খেলাধুলা

তামিমকে নিয়ে অনেক আশা

১৫ অক্টোবর প্রথম ওয়ানডের আগের দিন নেটে ৩০ মিনিটের মত ব্যাট করেছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া হয়েছিল তামিম খেলবেন। কিন্তু কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলেননি দেশসেরা ওপেনার। ম্যাচের আগের দিন ৩০ মিনিট নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করলেন, ঐ অনুশীলন সেশন কভার করা রিপোর্টারদের প্রতিবেদনে জানা, একদম স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাটও চালিয়েছেন তামিম। কিন্তু ম্যাচ খেলেননি।

Advertisement

কেন? এ প্রশ্নের উত্তর নিয়েও আছে বিভ্রান্তি। এক পক্ষর কথা, নেটে স্বচ্ছন্দে ব্যাটিং করলেও তখন পর্যন্ত তামিম শতভাগ ফিট ছিলেন না। মানে তার শারীরিক অবস্থা ঠিক ম্যাচ খেলার উপযোগী ছিল না। তাই ফিজিও তাকে খেলতে দেননি। আবার অন্য কথাও শোনা যায়। আরেক পক্ষর কথা, খেলা নিয়ে কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথা কাটাকাটির কারণেই নাকি তামিমকে শেষ পর্যন্ত একাদশের বাইরে রাখা হয়।

অবশ্য তামিম পরে এ ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন। তাই ধরে নেয়া যায় শতভাগ ম্যাচ ফিটনেস না থাকায় তামিমের প্রথম ম্যাচ খেলা হয়নি। তবে মঙ্গলবার কেপটাউনের পার্লে মিডিয়ার সঙ্গে কথোপকোথনে পরিষ্কার তামিম আজ (বুধবার) খেলবেন। আর তামিম খেলা মানেই উদ্বোধনী জুটি পরিপূর্ণ হওয়া। ব্যাটিং শক্তি বেড়ে যাওয়া। দলগত শক্তির ভারসাম্যও বৃদ্ধি পাওয়া।

আগেই জানা কাটার মাষ্টার মোস্তাফিজ নেই। প্রথম ম্যাচে তামিমও ছিলেন না। তাই টিম বাংলাদেশ খেলেছে ক্ষয়িষ্ণু শক্তি নিয়ে। আজকের ম্যাচে সে শক্তি কিছুটা বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা তামিমের অন্তর্ভুক্তিতে ওপেনিং জুটি বা টপ অর্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে।

Advertisement

প্রথম ম্যাচে মুশফিকুর রহীম অনবদ্য সেঞ্চুরি করলেও আর কারো ব্যাটে রান ছিল না। বিশেষ করে দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস (৩১) আর লিটন দাস (২১) সেট হয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। প্রতিদিন মুশফিক খেলে দেবেন না। দ্বিতীয় ম্যাচে টপ অর্ডারের কেউ একজন লম্বা ইনিংস খেলুক, এমন প্রত্যাশা সবার। তাই তামিমের দিকেই সবার চোখ। তামিম একটা ভাল ও লম্বা ইনিংস খেললে স্কোর লাইন মোটা তাজা হবে এমন বিশ্বাস সমর্থকদের।

সময়ের প্রবাহতায় ব্যক্তি নির্ভরতা কমে কার্যকর পারফরমারের সংখ্যা বেড়েছে। মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহরা চলে এসেছেন। ওয়ানডেতে মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহই বাংলাদেশে ‘পঞ্চপাণ্ডব।’ সঙ্গে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজও ম্যাচ উইনার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন। সৌম্য, সাব্বির আর মিরাজও উঠে এসেছেন। সব মিলে এখন ওয়ানডেতে একটা ইউনিট গড়ে উঠেছে। দল হিসেবেও মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাশরাফি বাহিনী। তারপরও তামিম-সাকিবই মূল চালিকাশক্তি।

গত কয়েক বছরের অতি উজ্জ্বল পারফরমেন্সই তামিম-সাকিবকে পাদপ্রদীপের আলোয় অধিষ্ঠিত করেছে। সমর্থকদের বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হয়েছেন তামিম ও সাকিব। যে দলের সঙ্গেই খেলা হোক না কেন, সমর্থকদের বিশ্বাস তামিম ও সাকিব ঠিক কিছু একটা করে ফেলবেন। করে দেখিয়েছেনও। বাংলাদেশ গত তিন বছরে যতগুলো ওয়ানডে জিতেছে তার বেশির ভাগের রূপকার তামিম ও সাকিব। মোটকথা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দুই নিউক্লিয়াসের একজন তামিম।

কিন্তু অবাক হবার মত খবর হলো, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তামিম ও সাকিবের ট্র্যাক রেকর্ড মোটেই ভাল না। পরিসংখ্যান চেনা তামিমের সঙ্গে মেলে না। হোক তা দেশে কিংবা বাইরে, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তামিম আগে কখনই নিজের সেরাটা উপহার দিতে পারেননি।

Advertisement

শুনলে অবাক হবেন, ১৭৩ ম্যাচের ১৭১ ইনিংসে ৯ সেঞ্চুরি আর ৩৮ টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৫৭৪৩ রান করা তামিমের দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ১০ ম্যাচে রান মাত্র ২৬৪। কোন সেঞ্চুরি নেই। হাফ সেঞ্চুরি মাত্র দুটি। সর্বোচ্চ ৮২। গড় ২৯.৩৩।

সাধারণত তামিম দ্রুত গতির ও বাউন্সি ট্র্যাকে ভাল খেলেন। কিন্তু কেন যেন দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ডিশনেও তার ভাল খেলার রেকর্ড নেই। সেখানেও পরিসংখ্যান অনুজ্জ্বল। দুই ম্যাচে রান ৬৫। কোন ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ ৪১। ১০ বছর আগে ২০০৭ সালের ৭ এপ্রিল প্রভিন্সে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম খেলায় ৩৮ রান করা তামিম প্রোটিয়াদের সাথে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন ঘরের মাঠে ২০০৮ সালের ৯ মার্চ, নিজ শহর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে তামিমের সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৬১ নট আউট। ওই সিরিজের শেষ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির আগের দুই ইনিংসেও তার ব্যাট কথা বলেনি। রান ছিল ০ ও ৫। দেখা যাক পার্লে আজ তামিমের ব্যাট জ্বলে ওঠে কি না?

এআরবি/এমআর/পিআর