খেলাধুলা

চেনা তামিম-সাকিবের দেখা মিলবে এবার?

বলেই দেয়া যায়, তারা ফিরছেন। তারা মানে যে তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসান- তা বোধকরি আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। সেটা সহজেই অনুমেয়। তার মানে আগামীকাল কিম্বার্লিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম খেলায় বাংলাদেশ মাঠে নামছে দুই নিউক্লিয়াস তামিম ও সাকিবকে নিয়ে।

Advertisement

গত তিন চার বছরে সাফল্যের সিড়ি বেঁয়ে বেশ ওপরে উঠেছে মাশরাফির দল। সেটা কারো একার কৃতিত্বে নয়। একজনার তো নয়ই, দু-একজনার ব্যক্তিগত নৈপুন্যর ঝলকানিতেও নয়। উন্নতি ঘটেছে টিম পারফরমেন্সে। নজরকাড়া ও কার্যকর পারফরমারের সংখ্যা বেড়েছে।

এক সময় যে দল ছিল পুরোই তামিম, সাকিব আর মাশরাফি নির্ভর, সময়ের প্রবাহমানতায় সে ব্যক্তি নির্ভরতা কমেছে অনেক। ‘উইলিটি’ পারফরমারের সংখ্যা বেড়েছে। মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহর সংযোজন। এরাই ওয়ানডেতে পঞ্চপান্ডব বাংলাদেশ দলের।

আর মোস্তাফিজও একজন ম্যাচ উইনার বনে গেছেন। সাথে ইমরুল, সৌম্য, সাব্বির আর মিরাজও উঠে এসেছেন। সব মিলে এখন ওয়ানডেতে একটা ইউনিট গড়ে উঠেছে। দল হিসেবেও মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাশরাফি বাহিনী।

Advertisement

তারপরও তামিম-সাকিব এখনো দলের প্রাণশক্তি। অনেকের মতে চালিকাশক্তিও। সেটা আবেগতাড়িৎ কোনো সংলাপ নয়। আবার বাড়াবাড়িও নয়। তামিম ইকবাল টপ অর্ডার তথা ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টের অন্যতম নির্ভরতা।

আশার কথা, দুজনই ফিরছেন ওয়ানডে সিরিজে। খুব স্বাভাবিকভাবেই টেস্টের তুলনায় ওয়ানডে স্কোয়াডের ব্যাটিং ও বোলিং দুই ডিপার্টমেন্টই সমৃদ্ধ হচ্ছে। তামিম ও সাকিবের অন্তর্ভুক্তি মানেই দলগত শক্তির ভারসাম্য বেড়ে যাওয়া, পাশাপাশি স্থিতিশীলতাও আসা।

বাংলাদেশ ভক্তরা নড়েচড়ে বসেছেন। জিতবেন, সে আশায় নয়। টেস্টে দলটা যেমন অগোছালো ছিল, তার চেয়ে অনেক স্থিতিশীল- এই ভেবে সমর্থকরা আশার জাল বুনছেন। তাদের বিশ্বাস, তামিম ও সাকিব যখন আছেন, তখন আর যাই হোক ওয়ানডেতে টেস্টের মত ভরাডুবি ঘটবে না। ভাল কিছুই হবে।

গত কয়েক বছরে তামিম ও সাকিবের উজ্জ্বল ও কার্যকর পারফরমেন্সের কারণেই সমর্থকদের বিশ্বাস ও আস্থা দুই’ই বেড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গিয়ে তামিম ও সাকিব সিরিজ ঘুুরিয়ে দেবেন, তাদের দুজনার পারফরমেন্সে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতে যাবে- এমন কথা জোর দিয়ে বলা না গেলেও পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, তামিম ও সাকিব দল জেতানোর সামর্থ রাখেন।

Advertisement

বিশ্বের প্রায় প্রতিষ্ঠিত শক্তির বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারনী বা ম্যাচ জেতানো ভুমিকা রাখলেও অবাক করা সত্য হলো তামিম ও সাকিব কখনই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা উপহার দিতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে দু’জনার কারো পরিসংখ্যানই ভাল না।

বেশী দুর যাবার দরকার নেই। তামিম ও সাকিবের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরিসংখ্যানের তুলনা করলেই বেরিয়ে আসবে দু’জনই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অনুজ্জ্বল।

শুনলে অবাক হবেন , ১৭৩ ম্যাচের ১৭১ ইনিংসে যার রান ৫৭৪৩, সেঞ্চুরি ৯টি আর হাফ সেঞ্চুরি ৩৮টি- সেই তামিম ইকবালের দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ১০ ম্যাচে রান মাত্র ২৬৪। কোন সেঞ্চুরি বহদুওে থাক, হাফ সেঞ্চুরি মোটে দুটি। সর্বোচ্চ ৮২।

এখানেই শেষ নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও পরিসংখ্যান খারাপ; দুই ম্যাচে ৬৫। সর্বোচ্চ ৪১। ২০০৭ সালের ৭ এপ্রিল প্রভিন্সে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে প্রথম খেলায় ৩৮ রান করা তামিম প্রোটিয়াদের সাথে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন ঘরের মাঠে ২০০৮ সালের ৯ মার্চ, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।

প্রথম অর্ধশতক। প্রোটিয়াদের সাথে সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৬১*। ওই সিরিজের শেষ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির আগের দুই ইনিংসে তার স্কোর ছিল ০ ও ৫। তারপর ২৩ ম্যাচ খেললেও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে আর খেলা হয়নি।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারে রেকর্ড আর পরিসংখ্যান নতুন করে ঘাটাঘাটির কিছু নেই; কিন্তু পরিসংখ্যান জানাচ্ছে অতি কাকতালীয়ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে বন্ধু তামিমের অবস্থা সাকিবেরও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১০ খেলার নয় ইনিংসে সাকিবের সংগ্রহ ২২৫ রান । সেঞ্চুরি নেই। হাফ সেঞ্চুরি মোটে দুটি। সর্বোচ্চ ৫২। গড় ২৮.১২। স্ট্রাইকরেট ৬১.৮১ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগে খেলা দুই ম্যাচে সাকিবের রান ৬৮। সর্বোচ্চ ৫২।

প্রথম হাফ সেঞ্চুরি ২০০৮ সালের মার্চে ঢাকার শেরে বাংলায় ৫২ (৯৭ বলে)। দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি ২০০৮ সালের ৭ নভেম্বও পচেফস্ট্রমে ৫১। আর দুই বছর আগে ২০১৫ সালের জুলাইতে শেষ তিন ম্যাচের সিরিজে দুই বার ব্যাট করে ৪৮+০*। আর একবার ব্যাট পাননি।

বাংলাদেশের সেরা বোলিং অস্ত্র সাকিব বিস্ময়করভাবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অনুজ্জ্বল। ১০ খেলায় তার ঝুলিতে জমা আছে ১০ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ৩/৩৩। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও একই অবস্থা; দুই ম্যাচে ২ উইকেট। সেরা ২/৪৮।

সারা বছর অন্য দলগুলোর সাথে যেমন দ্যুতি ছড়ান, দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে আগে তা পারেননি। এবার টেস্টে ভীষণ খারাপ খেলা বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে টেনে তুলতে যে তামিম-সাকিবের আগের চেয়ে ভাল খেলা জরুরি।

তামিম ও সাকিব কি তা পারবেন? তাদের পারা ও চিরচেনা রুপ যে খুব জরুরি!

এআরবি/আইএইচএস/আরএস