দেশে দারিদ্র্যের হার কমলেও বেড়েছে বৈষম্য। গত ছয় বছরে দেশে দারিদ্রের হার কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে বৈষম্যের হার বেড়েছে। এর মানে ধনী ব্যক্তির আয়ের হার যে হারে বেড়েছে, গরিব মানুষের আয়ের হার সে তুলনায় বাড়েনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
Advertisement
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জরিপ অনুসারে, ২০১০ সালের জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৬ সালের হিসাবে ৬ বছরে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে। এতে মনে ছয় বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। তবে দারিদ্র্য কমার এ হার আগের ছয় বছরের চেয়ে কম।
অন্যদিকে দারিদ্র্যের হার কমলেও বেড়েছে আয় বৈষম্য। বৈষম্য নিরূপণে সমাদৃত মানদণ্ড গিনি সূচক নামে পরিচিত। নিয়মানুসারে গিনি সুচক শূন্য হলে কোনো বৈষম্য নেই বলে ধরা হয়। সূচক ১ কে বলা হয় সর্বোচ্চ বৈষম্য। তার মানে শূন্য থেকে এর হার যত বাড়বে বৈষম্যও তত বাড়বে।
Advertisement
বিবিএসের জরিপ অনুসারে ২০১০ সালে গিনি সূচকে বৈষম্যের হার ছিল শূন্য দশমিক ৪৫৮। আর ২০১৬ সালে সে বৈষম্যের হারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৪৮৩।
জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকার ও লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে দারিদ্র্য কমেছে এটা একটা ভালো সংবাদ। এই দারিদ্র কমার সূচকে হতদরিদ্র রয়েছে। কিন্তু এ জরিপে কিছু মন্দ দিক উঠে এসেছে। এর একটি হলে আয় বৈষম্য বেড়েছে। এর মানে হলো দারিদ্র্য কমলেও বৈষম্য বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু সেটা দরিদ্রবান্ধব প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। মানুষের কর্মসংস্থানবান্ধব প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না।
২০১০ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে ১২ হাজার খানার তথ্য নেয়া হয়েছিল। এবার নমুনা দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪৬ হাজার খানার ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে।
Advertisement
৬২টি প্রশ্নের উত্তরে মানুষের আয়, ব্যয়, ভোগ, স্বাস্থ্য, প্রবাস আয়সহ অন্যান্য তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক দীপঙ্কর রায়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, জরিপটি এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) পূরণে কাজে আসবে। এ জরিপ আগের চেয়ে নির্ভরযোগ্য বলা যায়। কারণ জরিপে নমুনার সংখ্যা বেড়েছে।
বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে সেটি কমে আসে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে। সে হিসাবে ছয় বছরে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্রতি বছর দারিদ্র্যের হার কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। আর ২০১১ থেকে ২০১৬ এই সময়ে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতি বছর কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে। খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য বলছে, দেশে এখন অতি দরিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে দুই কোটি। ২০১০ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে এই হার ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের মানুষের আয় বেড়েছে। দারিদ্র্য ও হতদরিদ্রের সংখ্যাও কমেছে। আমাদের জন্য একটি ভালো সংবাদ। যেভাবে দারিদ্র্যের হার কমেছে আমরা বলতে পারি ২০১৩ সাল নাগাদ দেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না।
বৈষম্য বিষয়ে তিনি বলেন, বৈষম্য বেড়েছে ঠিক আছে, কিন্তু আমরা অন্য পদ্ধতিতে এ বৈষম্য কমিয়ে নিয়ে আসব। সম্পদ কর (ওয়েলথ টেক্স) বসানো হবে। যারা আয় বেশি করবে তারা করও বেশি দেবে।
এমএ/আইআই