বিশেষ প্রতিবেদন

সংলাপে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা’ চাইবে বিএনপি

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য সংলাপে দলের প্রস্তাবনার খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। আগামীকাল রোববারের (১৫ অক্টোবর) সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হবে।

Advertisement

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তাই ইসির সঙ্গে সংলাপের মূল লক্ষ্য হবে বিএনপির।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপের সম্ভাব্য রূপরেখা ও প্রস্তাব নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। ওই বৈঠকেই প্রস্তাবনার খসড়া তৈরি করে লন্ডনে অবস্থিত দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন তারেক রহমানের কাছে পাঠান হয়।

পরবর্তীতে মা ও ছেলে দলের শীর্ষ নেতাদের প্রস্তাবনার খসড়া কিছুটা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে তা চূড়ান্ত করেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক সদস্য সম্প্রতি লন্ডনে যান। ওই সদস্যের উপস্থিতিতেই প্রস্তাবনাগুলো চূড়ান্ত করা হয় বলে জানা গেছে।

Advertisement

ইসির সঙ্গে সংলাপে বিএনপি নেতাদের মধ্যে কারা অংশ নেবেন সে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির ওই নেতাকে।

ইসির সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য সংলাপের প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজ’র। তারা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসিকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকায় দেখতে চায় বিএনপি। তাদের অভিমত, দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন যদি কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের ভূমিকা না নেয়, তারা যদি পুরোপুরি সংবিধান ও আইনের অধীন থাকে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ অনেকটাই সহজ হবে। ইসির সঙ্গে আগামীকালের সংলাপে তারা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন।

তত্ত্বাবধায়কের দাবি থেকে সরে আসা বিএনপি এবার নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়টি নিয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনা করবে। যদিও বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এরপরও তারা বিষয়টি ইসির সঙ্গে সংলাপে উপস্থাপন করবেন। পাশাপাশি বিএনপির প্রস্তাবনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে থাকছে নির্বাচনের সাতদিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন, নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ভোটার অনুপাতে সংসদীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস, সেক্ষেত্রে নবম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিদ্যমান পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া, ইভিএম বাতিল করা, নির্বাচনে অবৈধ অর্থ, কালো টাকা ও পেশীশক্তির ব্যবহার বন্ধ করা, নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং ভোট গণনার পদ্ধতি আরও আধুনিক করা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির প্রস্তাবনার শিরোনাম হচ্ছে ‘নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে করণীয়’। প্রস্তাবনার ভূমিকায় নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের কথা উল্লেখ থাকবে। এরপর নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ এবং আরপিওসহ অন্যান্য নির্বাচনী বিধিবিধান সময়োপযোগী ও যৌক্তিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে।

Advertisement

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও তাদের ভূমিকা কেমন হবে- তা নিয়ে ইতোমধ্যে দলটির অবস্থান অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। দলটির নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তনের স্লোগানসংবলিত ‘ভিশন-২০৩০’- এ নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আগেও দলটি এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব দিয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ইসির সঙ্গে সংলাপে দলের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিভিন্ন ধারা সংশোধন, আসন পুনর্বিন্যাস, ইভিএম বাতিল, সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হবে।

তবে বিএনপির এই নেতা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয় হচ্ছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। ইসি যে রোডম্যাপই ঘোষণা করুক না কেন কিংবা যে আলোচনাই করা হোক না কেন, সহায়ক সরকার ছাড়া সবই হবে অর্থহীন। সহায়ক সরকারের ফায়সালা হতে হবে সবার আগে।

ইসির সঙ্গে রোববারের সংলাপে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে অংশ নিতে পারেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক সচিব আবদুল হালিম, ক্যাপ্টেন সুজাউদ্দিন, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ড. মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ।

এমএম/এমএআর/আরআইপি