসন্তুষ্ট। তার ধারণা, পেসারদের আরও বেশি ঘাম ঝরানো দরকার। চেষ্টার মাত্রাটাও আরও বেশি থাকা জরুরী।

তাইতো এমন বক্তব্য, ‘দেখাই যাচ্ছে স্পিনাররা উইকেট থেকে তেমন সাহায্য পাচ্ছেন না। তাই পেসারদের আরও বেশি সক্রিয় হওয়া দরকার। বোলিংটা আরও টাইট হওয়া খুব জরুরি। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা কে কি করলো, তা না ভেবে আমাদের বোলারদের সঠিক জায়গায় বল ফেলার চিন্তায় স্থির থাকা উচিৎ। ঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারাই আসল কাজ। ভাল জায়গায় বল ফেলা গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই হবে সবচেয়ে সঠিক কাজ।’

এআরবি/আইএইচএস/এমএম