প্রাণঘাতী ব্লু হোয়েল গেম এর মতো মরণব্যাধি খেলায় মেতে উঠতে পারে এমন টিনএজ বয়সীদের স্মার্টফোন দেয়া উচিত না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লু হোয়েলসহ এ–জাতীয় মরণখেলার গেটওয়ে নিয়ে দায়ের করা রিটের শুনানিতে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।
এ সময় আদালত আরও বলেন, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদেরও দায় দায়িত্ব আছে। বাচ্চাদের স্মার্টফোন দেয় কেন? ম্যাচিউর না হওয়া পর্যন্ত স্মার্টফোন দেয়া উচিত না। সেটা ২২ ও ২৩ বছর হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী রোববার (১৫ অক্টোবর) রিট আবেদনটি করেন, যা আজ শুনানির জন্য ছিল। পরে এ সংক্রান্ত বিষয়ে আদালত রুলসহ নির্দেশনা দিয়েছেন।
Advertisement
ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লু হোয়েলসহ এ–জাতীয় মরণখেলার গেটওয়ে লিংক ছয় মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, দেশের মুঠোফোন অপারেটরদের রাত্রিকালীন বিশেষ ইন্টারনেট অফারও ছয় মাসের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শুনানির শুরুতে রিটকারী আইনজীবী হুমায়ূন কবির পল্লব আদালতে বলেন, ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে একটি রিট আবেদন। জবাবে আদালত বলেন, পেপারে দেখছি। পল্লব বলেন, এ বারের তিন আইনজীবী রিট করেছেন। যার মধ্যে একজনের মেয়ে (স্বর্ণা) এ গেম খেলে আত্মহত্যা করেছে।
এ সময় আদালত বলেন, পেপারে এগুলো নিয়ে নিউজ আসতেছে। কার মেয়ে, বয়স কত, কোন স্কুলে পড়ে? এসময় স্বর্ণার বাবা সুব্রত বর্ধন দাঁড়িয়ে বলেন, মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে। ১৪ বছর বয়স। হলিক্রস স্কুলে। রোল নম্বর ছিল এক। এ বলে তার একটি ছবিও আদালতকে দেখান সুব্রত বর্ধন।
আদালত বলেন, ভালো স্কুল। মেধাবী মেয়ে। মেয়ে এগুলো করছে খেয়াল করেননি? জবাবে সুব্রত বলেন, আমরা বিষয়টি বুঝতে পারিনি। ঘটনার আগে সে সবার সঙ্গে নবমীতেও গেছে। এরপরে যে কী হয়ে গেল...
Advertisement
আদালত বলেন, ভেরি স্যাড, ভেরি স্যাড। ইট ক্যান নট বি রিপেয়ার্ড। কবে আত্মহত্যা করেছে? জবাবে সুব্রত বলেন, ৫ অক্টোবর। এ সময় আইনজীবী পল্লব বলেন, দিস ইজ এন ইনসিডেন্ট।
তখন আদালত একটি গানের লাইন বলেন, যার চলে যায় সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদের কি যন্ত্রণা…। পল্লব বলেন, ইন্টারনেটের ডার্ক ইফেক্ট হচ্ছে এ গুলো। শুধু স্বর্ণাই নয়, এরপর রংপুরে এক আইনজীবীর মেয়ে ও বরিশালেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সবাই সুইসাইডাল নোট দিয়ে গেছে। এ সময় স্বর্ণার সুইসাইডাল নোট আদালতে তার বাবা উপস্থাপন করেন।
পল্লব বলেন, নীল তিমি মরার সময় যেমন বিচে চলে (সমুদ্রের কিনারে) আসে। তেমনি এটাও একই রকম। এ পারসেপশন থেকে সুইসাইড নোট। ২০১৩ সালে এ গেম উদ্ভাবন করা হয়। রাশিয়ার এক যুবক এটি বের করে। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার করে জেলে দেয়া হয়। তা ৭ বছরের জেল হয়েছে।
তিনি বলেন, রাশিয়ার সংসদে এর বিরুদ্ধে আইন হয়েছে। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৩০০ জনের মতো আত্মহত্যার খবর এসেছে। এর মধ্যে ১৫০ জন রাশিয়ায়। যে একবার ঢুকে সে আর বের হতে পারে না। এখানে ৫০ দিনের চ্যালেঞ্জ দেয়। যারা এ গেমে কিউরেটর বা মাস্টার, তারা টিনএজারদের ফেসবুকে সিলেক্ট করে।
এরপর অ্যাপস পাঠায়। কেউ অ্যাকসেপ্ট করলে তারা তার সব কিছু জেনে নেয় এবং একটি পাসওয়ার্ড দেয়। তখন থেকে অনেক আনন্দ পায় ব্যবহারকারী। কিন্তু পরবর্তীতে মাস্টার ব্যবহারকারীকে কিছু কাজ দেয়। সেটাই সমস্যা।
ভোর ৪টায় কবরস্থানে গিয়ে সেলফি দিতে বলে, রাত ৩টায় ছাদের কার্নিশে গিয়ে সেলফি দিতে বলে ইত্যাদি। এটার লাস্ট স্টেজ হলো আত্মহত্যা সংগঠন করা (কমিট টু সুইসাইড)। গেম না খেললে থ্রেট দেয়া হয়। দিস ইজ নট এ গেম। ইট ইজ ডেথ ট্র্যাপ।
আদালত বলেন, অ্যাবসুলেটলি। কারণ যারা এটা ব্যবহার করে তারা তো ম্যাচিউর না। বিটিআরসি কি এটা ব্লক করতে পারবে?
জবাবে আইনজীবী পল্লব বলেন, তারা করেনি। কেন করেনি সেটা জানি না। এরপর আমাদের সময়ের একটি সম্পাদকীয় পড়ে শোনান তিনি।
আদালত বলেন, অভিভাবকদেরও দায় দায়িত্ব আছে। বাচ্চাদের স্মার্টফোন দেয় কেন? ম্যাচিউর না হওয়া পর্যন্ত স্মার্টফোন দেয়া উচিত না। সেটা ২২ ও ২৩ বছর হতে পারে।
পল্লব বলেন, এসব গেম রাতে খেলে। আর মোবাইল অপারেটররাও রাতে বিভিন্ন অফার প্যাকেজ দেয়। রাত হচ্ছে ঘুমানোর সময়। তারা কেন রাতে দেবে? এটা হচ্ছে তরুণদের জেগে রাখার জন্য এসব অফার দিচ্ছে।
এফএইচ/একে/আইআই