বাংলাদেশের কোথাও নকল ডিমের অস্তিত্ব নেই (পাওয়া যায়নি) বলে দাবি করছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)। দীর্ঘ গবেষণার পর বাংলাদেশ থেকে কোনো ধরনের নকল ডিম কিংবা এ ধরনের ডিম তৈরির উপাদান খুঁজে পায়নি সংস্থাটি।
Advertisement
কয়েক মাস ধরে দেশের পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নকল ডিম বিক্রির খবর এবং বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নকল ডিমের অস্তিত্বের সন্ধান শুরু করে বিএলআরআই। এসময় দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা, সীমান্তবর্তী বাজার এবং ঢাকার কয়েকটি পোলট্রি বাজার থেকে মোট তিন হাজারের বেশি ডিম সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো পরীক্ষা করে নকল ডিমের অস্তিত্বের প্রমাণ পায়নি সংস্থাটি।
সম্প্রতি রাজশাহীতে একটি ডিম সিদ্ধ করার পর অমসৃণ হতে দেখা যায়। অস্বাভাবিক আকৃতি দেখে এটি ‘কৃত্রিম’ মনে করে রাজশাহীর সর্বত্র নকল ডিমের অস্তিত্বের গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে বিএলআরআই’র এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দীর্ঘ অনুসন্ধানে কোথাও নকল ডিমের অস্তিত্ব মেলেনি। অনুসন্ধানে মুরগির কিছু ‘অদ্ভুত’ বা ‘অ্যাবনরমাল’ ডিম পাওয়া গেছে। তবে এটি স্বাভাবিক। কারণ একটি মুরগি তার জীবনকালে শতকরা দুই ভাগ অ্যাবনরমাল ডিম পাড়ে। সেগুলো দেখে নকল ডিম মনে করার কোনো কারণ নেই।
Advertisement
বিএলআরআই’র সংজ্ঞা অনুযায়ী, ডিমের পাতলা খোসা, আঁকাবাঁকা গঠন ইত্যাদি অ্যাবনরমাল ডিম হতে পারে। অনেক সময় ডিমের ভেতরের সাদা অংশের (অ্যালবুমিন- বিশেষ ধরনের প্রোটিন) সঙ্গে কুসুম মিশে গেলে একে নকল ডিম মনে করা হয়। তবে বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, মুরগি ডিম পাড়ার পর থেকে এটি দীর্ঘদিন খামার ও দোকানে থাকায় হিউমিডিটির (আর্দ্রতা) কারণে নষ্ট হয়ে যায়। একে নকল ডিম মনে করে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মাহফুজুল হক বলেন, ভারত ও মিয়ানমারে এ ধরনের ডিম পাওয়া যাচ্ছে বলে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে আমরা এ ধরনের ডিম এখনও পাইনি।
আসল-নকল ডিম নিয়ে কারও মনে সন্দেহ থাকলে ডিমের নমুনা নিয়ে বিএলআরআই, সাভারে গিয়ে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভারত ও মিয়ানমারে নকল ডিম উৎপাদনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সেসব ডিমের সাদা অংশ তৈরি করতে বেনজরিক এসিড, জেলি, অজানা রাসায়নিক গুঁড়া এবং আকৃতি তৈরিতে বেকারির রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কুসুম তৈরি করা হয় অজানা হলুদ গুঁড়া ও তরল পদার্থের সংমিশ্রণে। পরে এ মিশ্রণের সঙ্গে ম্যাজিক ওয়াটার মেশানো হয়।
Advertisement
ম্যাজিক ওয়াটারে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড থাকে। খোসার অংশটি তৈরি করা হয় মোম (এতে প্যারাফিন থাকে) এবং আরও বেশ কিছু রাসায়নিকের মিশ্রণে। এসব ডিম্বাকৃতির প্লাস্টিকের খোলসে পুরে শুকিয়ে নেয়া হয়, যা দেখতে অবিকল আসল মুরগি বা হাঁসের ডিমের মতো মনে হয়।
এ বিষয়ে জানতে আদি নারিশ পোলট্রি ফার্মের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশে কোনো নকল ডিম নেই। থাকলে সেগুলো ভারত থেকে আনা। আমাদের ব্যবসা ক্ষতি করার জন্য ভারতের ব্যবসায়ীরা নকল ডিমের গুজব ছড়াচ্ছেন।
তিনি ভ্রান্ত গুজবে কান না দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
এআর/এমএআর/বিএ