সন্ধ্যা, গাবখান, কঁচা ও কালীগঙ্গা নদীর অব্যাহত ভাঙনে পিরোজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার গন্ধর্ব, আশোয়া, আমড়াজুড়ি, সোনাকুর, সয়না, মেঘপাল, ধাবড়ী, রঘুনাথপুর এলাকায় শত শত পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। এদিকে, হুমকির মুখে রয়েছে আমরাজুড়ি ফেরিঘাট। বার বার স্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে দুই পাড়ের ঘাটের। ফেরি ঘাট এলাকায় ভাঙনের তীব্রতার কারণে যেকোন মুহূর্তে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কাউখালীর চিরাপাড়া,বেকুটিয়া,পাঙ্গাসিয়া, জোলাগাতী, ভান্ডারিয়ার চরখালী পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সন্ধ্যা ও কঁচা নদীর দুই তীর বিরামহীনভাবে ভাঙলেও প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ আজও নেয়া হয়নি। পুনর্বাসিত করা হয়নি নদী ভাঙা মানুষগুলোকে। ঘাটের পাশেই অবস্থিত পিরোজপুর জেলার এক সময়ের আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর মাস্টার সামসুল আরেফিনের স্মৃতিবিজড়িত আশোয়া গ্রাম। এ গ্রামটি আজ কেবলই স্মৃতি। জেলার অন্যতম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সন্ধ্যা নদীর গর্ভে বিলীন হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সন্ধ্যা তীরের ওইসব বাড়িঘর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার নেই কোন উদ্যোগ। গন্ধর্ব্য জানকি নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে বার বার স্থান পরিবর্তন করা হলেও পুনরায় তা হুমকির মুখে পড়েছে। সেটাও যেকোন মুহূর্তে বিলীন হতে পারে। কাউখালী সদর ও সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নের বিশাল এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় সহায় সম্বলহীন নদী ভাঙা মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাদের অর্থ-কড়ি ছিল তারা অন্যত্র জমি কিনে বাড়ি করতে পেরেছেন। কিছু পরিবার আশ্রায়ন আর আবাসন প্রকল্পে স্থান পেলেও অধিকাংশ মানুষ কচুরিপানার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আবার কেউ পরিচিত জনের বাড়ির আঙিনায় মাথা গোজার ঠাঁই করে নিয়েছে। কেউ আবার দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে ভারতে। কেউ শহরের কোন বস্তিতে স্থান করে নিয়েছে। নদীভাঙা মানুষগুলোর পুনর্বাসনের জন্য সরকারি বা বেসরকারি কোনো পদক্ষেপ নেই। আমড়াজুরি এলাকার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে জামাল মিয়ার পরিবার ঢাকার রায়ের বাজার এলাকার ভাড়া করা এক ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। অসুস্থ্ শরীর নিয়ে রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। নিজে যা পান তার সিংহভাগই ঔষধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়। ফলে মানবেতরভাবে জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাদের।আমড়াজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ লাল গুহ জানান, ওই ইউনিয়নের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ নদী ভাঙনের শিকার। নদী ভাঙা মানুষের জন্য তেমন সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় না। সামান্য কয়েকটি পরিবারকে আবাসনে স্থান দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কাউখালী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মিল্টন জানান, সদর ইউনিয়নে নদী ভাঙা মানুষের সংখ্যা কম হলেও আমড়াজুরি ও সয়না রঘুনাথপুরের নদী ভাঙা বহু পরিবার আমার ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছে। ওই সব মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের কোন ব্যবস্থা নেই। এদের পুনর্বাসনে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। হাসান মামুন/এসএস/পিআর/এসআরজে
Advertisement