দেশজুড়ে

বাতাসে উড়ে যেতে পারে ঝুপড়ি ঘর, আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

নিম্নচাপের প্রভাবে পুরো কক্সবাজার জুড়ে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে। থেমে থেমে বর্ষণ, প্রবাহিত হচ্ছে ঝড়ো ও দমকা হাওয়া। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অনেক ঝুঁপড়ি ঘরের চালা উড়ে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা। বিশেষ করে ভোগান্তি পোহাচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ থাকা পরিবারগুলো। আবার বৃষ্টির সঙ্গে পানি বাহিত রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

Advertisement

ক্যাম্প সংশ্লিষ্টরা জানান, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রথম দিকে খাদ্য ও আবাসন সমস্যায় থাকলেও জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে সুষ্ঠু বন্টন চলমান থাকায় এখন তা নেই। এখানকার নিয়মিত সমস্যা হলো বৃষ্টি আর বাতাস। নতুন পুরোনো অধিকাংশ রোহিঙ্গা পরিবারের আবাসন পলিথিনের বেড়া ও ছাউনির। ফলে একটু বাতাস হলেই অনেক সময় ছাউনি-চালা সব উড়ে যায়। আবার ভারী বর্ষণ হলে পানি ঢুকে ঘরে। তাই ঘুমানো তো দূরে থাক বসারও পরিবেশ থাকে না তাদের। গত বৃহস্পতিবার রাত থেক থেমে থেমে বর্ষণ ও দমকা হাওয়া চলতে থাকায় অনেক রোহিঙ্গার চালা উপড়ে গিয়ে বিপন্ন হয়েছে। এতে বেশি বেকায়দায় পড়েছে ছোট ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধ সদস্য থাকা পরিবারগুলো।

কুতুপালং নতুন বস্তিতে অবস্থান নেয়া মো. ইব্রাহিম বলেন, পলিথিনের ছাউনি ও বেড়ায় কোনোমতে জীবন অতিবাহিত করছি আমরা। একটু বাতাসসহ বৃষ্টি হলে ভেতর-বাইরে একাকার হয়ে যায়। তখন শুয়া তো দূরের কথা ঘরের ভেতর বসাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। চালা উড়ে বা ভেঙে গেলে আরও বিপদ। তাই বৃষ্টির সঙ্গে বা এমনিতে বাতাস হলে আল্লাহকে স্মরণ করে বসে থাকি।

বালুখালী ক্যাম্পের আরেক আশ্রিত ছলিম ঊল্লাহ বলেন, আমি যেখানে বাড়ি করে আছি তা পাহাড়ের একদম ঢালুতে। ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড়ের মাটি-পানি ঘরে ঢুকে পড়ে। তখন ঘরে অবস্থান করার উপায় থাকে না। থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। তাই একটু উপরে বাড়ি করা এক আত্মীয়ের ঝুঁপড়িতে অবস্থান করছি পরিবারের সবাই।

Advertisement

তার মতে, বাংলাদেশ সরকার আমাদের সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে। কিন্তু ঝড় বৃষ্টি প্রকৃতির বিষয়। এটিতে তাদের করণীয় কিছুই থাকেনা। তাই বাতাস-বৃষ্টি একসঙ্গে হলে খুব ভয়ের মধ্যে থাকি। একই অবস্থা বালুখালী ও কুতুপালংয়ে ঝুঁপড়ি করে বসবাস করা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহামেদ বলেন, একসঙ্গে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা ঘিঞ্জিভাবে বসবাস করায় ছোঁয়াচে রোগগুলোর প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়াও রোহিঙ্গারা স্বাস্থ্য সচেতন নয়। তাই তারা যেখানে থাকে তার পাশেই মল ও প্রসাব ত্যাগ করে। আর বৃষ্টি হলে এসব আবর্জনা দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর শংকা সৃষ্টি হয়। এসব কারণে বেশ কিছু টিকা দেয়া হচ্ছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও সুপেয় পানি নিশ্চিত এবং পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার। পানিবাহিত রোগগুলো দ্রুত সারাতে স্বাস্থ্য টিম ও ক্লিনিকগুলো সদা প্রস্তুত রয়েছে। যাতে দেশি বিদেশি সংস্থাগুলো সহযোগিতা দিচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। সব দিকে শৃঙ্খলা ফিরেছে। নির্মিতব্য শেডগুলো তৈরি সম্পন্ন হলে বাতাসে ঝুঁপড়ি উঠে যাওয়ার আতঙ্ক আর থাকবে না। এ লক্ষে দ্রুত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সায়ীদ আলমগীর/এমএএস/আরআইপি

Advertisement