বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে উজ্জীবিত দলটির নেতাকর্মীরা। চিকিৎসার জন্য বিএনপিপ্রধানের লন্ডন সফর হলেও দলটির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, এই সফরে তাদের রাজনৈতিক অর্জন রয়েছে।
Advertisement
গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আগামীকাল বুধবার দেশে ফিরছেন বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন তিনি। এমনটি জানিয়েছেন তার মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।
চিকিৎসার জন্যই বিএনপি চেয়ারপারসনের দীর্ঘ এই সফর, দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও রাজনৈতিক মহলে খালেদা জিয়ার সফর নিয়ে বেশ গুঞ্জন রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এমনও বলেছেন, খালেদা জিয়া লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছেন। আবার দলের নেতাকর্মীরাও প্রত্যাশা করছেন দলীয়প্রধান হয়তো কোনো সুসংবাদ নিয়েই দেশে ফিরছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনে টানা তিন মাস অবস্থানকালীন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি সময়োপযোগী রূপরেখা তৈরি করেছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাস্তবতা বুঝে বিএনপির অবস্থান এবং দলকে আরও গতিশীল করতে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
Advertisement
পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে সাজান হয়েছে নতুন পরিকল্পনা। এনিয়ে গ্রুপভিত্তিক কাজ ভাগও করে দেয়া হয়েছে। দেশে ফিরেই তিনি এসব বিষয় নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন। পরে পরিকল্পনা মাফিক কাজও শুরু করা হবে।
এদিকে টানা ৯২ দিন লন্ডনে অবস্থান করলেও কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এনিয়ে নানা গুঞ্জনও রয়েছে। তবে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে একটি শপিং মলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানসহ বেগম খালেদা জিয়াকে কেনাকাটা করতে দেখা যায়।
লন্ডনে অবস্থানকালীন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছেন- এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও এর সত্যতা নিশ্চিত করেননি বিএনপি সংশ্লিষ্ট কেউ।
তবে দলের একটি অংশের বিশ্বাস, চিকিৎসার জন্য তাদের প্রিয় নেত্রী লন্ডনে অবস্থান করলেও দলের বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে কার্যকর কোনো দিকনির্দেশনা নিয়েই তিনি দেশে ফিরছেন।
Advertisement
এ বিষয়ে দলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফাহিমা নাসরিন মুন্নী জাগো নিউজকে বলেন, ম্যাডাম মূলত চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। পাশাপাশি সেখানে যেহেতু আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন, তার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলা স্বাভাবিক। রাজনৈতিকভাবেও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের একসঙ্গে থাকাটা ভালো ইঙ্গিত। এর ফলে দলের জন্য ভালো কিছু দিকনির্দেশনা আসতে পারে।
দলের বিশেষ দায়িত্বে থাকা ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে গেছেন। সুস্থতার জন্য দীর্ঘসময় সেখানে তিনি অবস্থান করেছেন। চিকিৎসা শেষ হয়েছে, তাই দেশে ফিরে আসছেন। এটুকুই জানি।
দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ম্যাডাম চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন অনেকটাই সুস্থ। এটাই দলের জন্য বড় অর্জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমীন বেপারী বলেন, চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরে আসছেন, এটাই তার জন্য মঙ্গল, দলের জন্য মঙ্গল। নেতানির্ভর দলে দলীয়প্রধান না থাকলে শৃঙ্খলা থাকে না। দলের কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। এখন তিনি সরকারবিরোধী আন্দোলনে গঠনমূলক কর্মসূচি দিয়ে দলকে এগিয়ে নেবেন। এটাই তো সবার আশা।
তিনি আরও বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবরা বলছেন, লন্ডনে বসে খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্র করেছেন, বিজেপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তা যদি সত্য হয় তাহলে বাংলাদেশে সুষমা স্বরাজ আসছেন, উনার সঙ্গে আলোচনা করে সফল হলে বিএনপির জন্যই তো ভালো।
বিশিষ্ট এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, আওয়ামী লীগের মধ্যেও একটা এলোমেলো ভাব দেখা গেছে। ভারত আগের মতো তাদের সমর্থন নাও দিতে পারে। কারণ বিভিন্ন পত্রিকাতে এসেছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক করতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে সরকারের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ খালেদা জিয়া কাজে লাগাতে পারলে তার জন্য, দলের জন্য কল্যাণকর হবে।
এমএম/এমএআর/বিএ