খেলাধুলা

বিদেশি কোচদের সততা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন!

টেকনিকে খুব বড় ধরনের সমস্যা নেই কারও। তবে কিছু ঘাটতি তো থেকেই যায়! আছেও। সেটা বোলারদের ক্ষেত্রে যেমন, ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রেও তেমন; কিন্তু কঠিন সত্য হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করছে ভিনদেশি কোচিং স্টাফদের পেছনে।

Advertisement

বিশ্ব ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ‘ক্রিকইনফোর’ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিসিবি যত টাকা বিদেশি কোচিং স্টাফ, মানে হেড কোচ, ব্যাটিং, বোলিং কোচ, ট্রেনার, ফিজিও, কম্পিউটার অ্যানালিস্টের পেছনে খরচ করে, তার সিকি পরিমাণ অর্থ ক্রিকেটারদের পিছনে খরচ হয় না।

কোচিং স্টাফ আর ক্রিকেটারদের মাসিক বেতনের তুলনা করলে বিস্ময়ে হতবাক হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। জনা পাঁচেক বিদেশি কোচিং স্টাফ মিলে যে পরিমাণ অর্থ মাসে পান, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তার ধারে কাছেও পান না।

প্রশ্ন উঠেছে, এত বিদেশি কোচ পুষে কি লাভ? ক্রিকেটাররা সারা বছর এক ঝাঁক বিদেশি কোচিং স্টাফের অধীনে কোচিং করেন। ট্রেনার ফিজিক্যাল ট্রেনিং করান। বোলিং কোচ বোলিং শেখান। ব্যাটিং কোচ ব্যাটিংয়ের নানা বিষয় দেখিয়ে দেন। ফিল্ডিং কোচ ফিল্ডিং ও ক্যাচিং প্র্যাকটিস করান; কিন্তু দিন শেষে প্রাপ্তির ভান্ডার প্রায় শূন্য।

Advertisement

কারণ কী? সমস্যা কোথায়? ক্রিকেটাররাই পারেন না, নাকি কোচিং স্টাফদের কোনো সমস্যা? এ প্রশ্ন এখন গোটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে। জাগো নিউজের সাথে আলাপকালে এ প্রসঙ্গে বোমা ফাটানো মন্তব্য করেছেন সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিবির সাবেক পরিচালক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সামগ্রিক শারীরিক ফিটনেস, ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং আর ক্যাচিং স্কিল নিয়ে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর উপলব্ধি, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ব্যাটিং স্কিল উন্নত না হওয়া এবং বোলার ও ব্যাটসম্যানদের একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটার পেছনে তাদের চেষ্টা ও একাগ্রতার চেয়ে আমি বর্তমান কোচিং স্টাফদের দায়ী করতে চাই। আমার মনে হয় তারা নিজ নিজ পেশার প্রতি শতভাগ সৎ নন। তাদের দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য নিষ্ঠায় ঘাটতি আছে। সেটাই যদি না থাকবে, তাহলে তারা একটা সিরিজ শেষে সোজা বাড়ি ফিরে যেতে পারেন না। যেতেনও না।’

লিপু জানতে চান, ‘কোচদের দায়বদ্ধতা আছে। তারা কী দায়িত্ব পালন করছেন? তা কি খুটিয়ে দেখা হচ্ছে? তারা কতখানি কাজ করতে পেরেছে, আমরা তার মূল্যায়ন করি না। তাদের দায়বদ্ধতার জায়গাও কম। তাই তো তারা বিভিন্ন সিরিজের পর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ছুটি নিয়ে নেন। তারা নিজের কাজগুলোর ব্যাপারে শতভাগ সৎ নন।’

কোচদের কাজের পরিধিও জানিয়ে দিলেন লিপু। তিনি বলেন, ‘তাদের (বিদেশি কোচদের) উচিৎ প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে আলাদা কাজ করা। সেটা একেক সিরিজ বা আসরের পর অবসর সময়; কিন্তু তারা তা না করে চলে যাচ্ছেন নিজ নিজ দেশে। লম্বা ছুটি কাটিয়ে আবার ফিরে আসেন, যখন আরেকটি সিরিজের প্রস্তুতি শুরু হয়, তখন। তাতে করে পুরনো ভুল-ত্রুটিগুলো আর শুধরানো হয় না।’

Advertisement

লম্বা ছুটি কাটানোর পর নতুন করে ক্যাম্প শুরু হলে ফেরেন কোচরা। সে কথা জানিয়ে লিপু বলেন, ‘যখন জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হয়, তখন দেখি আবার দল বেঁধে কোচরা আসতে শুরু করেন। তখন আর ব্যক্তিগত পর্যায়ের ট্রেনিং, ভুল-ত্রুটি নিয়ে আর কাজের ফুরসত মেলে না। ভুলগুলো থেকেই যায়। তাই তো ইমরুল বারবার লেগ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলকে অযথা তাড়া করে দুই বার উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়েছেন। এর আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও দেখেছি এমন সমস্যায় একাধিক ব্যাটসম্যানকে উইকেট দিয়ে আসতে। বল লেগ মিডল স্ট্যাম্প কিংবা আরও বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে , তা না খেলে ছেড়ে দিলেই হয়। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা অহেতুক তা তাড়া করে আউট হচ্ছেন। এসব সমস্যা থেকেই যাচ্ছে, সংশোধন হচ্ছে না। সে ভুলগুলো শুধরে দেবার দায়িত্ব কোচদের। তারা কি তা করছেন? যে সময়টাতে এসব নিয়ে কাজ করার কথা, তারা তখন থাকেন না। চলে যান ছুটিতে। নিজেদের সততা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে তারা কখনও সচেতন নন।’

এআরবি/আইএইচএস/আইআই