রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত যে পানি পান করেন সেই পানির গুণগত মান কোন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেক পাঠকেরই অজানা। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর খাবার পানি যে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় ওই একই ল্যাবরেটরিতে হোটেল সোনারগাঁওসহ সকল পাঁচ তারকা হোটেলে অতিথিদের খাবার পানি পরীক্ষা করা হয়। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা বিদেশি অতিথিরা বাংলাদেশে বেড়াতে আসলেও ওই একই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা খাবার পানি সরবরাহ করা হয়। এ ল্যাবরেটরিটি হলো রাজধানীর মহাখালীর সরকারি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি। এ ল্যাবে খাদ্য ও পানি শাখায় নিয়মিতভাবে ভিভিআইপিদের খাবার পানি নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় হয়।তবে অনেকেই হয়তো শুনে অবাক হবেন এ ল্যাবরেটরিটি প্রায় ছয় দশকের পুরনো। ১৯৫৭ সালে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর যে ভবনে ল্যাবরেটরির যাত্রা শুরু হয়েছিল তাতে বিগত বছরগুলোতে খুব একটা সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ছয় দশক পর হলেও কর্তৃপক্ষ পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরিটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ইতিমধ্যেই অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় সকল সংস্কার কাজ শুরু হবে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. জাফরউল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, ইতিমধ্যেই ইনস্টিটিউটে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর সহায়তায় ন্যাশনাল ফুড সেইফটি ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বর্তমানে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ফলমূল, খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি জানান, এফওএ’র সহায়তায় এনএফএসএলের আদলে পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি আধুনিকায়নের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণ শ্রমিকরা পুরনো ল্যাবরেটরির দেয়াল ও ফ্লোর ভাঙার কাজ করছেন। বিভিন্ন কক্ষের আসবাবপত্র বারান্দায় সরিয়ে এনে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখা গেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিগুলো খুবই পুরনো। পুরনো দরজার ফাঁক গলে ধুলোবালিও প্রবেশ করছে। এ ল্যাবরেটরি ছাড়াও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রবেশ পথের বারান্দায় উন্নতমানের টাইলস বসানোর জন্য সংস্কার কাজ করতে দেখা যায়।
Advertisement
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এনএফএসএল প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ ভিভিআইপিদের খাবার পানি এ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি জানান, স্বাস্থ্যখাতের স্যানিটারি ইনসপেক্টররা সারাদেশের বাজার থেকে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য এ ল্যাবরেটরিতে পাঠায়। এতদিন পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলাতে কর্তৃপক্ষ এটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ ও ২০১৩ সালে পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরিতে ১০ হাজারের বেশি খাবারের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা খাবারের প্রায় ৫০ ভাগ (৪৬ ভাগ) ভেজাল পাওয়া যায়। কিছু কিছু খাবার যেমন চকলেট, কেক, ছানা, দই, আচার, ফলের জুস, সর্ষের তেল ও ডালডায় শতভাগ ভেজাল পাওয়া যায়। শতকরা ৮০ থেকে ৯৯ ভাগ ভেজাল মেলে ঘি, জুস, মধু, রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ, লজেন্স, সয়াবিন তেল ও গুঁড়ো দুধে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সরকার ভেজাল খাদ্যেরোধে আইন প্রণয়ন করেছে। জনস্বাস্থ্য ভালো রাখতে ল্যাবরেটরিতে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খাবারের মান নিশ্চিত করতে পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এমইউ/বিএ/আরআইপি