দেশজুড়ে

পদ্মা-যমুনায় ইলিশ ধরার মহোৎসব

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই মানিকগঞ্জে পদ্মা-যমুনায় চলছে ইলিশ ধরার মহোৎসব। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না মা ইলিশ ধরা। সুযোগ বুঝে নদীতে নামছে শত শত জেলে। তবে পেশাদারের চেয়ে মৌসুমি জেলের সংখ্যাই বেশি। কোথাও কোথাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের মদদ দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

মৎস্য অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার শিবালয়, দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মা-যমুনার অন্তত দেড়শ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মা ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র রয়েছে। এসব এলাকায় জেলেরা যাতে ইলিশ ধরতে না পারে এজন্য নিয়মিত অভিযান চলছে। অভিযানে প্রায় প্রতিদিন জেলে, জাল ও মাছ আটক হলেও থেমে নেই মা ইলিশ শিকার। এক শ্রেণির মুনাফা লোভী জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাকে ঝাকে ইলিশ।

শিবালয়ের জাফরগঞ্জ ও দৌলতপুর উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় নদীতে অসংখ্য ইঞ্জিন চালিত ট্রলার নিয়ে মাঝ ধরছেন জেলেরা। নদীর দুই পাশে বিভিন্ন পয়েন্টে মাছ কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন মানুষজন। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে চরে অস্থায়ী টংঘর তুলেছেন জেলে পরিবার গুলো। মাছ ধরার পর বিভিন্ন বাক্সে করে সেখানে বরফ দিয়ে রাখা হয়।পরে সুবিধা মতো সময়ে তা বিক্রি করা হয়।

আলোকদিয়া চরের বাসিন্দা আনজাম জানান, নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। জাল নিয়ে এক ঘণ্টা নদীতে নামলেই মিলছে এক থেকে দেড় মণ মাছ। এজন্য অনেক মৌসুমি জেলে প্রতিদিন মাছ ধরতে নামেন।নিষিদ্ধ সময় মাছ ধরতে অনেকেই আগে থেকে জাল ও নৌকা তৈরি করে রেখেছেন।

Advertisement

জাফরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আজাহার মিয়া জানান, ক্রেতাদের সঙ্গে জেলেদের ফোনে যোগাযোগ হওয়ার পর ফাঁকা জায়গায় মাছ নামিয়ে দিয়ে যান। এরপর ক্রেতা বিভিন্ন কৌশলে মাছ নিয়ে যান। মাছ কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতাদের মদদেই মাছ ধরতে নামেন অনেকে। বিনিময়ে তারা মাছ অথবা আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। কখনো ধরা পড়লে ছাড়ানোর জন্য প্রশাসনের কাছে তদবিরও করেন তারা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ও একই ইউনিয়নের মেম্বার মঞ্জুর রহমানের কাছে। তারা জানান, নিষিদ্ধ ইলিশ ধরার ব্যাপারে তাদের কোনো মদদ নেই বরং সরকারের এই কর্মসূচি সফল করতে তারা প্রশাসনকে নানা ভাবে সহযোগিতা করে আসছেন।

দৌলতপুরের উপজেলার চকমিরপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, দৌলতপুরে অবাধে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে।ভোরে এবং সন্ধ্যার পর শত শত মোটরসাইকেল যোগে নদীর পাড়ে ক্রেতা আসে। প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। কিন্তু প্রশাসনের তেমন তৎপরতা নেই।

Advertisement

তিনি বলেন, ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে উপজেলায় ফ্রিজের বিক্রি বেড়েছে। গত পনের দিনে দৌলতপুরে অন্তত্ব ৪০টি ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে।

মা ইলিশ ধরা ও বিক্রি, বিপণন বন্ধ করতে তিন উপজেলায় প্রায় প্রতিদিনই পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অফিসের যৌথ উদ্যোগে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত তিন উপজেলায় কয়েকশ জেলের জেল ও জরিমানা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ জাল ও মাছ। জাল পুড়িয়ে ফেলা হলেও মাছ গুলো বিভিন্ন এতিম খানা ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয় বলে জানান শিবালয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান,প্রয়োজনীয় লোকবল ও লজিস্টিক সার্পোট না থাকার কারণে প্রায়ই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় জেলেদের।মাঝে মধ্যে দু'একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনাও ঘটে।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল মোহাম্মদ রাশেদ জানান, নদীতে এবছর সবচেয়ে বেশি মাছ মিলছে। এ কারণে অসাধু মৌসুমি জেলেরা অভিযানের আগে ও পরে সুযোগ বুঝে নদীতে নামছেন। স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করা হচ্ছে। সবার সচেতনতা ও সহযোগিতা ছাড়া সরকারের এই অভিযান সফল করা সম্ভব নয়।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/এমএস