জাতীয়

আমাদের দুঃখ-কষ্ট কেউ মনে রাখে না

আমাদের দুঃখ-কষ্ট কেউ মনে রাখে না

‘বৃষ্টি কিংবা রোদ সবসময়ই আমাদের রাস্তায় থাকতে হয়। রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তার বেহাল দশা। কিন্তু যানজট তৈরি হলেই দোষ ট্রাফিক পুলিশের। ক’দিন ধরে অনবরত বৃষ্টি ঝরছে। রাস্তা তলিয়ে যাচ্ছে। জলজট যানজট তৈরি করছে। পালাক্রমে আমরা নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করছি, রাস্তায় থাকছি। ভিজে, ছাতা মাথায়, ঠান্ডায় কাজ করছি। আমাদের এ কষ্ট-দুঃখ কিন্তু শুধু পেশাগত নয়, মানুষের সেবাও বটে। কিন্তু কেউ আমাদের কষ্টের কথা কিংবা শ্রমের কথা মনে রাখতে চায় না। সমালোচনার সময় আমাদেরকেই বেশি গঞ্জনা সইতে হয়।’

Advertisement

ডিএমপি’র ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম। শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় রামপুরা ব্রিজে ছাতা মাথায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় তাকে। মেঘলা দিনে, বৃষ্টিময় আবহাওয়ায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কিভাবে কাজ করছে জানতে চাইলে জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন তিনি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও সবসময় যানজট কিংবা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। বিড়ম্বনার শেষ নেই ট্রাফিক পুলিশের। এরপরও দায়িত্ব পালন করেই যেতে হয় আমাদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক আর মানবসৃষ্টই হোক, যেকোনো দুর্যোগেও দায়িত্ব পালনে কোনো বিরতি নেই। ধুলো-বালি আর রোদ-বৃষ্টিতে অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও ট্রাফিক জ্যামের জন্য অপবাদ শুনে যেতে হয় নীরবে।’

শনিবার সরেজমিনে রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, হাতিরঝিল, গুলশান, বাড্ডা, যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকা, মহাখালী, বনানী ও উত্তরায় বৃষ্টিতে ভিজেই দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় ট্রাফিক কর্মকর্তা ও সদস্যদের। কারো গায়ে রেইনকোট, কেউ ছাতা মাথায়, কেউ বা হাঁটু পানিতে ভিজে দায়িত্ব পালন করছেন।

Advertisement

বিকেলে হাতিরঝিল থেকে বেড়িয়ে মেরুল বাড্ডার সংযোগ সড়কে কথা হয় ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট মদন কুমারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে দুপুর থেকে ডিউটিতে আছি। বৃষ্টি পড়ছে অনবরত। কিন্তু আমাদের বিরতি নেই। রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখাই আমাদের দায়িত্ব। তাই বলে কী জলজটের দায়ও আমাদের? যাদের দায় তাদের তো রাস্তায় দেখি না। তারাও তো রাস্তায় আসতে পারেন? রাস্তায় আসলে তারা বুঝতেন কেন মানুষের আজ এতো ভোগান্তি!’

রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক বনানী-উত্তরা সড়কে পানি জমে যাওয়ায় বেগ পোহাতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের। নেভি সদর দফতর এলাকায় দায়িত্বরত অবস্থায় ট্রাফিক উত্তর বিভাগের সার্জেন্ট মো. সাদ্দাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের চেষ্টায় এই এলাকায় যান চলাচল নির্বিঘ্ন করা হয়েছে। কিন্তু জলজট হলে বিপাকে পড়তে হয়ে আমাদের। কারণ মানুষের তাৎক্ষণিক দৃষ্টিতে আমরাই রাস্তায়। বৃষ্টিতে ভিজে, হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে আমরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি। অনেকে আমাদের ধন্যবাদ দিচ্ছেন। ভালো লাগছে।’

যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় সার্জেন্টসহ ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের নিয়ে নিজে মাঠে কাজ করছেন ট্রাফিক উত্তরের বাড্ডা এলাকার সহকারী কমিশনার (এসি) ফেরদৌসী রহমান তানিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজধানীবাসী টানা বৃষ্টিতে এমনিতেই ভোগান্তিতে রয়েছে। তারা রাস্তায় এসেও যদি যানজটে ভোগেন, বিপাকে পড়েন তবে সে দায় আমরা কোনোভাবে এড়াতে পারি না। সেজন্যই আমরা ভোর থেকে রাস্তায় কাজ করছি। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সে জন্য বৃষ্টিবিঘ্নিত আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। তবে জলজটে বেগ পেতে হচ্ছে।’

গুলশান এলাকার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাসুদ জানান, ‘বাসা থেকে বেড়িয়েই জলজটে পড়েছি। মোটরসাইকেল রেখে রিকশায় কর্মস্থলে এসেছি। ভেজা শরীরেই ডিউটি শুরু করেছি।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমরা অনুভূতিশূন্য নই। আমাদের ভালো লাগা খারাপ লাগা আছে। আছে পরিবার। দায়িত্বের কারণেই গরমে ঘামি, বৃষ্টিতে ভিজি, ঠান্ডা বাতাসে কিংবা শীতে শ্বাস নিয়েই থেকে রাস্তা থেকে ডিউটি করছি। তবে সড়কে যখন মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করেন, ধন্যবাদ দেন, তখন নিজেকে স্বার্থক মনে হয়।’

রামপুরা ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) এ এস এম মুক্তারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দিন-রাত রাস্তায় থেকে দায়িত্ব পালনের কারণে সাইনোসাইটিস, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথাসহ নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন ট্রাফিক সদস্যরা। সেসব খবর ক’জন রাখেন। যে কেউ স্বীকার করবেন, পুলিশে কিংবা অন্য যেকোনো পেশার মধ্যে ট্রাফিক বিভাগে কর্মরতদের পরিশ্রম বেশি। আমাদের পেশাগত শ্রমের স্বীকৃতিটাও যদি না পাই তবে ভীষণ খারাপ লাগে।’

ডিএমপি’র ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মইনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কষ্ট করছেন। সেসব ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসছে। অসংখ্য মানুষ আমাদের কষ্টে অনুপ্রাণিত। ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ যদি ট্রাফিক পুলিশের পাশে থাকে তবে এ নগরীকে আমরা স্বচ্ছ, যানজটহীন, নির্বিঘ্ন শহর হিসেবে উপহার দিতে পারবো।’

জেইউ/এসএইচএস/আরআইপি