বিশেষ প্রতিবেদন

হাত বদলে ডিমের দাম বাড়ে ১ টাকা

রাজধানীতে আড়ত থেকে পাইকারি বিক্রেতার হাত ধরে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায় ডিম। মাঝখানে একই ডিম হাত বদল হয় বেশ কয়েকবার। এভাবে হাত বদলে প্রতি ডিমে বাড়ে এক টাকা করে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

Advertisement

অবশ্য ভোক্তারা চাইলে পাইকারি বিক্রেতা ও আড়ত থেকেও ডিম কিনতে পারেন। পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ডজন ও হালিতে ডিম কেনা যায়। তবে আড়ত থেকে নিলে সর্বনিম্ন এক খাঁচি (প্রতি খাঁচিতে ডিম থাকে ৩০টি) কিনতে হয়।

বুধ ও বৃহস্পতিবারের বাজার মূল্য অনুযায়ী, আড়তে এক খাঁচি ডিমের দাম ১৬০-১৮০ টাকা। অর্থাৎ একটি ডিমের দাম ৫ টাকা ৩৩ পয়সা থেকে ৬ টাকা। আড়ত থেকে এনে পাইকরি বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৭ টাকা পিস। আর খাঁচি ধরে নিলে খাঁচিতে ১০ টাকার মতো দাম কম রাখা হয়।

আর খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের কাছে একটি ডিম বিক্রি করছেন ৮ টাকা দরে। এক হালি বা এর বেশি নিলে রাখা হচ্ছে ৩০ টাকা। অবশ্য মহল্লার গলির দোকানগুলোতে ক্ষেত্রবিশেষে একটি ডিম ৯ টাকায় দামেও বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে যারা ৩০ টাকা হালি ডিম বিক্রি করছেন, তাদের একটি অংশ সরাসরি আড়ত থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন। আর ৯ টাকা দাম রাখা বিক্রেতাদের বড় অংশ ডিম সংগ্রহ করেন পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে।

রামপুরা বৌ-বাজারে পাইকারি ডিম বিক্রে করেন মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা খুব বেশি লাভ করি না। সীমিত লাভে ছেড়ে দেই। আমাদের প্রধান কাস্টমার (ক্রেতা) মহল্লার দোকানদার ও হোটেল মালিকরা। এসব ব্যবসায়ীর কাছে আমরা খাঁচি ধরে ডিম বিক্রি করি। তাবে কেউ খাওয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে হালি বা এক-দুই পিস ডিমও কিনতে পারেন। সবার জন্যই আমাদের কাছে সমান দাম। হালি বা পিস হিসেবে নিলে একটি ডিমের দাম পড়বে ৭ টাকা। আর খাঁচি ধরে নিলে ১০ টাকা কম রাখা যাবে।

কোথা থেকে ডিম সংগ্রহ করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এ ব্যবসায়ী বলেন, রামপুরা কাঁচাবাজারের পাশেই ডিমের বড় ব্যবসায়ী আছেন। এছাড়া কারওয়ানবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে বড় ব্যবসায়ীরা আছেন। এসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই আমরা ডিম সংগ্রহ করি।

রামপুরা কাঁচাবাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. আল-আমিন বলেন, আমরা হালি বা ডজন হিসেবে ডিম বিক্রি করি না। আমাদের কাছ থেকে ডিম নিতে হলে খাঁচি ধরে নিতে হয়। আকারের ওপর নির্ভর করে ফার্মের মুরগির এক খাঁচি ডিমের দাম পড়বে ১৬০-১৮০ টাকা।

Advertisement

কারওয়ানবাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, গত সপ্তাহে আমরা এক খাঁচি ডিম বিক্রি করেছি ১৪০-১৫০ টাকায়। এখন দাম কিছুটা বেড়েছে। বড় আকারের লাল ডিমের খাঁচি ১৮০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের কাছ থেকে এই ডিম কিনেই খুচরা বিক্রেতারা ৭-৮ টাকায় বিক্রি করেন।

যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার সংলগ্ন মার্কেটে পাইকারি ডিম বিক্রেতা মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, এখন ডিমের দাম একটু বেশি। আড়ত থেকে আমাদের বেশি দামে ডিম সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাই বিক্রি করতে হচ্ছে একটু বেশি দামে। কিছুদিন আগেও এক হালি ডিম ২৪ টাকা এবং ডজন ৭০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন হালি ২৮ এবং ডজন ৮২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে রামপুরার জামতলা মহল্লার মুদি দোকানি মো. ইমরান এবং উত্তর যাত্রাবাড়ী খালপাড়ের মো. ইব্রাহিমের কাছে ডিমের দাম জানতে চাইলে তারা প্রতি পিস ডিমের দাম চান ৮ টাকা।

খাঁচি ধরে পাইকারি দোকান থেকে কিনলে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ে ৬ টাকা, তাহলে আপনি ৮ টাকা নিচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্ন করা হলে ওই দুই ব্যবসায়ী বলেন, খাঁচি ধরে ডিম কিনলে অনেক সময় একটা-দুটা নষ্ট ডিম পাওয়া যায়। আবার দু-একটা ভেঙেও যায়। এগুলো তো ব্যবসায়ীরা ফেরত নেন না। যে কারণে আমাদের একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে এতে আমাদের খুব বেশি লাভ হয় না।

এমএএস/একে/এমএআর/বিএ