আন্তর্জাতিক

কারাগারেই চিকিৎসক দম্পতির ‘চেম্বারে’ ঢল

কারো দাঁত বহুদিন ধরে কনকন করছে, কারো শিরশির করছে, কারো অন্য কোনো সমস্যা। পাশেই চিকিৎসক থাকলেও যাচ্ছি-যাব করে যাওয়া হয়ে ওঠেনি অনেকেরই। কিন্তু কয়েক দিন আগে তারা হঠাৎ জানতে পারলেন, ডাক্তার দম্পতি চলে যাচ্ছেন; সেই থেকে রোগীর ঢল নেমেছে ডাক্তারের ‘চেম্বারে’।

Advertisement

দুই চিকিৎসকও সমান আন্তরিকতায় এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করে নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন, কোনো রোগী যেন বাদ না পড়েন। অবশ্য গত চার বছরে কম রোগী দেখেননি তারা। তবে গত কয়েক দিনে আরও জমজমাট হয়ে উঠল তাদের চেম্বার। দুই দন্ত চিকিৎসক মিলে সামাল দিতে পারছেন না রোগীর ভিড়।

না, এটা কোনো ডাক্তারের চেম্বার নয়। এতোক্ষণ বলছিলাম ভারতের গাজিয়াবাদের দসনা কারাগারের কথা। কয়েকদিন সেখানে চরম ব্যস্ত সময় কেটেছে চিকিৎসক দম্পতির।

দিন চারেক আগেই ইলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন, রাজেশ তলোয়ার এবং নূপুর তলোয়ার দম্পতি অপরাধী নন। নিজেদের মেয়ে অরুশিকে তারা হত্যা করেননি।

Advertisement

আর তাতেই সবাই জেনে গিয়েছিল তলোয়ার দম্পতি মুক্তি পাচ্ছেন। গত শুক্রবারই তারা কারাগার থেকে ছাড়া পাবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু রায়ের নথি কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় চিকিৎসক দম্পতির মুক্তি কয়েক দিনের জন্য আটকে যায়।

সোমবার দসনা কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। দীর্ঘ চার বছর পর স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তির ছাপ তলোয়ারদের মুখে। খুশি দসনা কারাগারের অন্য আবাসিকরাও।

কিন্তু চিকিৎসক দম্পতি ছাড়া তাদের দাঁতের চিকিৎসার কী হবে! ছোটখাটো অসুস্থতায় কার কাছে তারা জলদি ছুটে যাবে পরামশ্যের জন্য। কারাগারে চিকিৎসা পরিকাঠামো রয়েছে ঠিকই। কিন্তু গত কয়েক বছরে তলোয়ার দম্পতি যতটা আপন হয়ে উঠেছিলেন কয়েদিদের, কারাগারের হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ততটা কাছের সম্পর্ক তো নেই তাদের। সে কারণেই মন খারাপ অনেকেরই।

গাজিয়াবাদের নিম্ন আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পর থেকে গত চার বছর জেলেই ছিলেন অরুশির বাবা-মা। কারাগারে পৌঁছেই কয়েদিদের দাঁতের চিকিৎসার ভার নিয়েছিলেন তারা।

Advertisement

সেই কাজের জন্য রাজেশ তলোয়ার এবং নূপুর তলোয়ারের হিসেবে পারিশ্রমিকও জমা পড়ছিল। কারা সুপার দধিরাম মৌর্য জানান, ৪৯ হাজার পাঁচশ টাকা জমা হয়েছে রাজেশ-নূপুরের খাতায়। তবে সেই টাকা নিতে রাজি নন চিকিৎসক দম্পতি।

চার বছর যাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা তারা নিতে পারবেন না। প্রত্যাখ্যান করেছেন সে কারণেই। সেবা অবশ্য থামবে না, রাজেশ তলোয়ার ও নূপুর তলোয়ার কয়েদিদের কথা দিয়েছেন, মাসে দু’বার দসনা জেলে তারা যাবেন, রোগীও দেখবেন।

সূত্র : এনডিটিভি, আনন্দবাজার

কেএ/জেআইএম