সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনকে কোনো রাজনৈতিক দলের শাখা হতে দেয়া হবে না মন্তব্য করছেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।
Advertisement
তিনি বলেন, প্রয়োজনে বারে সাধারণ সভা করে সভাপতি সম্পাদককে প্রতিহত করা হবে। পরিষদ থেকে তাদের বিতাড়িত করা হবে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সিমিতির উত্তর হলে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার ছুটিতে যাওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পক্ষে- বিপক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপি ও জামায়াতপন্থীরা।
Advertisement
দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সিমিতির উত্তর হলে আদালত অঙ্গনকে রাজনীতিকরণ এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
অন্যদিকে একই সময়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সিমিতি ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের উত্তর হলে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভায় আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ন বলেন, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সিমিতি (বারকে) কর্মসুচি করতে দেয়া হবে না। যে উদ্দেশ্য তারা রাজনীতি করছে সেটা করতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পবিত্রতা রক্ষায় যা যা করা দরকার তাই করা হবে। সভায় আগামীকাল বুধবারে আবারো মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ:
Advertisement
সমাবেশে ইউসুফ হোসেন হুমায়ন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের প্রধান বিচারপতি অসুস্থতার জন্য ছুটিতে গেলেন সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। আমরা সবাই জানি ছয় বছর ধরে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। বিদেশে চিকিৎসাও নিয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু এই ছুটি নিয়ে রাজনীতি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে আইনজীবী সমিতি রাজনীতি করছে সেটা করতে দেয়া হবে না। আমরা সুপ্রিম কোর্টের পবিত্রতা রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তাই করবো। আগামীকাল বুধবার দুপুর ১টায় মানববন্ধন হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই বারে কোনো কর্মসূচি করতে দেয়া হবে না।
সমাবেশে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আগামী দিনে আমাদের ভিতর আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক কে নির্বাচন করবে তা এখন থেকে ঠিক করে নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, এই অফিসে (আইনজীবী সমিতি) তাদেরকে কোনোমতে আর ঢোকতে দেয়া উচিত হবে না। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য তারা এসব করছে। তাদের এই উদ্দেশ্য কোনো মতেই সফল হতে দেয়া যাবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে তাদেরকে প্রতিহত করতে আহ্বান জানান তিনি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মতিন খসরু বলেন, অপরাধ করলে বিচার যদি না হয় তাহলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়। ২০১৪ সালে বিএনপি দিনে দুপুরে যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে কেন তার বিচার হবে না। তাদেরই দোষরাই বারে অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়েছেন। আমি ওনার দরখাস্ত দেখেছি। সেখানে ওনি বলেছেন দীর্ঘ দিন তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলাম। আমার বিশ্রাম প্রয়োজন। তিনি বিশ্রামের জন্য এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। অথচ বিএনপির আইনজীবীরা বানিয়েছে সরকার নাকি জোর করে তাকে ছুটিতে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা তো এসকে সিনহাকে চিনি। ওনি কারো চাপে দরখাস্ত দেবেন এটা হতে পারে না। ওনি যে ক্যান্সারে আক্রান্ত এটা সবাই জানে।
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি-জামায়াত আইনজীবীরা একটা অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। সে অরাজকাত হলো এখানে বসে রাজনীতি করার উদ্দেশ্য। আমি তাদেরকে অনুরোধ করি, আইন অঙ্গনকে কলুষিত করবেন না। আমাদের দুইজন আইনজীবী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন, তাদের কাছ থেকে ওনার স্বাস্থ্যের খবরটা নেন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ফজলে নূর তাপস বিএনপিকে নালিশ পার্টি অ্যাখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আপনাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ তিন মাস ধরে দেশের বাইরে। আমরা জানতে চাই তিনি সুস্থ না অসুস্থ। প্রয়োজন হলে আমরা এখান থেকে তার সঙ্গে সাক্ষাতে ডেলিগেশন পাঠাবো। তার সুস্থ্যতার বিষয়ে জাতি জানতে চায়। সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনকে আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের শাখা হতে দেব না। প্রয়োজন বারের সাধারণ সভা করে সভাপতি সম্পাদককে প্রতিহত করবো। পরিষদ থেকে তাদের বিতাড়িত করবো।
সমাবেশে সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, শম রেজাউল করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডাভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, যে দেশে বিচার ব্যবস্থা থাকে না সে দেশে স্বাধীনতাও থাকে না। তিনি প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে সুপ্রিম কোর্টে ফিরিয়ে আনা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি বিদেশে যাবেন না। আপনার সঙ্গে সারা দেশের মানুষ আছে। সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধান বিচারপতি আজকে গৃহবন্দি। আমরা মনে করি, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাও আজ গৃহবন্দি। আমরা আশা করেছিলাম, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবেন। আমরা এখনও তা আশা করছি। তিনি অভিযোগ করেন, আজকে সংবিধানের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমাদের হৃদয়ে। যারা এই রক্তক্ষরণের সঙ্গে জড়িত, এই দায়ভার তাদের নিতে হবে। এফএইচ/এএইচ/এমএস