বনি ইসরাইলের নবি হজরত শিমবিল তালুতকে বাদশাহ নির্বাচন করেন। তালুত বাদশাহ নির্বাচিত হওয়ার সত্যের পক্ষে অত্যাচারী শাসক জালুতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
Advertisement
বনি ইসরাইলের ৮০ হাজার সৈন্যবাহিনীর মধ্য থেকে ৭৬ হাজার সৈন্য যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকে। তালুত অল্প সংখ্যক লোক নিয়ে অত্যাচারী শাসক জালুতের মোকাবেলা করে।
হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম বাদশাহ তালুতের সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে ছিলেন। তিনিই জালুতকে হত্যা করেন। যুদ্ধের পর আল্লাহ তাআলা হজরত দাউদকে বাদশাহী ও নবুয়ত দান করেন। যা সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
আয়াতের অনুবাদ
Advertisement
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণসুরা বাকারার ২৫১নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা জালুতের পরাজয়; দাউদ আলাইহিস সালাম কর্তৃক জালুতের হত্যা এবং দাউদ আলাইহিস সালামের নবুয়ত ও বাদশাহী লাভ সম্পর্কিত তথ্য ঘোষিত হয়েছে।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপথী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন, ‘হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম তখন অল্প বয়স্ক যুবক ছিলেন। তিনি বকরি চড়াতেন। তিনি তাঁর পিতা এবং তাঁর ১৩জন ভাইসহ তালুতের সৈন্যবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। তাঁদের নবির কাছে আল্লাহ তাআলা ওহি প্রেরণ করেন যে, এ যুবকই জালুতকে হত্যা করবে।
হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম যখন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন, তখন পথে তিনটি পাথরকে আল্লাহ তাআলা কথা বলার শক্তি প্রদান করেন। পাথর বালক দাউদ আলাইহিস সালামকে লক্ষ্য করে বলে যে, ‘আমাদেরকে ওঠিয়ে নাও; কারণ তুমি আমাদের দ্বারাই জালুতকে হত্যা করবে।
তাই বালক দাউদ আলাইহিস সালাম পাথরগুলো সঙ্গে নিয়ে নেন।
Advertisement
তালুত হজরত দাউদকে একটি ঘোড়া, একটি লৌহ বর্ম ও একটি তরবারি দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ না করে বললেন, ‘যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে সাহায্য না করেন তবে এ সব বস্তু আমার কোনো কাজে আসবে না। এ জন্য তিনি ওই সব বস্তু সেখানেই রেখে দিলেন এবং ঐ পাথরগুলো নিয়ে দুশমনের দিকে অগ্রহস হলেন।
হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম বেঁটে এবং অসুস্থ ছিলেন। তাঁর বর্ণ ছিল হলুদ। শক্তিশালী জালুত যখন তাকে দেখলেন, তখন বললেন, তুমি কি আমাকে হত্যার জন্য পাথর নিয়ে এসেছ? যেমন মানুষ কুকুরকে পাথর দ্বারা মারে।
হজরত দাউদ বললেন, ‘হ্যাঁ’, তুমি তো কুকুরের চেয়ে নিকৃষ্ট। অতঃপর তিনি বিসমি এলাহি, ইবরাহিমা ওয়া ইসহাকা ওয়া ইয়াকুব’ বলে তিনটি পাথর একসঙ্গে জালুতের কপাল লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেন। এতে জালুত নিহত হয়।
এ আয়াতে তা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দাউদ জালুতকে হত্যা করে।’ বাদশাহ তালুতের মৃত্যুর পর আল্লাহ তাআলা দাউদ আলাইহিস সালামকে বাদশাহী এবং নবুয়ত দান করেন। আরs বাদশাহ তালুত তাঁর মেয়েকে হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের কাছে বিবাহ দেন।
উল্লেখিত আয়াতে ‘হেকমত’ শব্দটির দ্বারা তাফসিরকারকগণ নবুয়ত বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা হজরত দাউদ আলাইহিস সালামকে বাদশাহী ও নবুয়ত দান করেছেন।
বনি ইসরাইলের মধ্যে প্রথম হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম-ই বাদশাহী ও নবুয়ত লাভ করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর যাবুল কিতাব নাজিল করেন।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি মানুষের মধ্যে একজন দ্বারা অন্যজনকে দমন না করতেন; তবে পৃথিবীতে অশান্তি বিরাজ করতো। যেমন অত্যাচারী শাসক জালুতকে দমন করা হয়েছে বাদশাহ তালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর দ্বারা।
এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ‘জেহাদের বিধান প্রবর্তনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানব জাতির বিশেষ কল্যাণ সাধন করেছেন।’
পড়ুন- সুরা বাকারার ২৫০ নং আয়াত
পরিশেষে...
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীনে ইলাহির ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানানোর মাধ্যমে ইসলামের বিধানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইসলাম পূর্ব নবি-রাসুল ও বাদশাহদের ইতিহাস ও ঘটনা হোক মুসলিম উম্মাহর জন্য উত্তম শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। কুরআনের বিধান বাস্তবায়নের তাওফিক এ জাতিকে দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস