জাতীয়

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে ‘মিয়ানমারের উত্তর নেই’

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কীভাবে হবে সে বিষয়ে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে গত ২ অক্টোবর এমন সিদ্ধান্ত এলেও এ বিষয়ে ‘কোনো অগ্রগতি নেই’ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী

Advertisement

সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়ে মিয়ানমার সরকার এখনও কোনো উত্তর দেয়নি।’

ফাইল ছবি

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি’র দফতরের মন্ত্রী কিও তিন্ত সোয়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যাবাসন কীভাবে হবে সে বিষয়ে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে দুই দেশ। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ কাজ শুরু করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তবর্তী পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের রাখাইন পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির সরকার। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনিও রাখাইন পরিদর্শনে যাবেন।

ফাইল ছবি

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘মিয়ানমারের সরকার প্রস্তাব করেছে, তাদের প্রতিবেশী পাঁচটি দেশ বিশেষ করে যাদের সঙ্গে তাদের সীমান্ত আছে অর্থাৎ চীন, ভারত, বাংলাদেশ, লাওস ও থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতদের তারা (মিয়ানমার সরকার) উত্তর রাখাইনে নিয়ে যাবে; পরিস্থিতি দেখার জন্য। আমাদের রাষ্ট্রদূতকেও তারা ইনভাইট (আমন্ত্রণ) করেছে, দেখার জন্য। আমরা তাকে (বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত) বলেছি, অবশ্যই আপনি যাবেন। এটা হয়তো দু-একদিনের মধ্যে হবে।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, আগামী ২০-৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (আসাদুজ্জামান খান কামাল) মিয়ানমারে যাওয়ার তারিখ প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশটির সরকারের উত্তর পেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটি সফরে যাবেন। আমরা উত্তরের অপেক্ষায় আছি।

‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে দুটি এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষর হওয়ার কথা। একটা হচ্ছে বর্ডার লিজ অন অফিস, আরেকটা হচ্ছে বর্ডার এগ্রিমেন্ট অন সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। এই দুটো হলে দুই দেশের মধ্যে বর্ডার (সীমান্ত) সম্পর্কিত যে ঘটনাবলি হয় সেগুলো নিরসনে যথেষ্ট অগ্রগতি হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সীমান্তে যে আমরা বিশ্বাস করি, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এখন তো বল আমরা তাদের কোটে দিয়েছি। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যাওয়ার তারিখ আমরা দিয়েছি, এখন তারা তারিখ দেবে। তাদের কাছ থেকে তারিখ আসলেই উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) যাবেন। উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ঘুরে আসলেই আমি আমার যাওয়ার তারিখ বলব।’রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা সমালোচনা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তাই করা হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি করা সম্ভব নয়।’

সেখানে উপস্থিত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘রেডক্রসের মাধ্যমে মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছু ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী নতুন করে অভিযান শুরুর পর গত ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘ রাখাইনের ওই সেনা অভিযানকে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। গত কয়েক দশক ধরে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ বলে আসছে, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জায়গা দেয়া হলেও মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।

গত ২ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি’র দফতরের মন্ত্রী কিও তিন্ত সোয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে?

উত্তরে আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, এ বিষয়ে দু’দেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মত হয়েছে। একটা সভা দিয়ে তো সব সমাধান হবে না। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপটা তৈরি করতে হবে। সেখানে দু’দেশেরই লোক থাকবে। খুব তাড়াতাড়ি আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু করা হবে।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অষ্টম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে সময়ে দুই মাসের মধ্যে শিবিরে থাকা তালিকাভুক্ত দুই হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিয়ানমার। তবে এখনও তাদের ফিরিয়ে নেয়নি দেশটি।

১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যায়। এরপর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে।

এইউএ/এমএআর/জেআইএম