সোহেল আব্বাসের কথা উঠছিল বারবার। পাকিস্তান যখন একের পর এক পেনাল্টি কর্নার থেকে সুবিধা আদায় করতে পারছিল না, ম্যাচটি দেখে থাকলে দলটির সাবেক অধিনায়ক এবং পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট সোহেল আব্বাস নিশ্চয়ই আফসোসো পুড়েছেন। সাবেক এ ডিফেন্ডারের মতো এক পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্টের যে প্রয়োজন ছিল এদিন। ছিল না বলেই চির প্রতিদ্বন্দ্বি ভারতের কাছে এশিয়া কাপের গ্রুপ লড়াইয়ে হেরে গেছে পাকিস্তান।
Advertisement
দশম এশিয়া কাপের ৮ দলের মধ্যে র্যাংকিংয়ে সবার উপর ভারত। ম্যাচেও ছিল তারা ফেবারিট। দ্রুতগতির ও নান্দনিক হকি খেলে ভারত ৩২ বছর আগের প্রতিশোধ নিয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তান জিতেছিল ৩-১ গোলে। রোববার মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মর্যাদার লড়াইয়ে ভারত জিতেছে ৩-১ গোলে।
ভারত-পাকিস্তান লড়াই থেকে যে আনন্দ নিতে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েছিল দর্শক তারা সেটা পেয়েছে। কেবল এশিয়ারই নয়, বিশ্ব হকির দুই পরাশক্তির ম্যাচ আক্রমণ-পাল্টা আক্রমনে হয়ে উঠেছি প্রাণবন্ত। ৮৫’র সেই ফাইনালের মতো হয়ত গ্যালারি ভরা দর্শক ছিল না। তারপরও দুই দলের স্টিক যাদু ভাসানী স্টেডিয়ামে আলো ছড়িয়েছে।
ভারত খেলেছে গতিময় হকি। তাদের পাসগুলো ছিল নিঁখুত। মুহুর্তে প্রান্ত বদল করে তারা হানা দিয়েছে পাকিস্তান রক্ষণে। ফলটাও দ্রুত পেয়েছে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। ১৭ মিনিটে পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে গোল করে ভারতে এগিয়ে দেন কানগুজাম চিংলেনসানা।
Advertisement
৪৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রমনদ্বীপ সিং। তৃতীয় কোয়ার্টার খেলা শেষ হওয়ার আগমূহুর্তে ভারত তৃতীয় গোল করলে পাকিস্তান অনেকটাই ছিটকে পড়ে ম্যাচ থেকে। ভারতের ব্যবধান ৩-০ হয় হারমানপ্রিত সিংয়ের পেনাল্টি গোলে।
পাকিস্তানের শান আলীর নিশ্চয় ঘুম কম হবে আজ রাতে। তিনি দুইবার গোলরক্ষককে একা পেয়ে বল জালে পাঠাতে পারেননি। তবে ৪৯ মিনিটে পাকিস্তানের একমাত্র গোলটি তিনিই করেছেন। সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন দলের আরেক ফরোয়ার্ড মুহাম্মদ আতিকও। ২৮ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও সুযোগ নষ্ট করেছেন বল গায়ে মেরে।
তবে হারলেও তেমন অখুশি মনে হলো না পাকিস্তানের অধিনায়ক মোহাম্মদ ইরফানকে। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘ভালো একটা ম্যাচ খেলেছি আমরা। এ ধরনের ম্যাচে আগে গোল করা দলই সুবিধা পায়। ভারত সেটা পেরেছে, আমরা পারিনি। ওই না পারাটাই আমাদের চাপে ফেলে। তবে তৃতীয় কোয়ার্টার থেকে আমরা নিজেদের খেলাটা খেলতে পেরেছি। গোলও পেয়েছি। তবে ৩ গোলে পিছিয়ে পরায় ম্যাচে ফেরার সুযোগ কমে গিয়েছিল আমাদের।’
তবে এ ম্যাচটা নিয়ে আর ভাবতে নারাজ পাকিস্তানের অধিনায়ক। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রতি ম্যাচে আমাদের উন্নতি হচ্ছে। আমাদের এখন লক্ষ্য ফাইনাল খেলা।’
Advertisement
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারতের ডাচ কোচ সোয়ার্ড ম্যারিন বলেছিলেন, তিনি এ ম্যাচটিকে আর পাঁচ-দশটি ম্যাচের মতোই দেখছেন। মর্যাদার এ ম্যাচ জয়ের পর শিষ্যদের অবশ্য বলেছেন, পাকিস্তানকে হারানোই সব কিছু নয়। সামনে আরও ম্যাচ আছে। চ্যাম্পিয়ন হতে হলে সব ম্যাচ জিততে হবে।
জয়ের পরও শিষ্যদের প্রতি কড়া সূর ডাচ কোচ সোয়ার্ড ম্যারিনের। তিনি শিষ্যদের বলেন, ‘রিল্যাক্স হওয়া যাবে না। কাজ এখনও শেষ হয়নি। আরও দুটি ম্যাচ বাকি আছে। চ্যাম্পিয়ন হতে হলে সব ম্যাচ জিততে হবে।’
আরআই/এমএমআর/আরআইপি/জেআইএম