খেলাধুলা

কঠিনতম চ্যালেঞ্জের মুখে মাশরাফি বাহিনী

অধিনায়ক মাশরাফির অনুমান অনেকটাই সত্য। দেশ ছাড়ার আগের রাতে জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলে গিয়েছিলেন, ‘শুধু ওয়ানডে সিরিজই নয়, এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে হবে এ বছরের সবচেয়ে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ।’

Advertisement

ওয়ানডে সিরিজ শেষ হবার আগেই সে সত্যর দেখা মিলেছে। সত্যিই এ বছরের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে মাশরাফির দল। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে মাঠে নামার আগে হিসেব নিকাশ সবই প্রায় বাংলাদেশের বিপক্ষে। তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মাঠে নামার আগে পারিপার্শি¦ক সব কিছুই বিপক্ষে। চারিদিকে নেতিবাচক দিক আর মাইনাস পয়েন্ট। প্রথম সমীকরণ, তিন ম্যাচের সিরিজ হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন শেষ ম্যাচ শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। জিতলে সান্তনা। মুখ রক্ষা আর হারলে তুলোধুনো। হোয়াইটওয়াশ। দ্বিতীয়তঃ মোস্তাফিজের পর তামিম ইকবালও ইনজুরির শিকার হয়ে বাইরে ছিটকে পড়েছেন। তার মানে শেষ ম্যাচে তামিমও নেই। তার অর্থ কাগজে কলমে শক্তি কমেছে আরও। এই সবগুলো নেতিবাচক দিক আর মাইনাস পয়েন্ট এখন সঙ্গী বাংলাদেশের।

মোট কথা দক্ষিণ আফ্রিকায় নানা প্রতিকুলতায় টাইগাররা। সন্দেহ নেই সে সব প্রতিকুলতার যোগ ফল, একটা বড় মানসিক ‘চাপ’। সে মনস্তাত্বিক চাপ নিয়েই আজ রোববার ইষ্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে খেলতে নামবে মাশরাফির দল। ওই ম্যাচে হারলেই নিউজিল্যান্ড সফরের মত ৩-০‘তে ওয়ানডে সিরিজ হার মানে, তুলোধুনো হতে হবে টিম বাংলাদেশকে।

এখন মাশরাফি বাহিনী কি হোয়ইওয়াশ হবে? না শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্বান্তনার এক জয় পাবে? সেটাই দেখার। ক্রিকেট সব সম্ভবের খেলা। নিশ্চিত-অনিশ্চিত বলে কিছু নেই। সব হিসেব নিকাশ বিপক্ষে বলেই যে, বাংলাদেশ আগের দুই ম্যাচের মত ব্যর্থতার ঘানি টানবে, প্রতিদ্ব›িদ্বতা গড়ে তুলতে না পেরে বড় ব্যবধানে হারবে- সেটাও জোর দিয়ে বলা যাবে না। তামিম-মোস্তাফিজকে ছাড়া যে বাংলাদেশ আগে জেতেনি, এমন নয়। জিতেছে।

Advertisement

তবে সে দৃশ্যপট আর প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। এ সফরে এখন পর্যন্ত সব কিছুই বিপক্ষে। কোন ম্যাচেই ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং আশানুরূপ হয়নি মাশরাফি বাহিনীর। প্রথম দিন মুশফিকুর রহীম একা ভাল খেলেছেন। এছাড়া পুরো ব্যাটিং লাইনআপ ব্যর্থতার মিছিল করেছে। তারপরও স্কোর গিয়ে ঠেকেছিল ২৭৮‘এ।

আর পরের ম্যাচে ঘুরে ফিরে সেই মুশফিক, সঙ্গে ইমরুল কায়েস। আর লিটন দাস, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির ও নাসির- সবার ব্যাটে রানখরা।

বোলিংয়ে সাকিব এক স্পেলে ভাল বল করেছেন। আর রুবেলের শেষ স্পেলটি নজর কেড়েছে; কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলকে তাদের মাটিতে হারানোর জন্য আরও অনেক বেশি উজ্জ্বল পারফরমেন্স প্রয়োজন।

আরও পরিকল্পিত, গোছানো এবং উদ্যমী টিম পারফরমেন্স একান্তই দরকার। আগের দুই ম্যাচে যা চোখে পড়েনি। দল সাজানো থেকে শুরু করে, বোলারদের বোলিং আর ব্যাটসম্যানদের ব্যাট চালনা- কোথাও সে অর্থে সু-পরিকল্পনার ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় ম্যাচে খানিক উন্নতি ঘটলেও বোলাররা এখনো জায়গামত বল ফেলতে পারেননি।

Advertisement

দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ডিশনে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের স্বচ্ছন্দে খেলা আর চার-ছক্কার নহর বইয়ে দেয়া থেকে বিরত রাখতে যে মাপা লাইন ও লেন্থে বল করা প্রয়োজন, তা হয়নি। যে কারণে প্রতি ম্যাচেই হাশিম আমলা, ডি কক ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের রান বন্যায় ভেসে যেতে হচ্ছে।

এর সাথে ফিল্ডিং ও ক্যাচিংটাও কেমন যেন খাপছাড়া। প্রোটিয়াদের সাথে লড়াই করতে হলে ফিল্ডিং হওয়া চাই টাইট। ক্যাচ ধরার হাফ চান্সকেও ফুল চান্সে পরিণত করতে হবে। রান আউট করার একটু-আধটু সুযোগ আসলেও তা কাজে লাগানোর প্রাণপন চেষ্টা করতে হবে।

আগের ম্যাচে তেমন একজোড়া সুযোগ এসেছিল সামনে। যার উত্তাল ও ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে, সেই এবি ডি ভিলিয়ার্স একাই দুবার আউট হবার সুযোগ দিয়েছিলেন; কিন্তু তা কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। সাকিবের বলে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পরাস্ত ডি ভিলিয়ার্স ২ রানে স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন; কিন্তু প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো নাসিরের সে ক্যাচ ধরার মত চপলতা ও ক্ষিপ্রতা ছিল না।

একইভাবে ৩৪ বলে পঞ্চাশ করার আগে রান আউটের সুযোগও দিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স; কিন্তু মিডঅনে দাড়ানো মাহমুদউল্লাহও সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। মিডঅনে ফিল্ডার সোজা বল চলে যাবার পরও প্রায় কয়েক গজ দৌড়ে সামনে চলে গিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স; কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ছুটে বল নিয়ে থ্রো করা বহুদুরে, বল হাতেই নিতে পারেননি।

আর সেই না পারাই হয়েছে কাল। তারপরও উইকেটের সামনে ও দুদিকে বাহারি মারের ফলগুধারা বইয়ে ১০৪ বলে ১৭৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স। একই ভাবে আর ব্যাটসম্যানরাও দায়িত্ব নিয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না। এক মুশফিকই উইকেটে থেকে দলকে কিছু দেবার চেষ্টা করছেন।

আর টপ, মিডল ও লেট অর্ডারে আর কেউ সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় স্কোর-লাইন দুর্বল ও জীর্ন। দুই ম্যাচে প্রায় একই অবস্থা। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগত পারফরমেন্স বাদ দিলে সামগ্রিক পারফরমেন্স ছিল অনুজ্জ্বল-শ্রীহীন। হতাশার। এই অবস্থা কাটিয়ে শেষ ম্যাচে ভাল খেলা আরও কঠিন। তবে অসম্ভব নয়।

এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি