আইন-আদালত

গ্রেফতার হচ্ছেন না খালেদা জিয়া

বিভিন্ন সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ছয় মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও পরোয়ানাগুলো এখনও সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছেনি। এমনকি সংশ্লিষ্ট আদালত থেকেও পরোয়ানাগুলো থানায় পাঠানো হয়নি। পরোয়ানা থানায় না আসায় তা তামিল করতে অথবা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট থানা কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ আদালত। পরোয়ানা জারির পর তা তামিলের জন্য অথবা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানায় এখনও পাঠানো হয়নি।

প্রসঙ্গত, গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আগামীকাল বুধবার দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন তিনি। জাগো নিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান।

আদালতের পেশকার মোকারম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনও তার স্থায়ী ঠিকানার সংশ্লিষ্ট থানা গুলশানে পাঠানো হয়নি।

Advertisement

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসেনি। পরোয়ানা হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

দেশে ফিরে জামিন চাইবেন খালেদা জিয়াবিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় তিন মাস বিদেশে অবস্থান করার পর আগামীকাল বুধবার (১৮ অক্টোবর) দেশে ফিরছেন। বিদেশে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা অন্যতম।

আগামীকাল বুধবার দেশে ফিরে পরদিন বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) জামিন নেয়ার জন্য ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ আদালতে হাজির হবেন খালেদা জিয়া। সেদিন তিনি জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করবেন। এরপর তিনি দুই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চাইবেন। আর বাকি চার মামলায় পর্যায়ক্রমে জামিনের আবেদন করবেন তিনি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হয়রানির জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তিনি বিদেশ থেকে বুধবার দেশে ফিরছেন। বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ আদালতে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করবেন।

Advertisement

খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া বলেন, গত ১২ অক্টোবর বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তিনি বুধবার দেশে ফিরবেন। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) মামলা দুটির ধার্য তারিখ রয়েছে। সেদিন তিনি দুই মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করবেন। এরপর তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চেয়ে আবেদন করবেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, আইন মেনে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তার কারণে জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। তাই আইনের সব প্রক্রিয়া মেনে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাজিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতির দুই মামলায় আত্মপক্ষের সমর্থনে আদালতে হাজির না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান। মামলা দুটি যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ধার্য রয়েছে।

বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা অবমাননায় গ্রেফতারি পরোয়ানামুক্তিযুদ্ধকে ‘কলঙ্কিত’ এবং বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা ‘অপমানিত’ করার অভিযোগে দায়ের করা মানহানির মামলায় ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর হাকিম নুর নবী।

কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা একটি মামলায় ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ বেগম জেসমিন আরা। মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

ভুয়া জন্মদিন পালনে গ্রেফতারি পরোয়ানা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম।

নড়াইলে গ্রেফতারি পরোয়ানা২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে মানহানির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদুল আজাদ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

জেএ/এমএআর/এমএস