খেলাধুলা

লিটনের ব্যাটিংয়ে সমস্যা এবং তার সমাধান

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে হাফ সেঞ্চুরি বা শতরান করে ফেললেই তিনি বড় ব্যাটসম্যান, অনেক বড় ব্যাটিং প্রতিভা- তা ভাবার কোনই কারণ নেই। অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যান আছেন, যারা ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। যাদের ব্যাট একটু দেরিতে সৌরভ ছড়িয়েছে; কিন্তু পরবর্তীতে তারা ঠিক নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

Advertisement

সুতরাং, শুরু দিয়ে কিংবা পাঁচ-দশটি ম্যাচ দিয়ে কাউকে বিচার করা কঠিন। তারপরও শুরুটা বিবেচনায় এসে যায়। সে জায়গায় দিনকে দিন পিছিয়ে যাচ্ছেন লিটন দাস। ছয় টেস্টে নয় ইনিংসে দুটি ফিফটি থাকলেও ওয়ানডেতে ১১ ম্যাচে এখনো পঞ্চাশের দেখা পাননি। সর্বোচ্চ ৩৬।

তার ওয়ানডে ম্যাচগুলোর স্কোর; ৮+৩৬+৩৪+০+১৭+৫+০+৭+১৭+২১+১৪= ১৫৯ রান। এখন পর্যন্ত ভারত ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনটি করে ছয় ম্যাচ আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ খেলে চল্লিশের ঘরেও যেতে পারেননি এ স্টাইলিশ উইলোবাজ। এমন নয়, খুব নিচের দিকে ব্যাট করতে নেমেছেন, হাতে সময় মানে ওভারও কম ছিল, সঙ্গীও পাননি- এসব কিছুই নয়। লিটন সবচেয়ে বেশি, আটবার ব্যাটিং করেছেন ওয়ান ডাউনে। ওপেনিং করেছেন দুইবার। আর চার নম্বর পজিশনে একবার।

কিন্তু কোন জায়গায়ই সে অর্থে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। অথচ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আর জাতীয় লিগ মানে ঘরোয়া ক্রিকেটকে মানদন্ড ধরলে লিটন দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রতিভা। দারুণ ব্যাটসম্যান। একদম পরিপাটি ব্যাটিং শৈলি। ফ্রি স্ট্রোক মেকার। ব্যাট করেন আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে। যার হাতে ক্রিকেট ব্যাকরনের প্রায় শটসই আছে।

Advertisement

অথচ সেই লিটন এখন পর্যন্ত ১১টি ওয়ানডে খেলে ফেললেও এখনো নিজের সেই মেধা -প্রজ্ঞার ছাপ রাখতে পারেননি। তার ব্যাট এখনো পঞ্চাশ ছুঁতে পারেনি। অথচ তার সম বয়সী ও সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই শুরুর পাঁচ ছয় খেলার মধ্যেই হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলেছিলেন। তবে একটা কথা সত্য, এখন পর্যন্ত বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও লিটন দাসকে কিন্তু ভয়-ডর গ্রাস করতে পারেনি। এমন নয়, উইকেটে গিয়ে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন। খেলছেন স্বচ্ছন্দে, সাবলীল; কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন হচ্ছে।

ঘরের ক্রিকেটে প্রতি বছর দুই থেকে তিনটি শতরান যার সঙ্গি, যার ব্যাট ঘরোয়া ক্রিকেটে যেন খোলা তরবারি, সেই লিটন কেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রান পাচ্ছেন না, সেট হয়ে আউট হয়ে যাচ্ছেন? তা নিয়ে রাজ্যের কথাবার্তা। গুঞ্জন।

বেশিরভাগ সময় দেখা যাচ্ছে মিডল অফ স্ট্যাম্পের ওপর পিচ করে ভিতরে আসা ডেলিভারিতে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়িয়ে ভাল খেলতে খেলতে আউট হয়ে যাচ্ছেন লিটন। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সর্বশেষ দুই ওয়ানডেতেই ফ্লিক করতে গিয়ে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরত এসেছেন এ ডানহাতি টপ অর্ডার।

বারবার লেগ মিডল স্ট্যাম্পে পিচ পড়া ডেলিভারিকে ফ্লিক করে খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছেন লিটন, তবে কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গিয়ে নাভার্স হয়ে যাচ্ছেন এ তরুণ? নাকি তার ব্যাটিং টেকনিকে কোন ধরনের গলদ আছে?

Advertisement

এ নিয়ে ক্রিকেট প্রশিক্ষক সালাউদ্দীন কিছুতেই মনে করেন না লিটন দাসের টেকনিক, টেম্পারামেন্টে কোন বড় ধরনের সমস্যা আছে। তার ধারনা, লিটন ফ্লিক খেলতে খুব ভালবাসে। এ শট ভাল খেলতেও পারে। তবে বেশিরভাগ সময় সে একটু ফাইনারে খেলতে চেষ্টা করে। সেটাই কাল হচ্ছে।

লিটন দাস সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কোচ সালাউদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিটন পর পর দুই ম্যাচে একই ধরনের শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছে। তা দেখে কেউ যদি এখন তাকে ওই শট খেলা থেকে বিরত রাখার কথা বলেন, তাহলে তা হবে না। কারন লিটন ওভাবেই রান করে। তার এভাবে ফ্লিক খেলা বন্ধ করে দিলে রান করার সামর্থ্যটাই কমে যাবে। সে ফ্লিক খেলে খেলুক। ফ্লিক সে ভালই খেলে; কিন্তু লিটন একটু বেশি ফাইনারে খেলতে চায়। তার লক্ষ্য থাকে একটু বেশি ফাইনারে বল পাঠাবো। তাই সে ফাইন লেগের দিকেই খেলার চেষ্টা করে বেশি। সে ফাইন লেগে না মেরে স্কোয়ার লেগ বা মিড উইকেটে মারলে লেগবিফোর উইকেটের সমস্যা কম হবে। লিটন বেশি ফাইনারে খেলতে চায় বলেই পা অ্যাক্রোসে চলে যায়। মিস হলেই প্যাডে লাগছে। টেস্টেও সে একইভাবে আউট হয়েছে।’

লিটন সম্পর্কে সালাউদ্দীনের শেষ কথা, ‘তার হাতে শটস আছে। উইকেটে খুব বেশি সময় থাকতে না পারলেও যতক্ষণ থাকছে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঝ ব্যাটেই খেলছে। এখন তার একটু ফাইন টিউনিং প্রয়োজন। তাকে বোঝাতে হবে সে স্কোয়ার লেগ ও মিড উইকেটে ফ্লিক খেলবে। সেটা তুলনামুলক নিরাপদ। যদি সে তা বুঝতে পারে, তাহলেই দেখবেন তার ব্যাট থেকে লম্বা ইনিংস বেরিয়ে আসছে।’

আবার সেই প্রশ্ন এসে যায়, তাহলে এত টাকা খরচ করে হেড কোচ আর ব্যাটিং কোচ রেখে লাভ কি? তারা কি করছেন? এসব ছোট্ট ভুল-ত্রুটি শুধরে দিতে না পারলে কিসের হাথুরুসিংহে আর কিসের সামারাবিরা?

এআরবি/আইএইচএস/এমএম