কৃষি ও প্রকৃতি

সরিষা চাষের এখনই সময় : শেষ পর্ব

সরিষা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান তেল বীজ ফসল। সরিষার তেল শহর-গ্রাম সবখানেই জনপ্রিয়। আমাদের দেশের অনেক জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। এখনো গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার উপর নির্ভর করে। তাই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে সরিষার চাষ ও বাজারজাত করা জরুরি।

Advertisement

সংরক্ষণমাড়াই করার পর রোদে শুকানো বীজ গরম অবস্থায় সংরক্ষণ করলে বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বীজ ঠান্ডা করে প্লাস্টিকের পাত্রে, টিনে বা ড্রামে রেখে মুখ এমনভাবে বন্ধ করতে হবে যেন পাত্রের ভেতরে বায়ু প্রবেশ করতে না পারে। সংরক্ষণের জন্য বীজভর্তি পাত্র মাটির সংস্পর্শে রাখা বাঞ্ছনীয়। বীজসহ পাত্র আর্দ্রতা কম এমন ঘরের শীতল স্থানে রাখলে একবছর এমনকি দু’বছর পর্যন্ত বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বজায় থাকে।

জাব পোকাপূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা পোকা সরিষার পাতা, কাণ্ড, ফুল ও ফল থেকে রস শোষণ করে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে ফুল ও ফলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং পাতা কুঁকড়ে যায়। জাব পোকা এক ধরনের রস নিঃসরণ করে, ফলে তাতে সুটিমোল্ড ছত্রাক জন্মে এবং আক্রান্ত অংশ কালো দেখায়। এজন্য ফল ঠিকমতো বাড়তে পারে না, বীজ আকারে ছোট হয়। বীজে তেলের পরিমাণ কমে যায়। ফল ধারণ অবস্থায় বা তার আগে আক্রমণ হলে এবং প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আরও পড়ুন- ফল গাছের জন্য মাটির গুণাবলি

Advertisement

প্রতিকার আগাম চাষ আশ্বিনের শেষ ভাগ ও মধ্য-কার্তিক (অক্টোবর) অর্থাৎ আগাম সরিষা বপন করলে জাব পোকার আক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে। প্রতিগাছে ৫০টির বেশি পোকা থাকলে ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি বা সুমিয়িথন-৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করতে হবে।

পাতা ঝলসানোঅল্টারনারিয়া ব্রাসিসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক অবস্থায় সরিষা গাছের নিচে বয়স্ক পাতায় এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়। পরে এর আক্রমণে গাছের পাতা, কাণ্ড ও ফলে চক্রাকার কালচে দাগের সৃষ্টি হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পাতা ঝলসে যায়। ফলে সরিষার ফলন খুব কমে যায়।

প্রতিকাররোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের সরিষা চাষ করতে হবে। ধলি, দৌলত, বারি সরিষা-৭, বারি সরিষা-৮ ইত্যাদি জাত কিছুটা পাতা ঝলসানো রোগ সহনশীল। রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের আগে ভিটাভেক্স-২০০ বা ক্যাপ্টান দিয়ে (২-৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক/কেজি বীজ) বীজ শোধন করে বপন করতে হবে। এ রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোভরাল-৫০ ডব্লিউপি বা ডাইথেন এম-৪৫, ০.২% হারে ৯ গ্রাম (প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ২ গ্রাম) পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন- বন্যার ক্ষতি পোষাবে আমন

Advertisement

পরজীবীসরিষার পরজীবী উদ্ভিদের মধ্যে অরোবাংকিই প্রধান। সরিষা গাছের শেকড়ের সঙ্গে এ পরজীবী উদ্ভিদ সংযোগ স্থাপন করে খাদ্য সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। ফলে পরজীবী আক্রান্ত সরিষার গাছ দুর্বল হয়, বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলন হ্রাস পায়। কারণ অরোবাংকির বংশবৃদ্ধি সরিষা গাছের ওপর নির্ভরশীল। এর বীজ মাটিতেই অবস্থান করে। মাটি, ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, সেচের পানি প্রভৃতির মাধ্যমে অরোবাংকির উৎপত্তি ও বিস্তার ঘটে। বারবার একই জমিতে সরিষা পরিবারের ফসল চাষ করলে এ পরজীবীর বিস্তার ঘটে।

প্রতিকারফুল আসার আগে পরজীবী উদ্ভিদ জমি থেকে তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। পরিমিত হারে টিএসপি সার ব্যবহার করতে হবে। আগে এ রোগাক্রান্ত জমি গভীরভাবে চাষ করতে হবে। আগাছানাশক যেমন ২.৪-ডি ছিটিয়ে পরজীবী উদ্ভিদ দমন করতে হবে।

এসইউ/জেআইএম