গঠনতন্ত্র ও সংশোধিত গঠনতন্ত্র নিয়েই যত কথা। ২০০৮ এর গঠনতন্ত্র না ২০১২ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্র? কোন গঠনতন্ত্রে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে মতভেদ। বিষয়টি গড়িয়েছিল আদালতেও। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র আদালতে গড়ানোর পরও ভেতরে ভেতরে বিসিবির নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছিল।
Advertisement
এখন নতুন নির্বাচনে আর কোন আইনি বাধা নেই। তাই বিসিবির নির্বাচনের ডংকা বাজছে জোরে সোরেই। শুধু নির্বাচন কমিশন গঠনই নয়, তফসিল ঘোষণাও শেষ। বোর্ড নির্বাচনের দিন তারিখও চূড়ান্ত। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩১ অক্টোবর বোর্ড পরিচালক পর্ষদের নির্বাচন। বিসিবির নির্বাচন নিয়ে নানা কথা, আলোচনা-পর্যালোচনা প্রায় তিন মাস ধরেই চলছে। নানা হিসেব নিকেশ ও সমীকরণও মোটামুটি তৈরি। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার মুহুর্ত থেকে বিসিবির নির্বাচন প্রক্রিয়া পেল আনুষ্ঠানিক রূপ। এতদিন কাউন্সিলরশিপ মনোনয়নের কাজ চলছিল নিরবে ও নিভৃতে। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে তা সরব হয়েছে।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে নির্বাচন কমিশন বিসিবি নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার ক্লাব পাড়া, জেলা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা এবং সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্ববিদ্যালয়, সার্ভিসেস, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিভিন্ন জায়গায় বোর্ড নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে। তবে যত তোড়জোরই থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত বিসিবি পরিচালক পর্ষদের তিন ক্যাটাগারিতে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে আছে বড় ধরনের সংশয় ও সন্দেহ।
প্রসঙ্গত, ক্যাটাগরি ২ মানে ঢাকার প্রিমিয়ার (১২ ক্লাবের একজন করে আর সুপার লিগ খেলা ছয় দল থেকে দু'জন করে, মোট ১৮ জন) লিগ প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ মিলে মোট ৫৮ ক্লাব কাউন্সিলরের ভোটে ১২ জন পরিচালকের নির্বাচিত হবার কথা। যেখানে খোদ বর্তমান বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও আছেন।
Advertisement
যদিও আগের নির্বাচনে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটার কাউন্সিলর ছিলেন। তবে এবার তিনি দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া শক্তি জনপ্রিয় আবাহনী লিমিটেডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করবেন। অতি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে আবাহনীর কাউন্সিলরশিপ চূড়ান্ত। আকাশী হলুদ শিবিরের একন নম্বর কাউন্সিলর নাজমুল হাসান পাপন আর দ্বিতীয় জন শায়ান এফ রহমান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে ঢাকার ৫৮ ক্লাব কোটায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ এই ৫৮ ক্লাবের প্রায় ৯৫ ভাগ ক্লাব কাউন্সিলর নাজমুল হাসান পাপনের একান্ত অনুসারি। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাজমুল হাসান পাপন ও তার অনুসারিদের বিরোধী বলে যারা পরিচিত তারা কেউই নির্বাচন করবেন না।
গতবার বোর্ড নির্বাচন করার ইচ্ছে ছিল সাবেক বিসিবি প্রধান সাবের হোসেন চৌধুরীর। ইচ্ছে প্রকাশ করেও শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে দাঁড়াননি। এবারও কাইন্সিলরশিপ এর চিঠি পাওয়া নিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তবে শেষ খবর, তার নির্বাচন করার সম্ভাবনা শুন্যের কোঠায়। এছাড়া মাঝে এক সময় বোর্ডের সাবেক শীর্ষ কর্তা, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সরকারি দলের সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দাস্তগীরের নির্বাচন করার কথা শোনা গিয়েছে। যদিও তা নিছকই গুঞ্জন। জানা গেছে তিনিও নির্বাচন করছেন না। তবে তার ছেলে গাজী গোলাম মোর্তজা পাপ্পা বর্তমান বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের প্যানেলর অন্যতম প্রার্থী।
Advertisement
ঢাকার ক্লাব কোটায় যারা নির্বাচন করবেন না, সেটা যে ইচ্ছে করে, তা নয়। হাতে কাউন্সিলর নেই তাই। কারণ গত কয়েক বছর নানা প্রক্রিয়ায় ঢাকার ক্লাব কাউন্সিলরশিপ এখন নাজমুল হাসান পাপন ও তার অনুসারিদের পকেটে। ঢাকার ক্লাব গুলো থেকে যে ৫৮ জন কাউন্সিলর হবেন তার মধ্যে পাপন বিরোধি কেউ নেই বললেই চলে। যেহেতু কাউন্সিলরশিপ নেই, তাই নির্বাচনে দাঁড়ানোর মত অবস্থাও নেই। তাই ধরেই নেয়া যায়, বর্তমান বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন একরকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। শুধু নাজমুল হাসান পাপন একা নন, তার বর্তমান প্যানেলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা মাহবুব আনাম, এনায়েত হোসেন সিরাজ, আফজালুর রহমান সিনহা, জালাল ইউনুস, লোকমান হোসেন, হানিফ ভূইয়া, নজিব আহমেদ ও গাজী গোলাম মোর্তজা পাপ্পার ক্লাব কোটায় বিনা নির্বাচনে নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা প্রচুর।
বর্তমানে ঢাকার ক্লাব কোটায় থাকা বাকি পরিচালকদের মধ্যে কয়েকজন থাকছেন না। এর মধ্যে কলাবাগানের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত নাজমুল করিম টিংকু পরলোকে। তাই তার জায়গায় নতুন একজনকে দেখা যাবে। একই ভাবে ইয়াং পেগাসাস ক্লাবের আহমেদ ইকবাল হাসানও বেশ কিছু দিন বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্ক নেই । তারও নির্বাচন করার সম্ভাবনা শুন্যের কোঠায়।
এছাড়া পারটেক্স স্পোর্টিংয়ের শওকত আজিজ রাসেল আর প্রাইম ব্যাংক ক্লাবের তানজিল চৌধুরীর বিষয়টিও চূড়ান্ত নয়। তাদের থাকা নিয়ে দুরকম কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন তারা দুজনই থাকবেন আবার একপক্ষের দাবি, তানজিল চৌধুরী থাকলেও শওকত আজিজ রাসেলের না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তাদের জায়গায় নাজমুল হাসান পাপন সমর্থিত কাউন্সিলরদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ প্রার্থী হবেন। তাদেরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
আর যদি কেউ দাঁড়িয়েও যান, তাতেই হয়ত সমস্যা হবেনা। কারণ ৫৮ ভোটারের ৫০ বা তার বেশি নাজমুল হাসান পাপনের প্যানেল ভোটই আছে। কাজেই ধরেই নেয়া যায় আবারও নাজমুল হাসান পাপন ও তার সমর্থিত প্যানেল আগামীতেও বিসিবি পরিচালনা পর্ষদ পরিচলানায় থাকতে যাচ্ছে।
তবে ঢাকার ক্লাব ক্যাটাগরিতে নির্বাচন না হলেও অন্য দুই ক্যাটারি মানে জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, সাবেক ক্রিকেটার, সার্ভিসেস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটায় নির্বাচন হবার সম্ভবনা বেশি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বাধীক চার-পাঁচ জনের নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। এই বিভাগে আছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। মানিকগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার মনোনীত কাউন্সিলর হয়ে এই ক্যাটাগরিতে নির্বাচন করার কথা নাইমুর রহমান দুর্জয়ের।
এদিকে ঢাকা বিভাগে নাইমুরের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এরই মধ্যে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলে নারায়নগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক টিটু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম তনয় ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদাক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট ভাই।
এদিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিচিত মুখ আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির বোর্ডে থাকা না থাকা নিয়েও আছে কানাঘুষা। সেই আশির দশক থেকে আবাহনী তথা দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত এ অন্তঃপ্রাণ ক্রিকেট সংগঠক বর্তমান বোর্ডে অনেকটাই নিগৃহীত। বোর্ডের পরিচালক হলেও বর্তমানে কোন গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটিতে নেই ববি। তাই তার আগামী দিনে বোর্ড পরিচালনা পর্ষদে তার থাকা নিয়ে জেগেছে সংশয়।
তবে একদম ভেতরের খবর, শেষ পর্যন্ত আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি থাকবেন। সরকারের উচ্চ মহল থেকেই নাকি তার বোর্ডে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। যদি তাই হয়, তাহলে হয়তো ববির একটা হিল্লে হবে। না হয় দীর্ঘ দিন পর তার জায়গা হবে বোর্ডের বাইরে। এছাড়া নাজমুল হাসান পাপনের স্বজন বলে পরিচিত ও কাছের মানুষদের প্রায় সবাই তার প্যানেলে থাকা একরকম নিশ্চিত।
এআরবি/এমআর/এমএস