দেশজুড়ে

পথের দিকে চেয়ে থাকি এই বুঝি তিনি এলেন

‘ভাই, আমার স্বামী আজ ১৭ দিন ধরে নিখোঁজ। প্রতিদিন পথের দিকে চেয়ে থাকি এই বুঝি স্বামী ফিরে এলেন। আমার সন্তান দুটোও বাবার জন্য অপেক্ষায় দিন গোনে। ওকে হারিয়ে আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়েছি। আজ কেউ আমাদের পাশে নেই।` শনিবার দুপুরে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিখোঁজ ব্যবসায়ী মিরাজুল হক মিরাজের স্ত্রী সখি খাতুন। সংবাদ সম্মেলনে সখি খাতুন লিখিত বক্তব্যে জানান, কুমারখালী উপজেলার জয়নাবাদ এলাকায় গড়াই নদীর পাশে ‘গড়াই’ নামে তাদের একটি ইটের ভাটা আছে। প্রতিদিনের মতো গত ৪ জুন ভাটায় যান মিরাজ। রাত সাড়ে ৮টার দিকেও মোবাইল ফোনে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। রাত ১০টার দিকে স্ত্রী সখি খাতুন মিরাজের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। ওইদিন রাতে মিরাজ আর বাড়িতে ফেরেননি। নিকট আত্মীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে গত ৬ জুন কুমারখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তার স্ত্রী। কিন্তু পুলিশ আজ পর্যন্ত মিরাজকে উদ্ধার বা তার সন্ধান দিতে পারেনি। সংবাদ সম্মেলনে মিরাজের ছোট ভাই মেজবাউর রহমান জানান, মিরাজের কর্মজীবনের শুরু নৌকার দাঁড়টানা মাঝি হিসেবে। সেখান থেকে তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভায় দিন-হাজিরার শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি গড়াই নদীর ফেরিঘাটে ঠিকাদারের অধীনে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই নিজ যোগ্যতায় মিরাজ শ্রমিকদের সর্দার হন। দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করার ফলে তিনি বালু ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। কঠোর পরিশ্রম ও সততার গুণে আস্তে আস্তে তিনি এ ব্যবসায় নিজের ভালো অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন। এক পর্যায়ে মিরাজ বালু মহাল ইজারা নেয়া শুরু করেন। পাশাপাশি গড়াই নদীর তীরে ‘গড়াই ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটা প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার হিসেবেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করছিলেন। তিনি এলাকার গরীব-দুঃখী মানুষের সাহায্যে সব সময় এগিয়ে এসেছেন। এতে মিরাজ এলাকায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন। আগামী নির্বাচনে কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। মেজবাউরের দাবি অর্থ আর অতিরিক্ত জনপ্রিয়তার কারণেই তার ভাইকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মিরাজের ব্যবসায়ীক অংশীদার কোহিনুরও একই ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চাইছিলেন। মিরাজ নিখোঁজের পর থেকে কোহিনুর, তার ভাই আলতাব মাস্টার ও চাচাতো ভাই ‘সন্ত্রাসী’ শাহজাহান গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের ব্যবহৃত ফোনও বন্ধ। অর্থ আত্মসাত ও নির্বাচনে পথের কাঁটা সরাতে আলতাফ, কোহিনুর ও শাজাহান গংরা মিরাজকে অপহরণ করেছেন বলে দাবি করে মিরাজের স্ত্রী সখি খাতুন নিখোঁজ স্বামীকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আল-মামুন সাগর/এমজেড/এমএস/এসআরজে

Advertisement