বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অপহৃত নায়েক আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) কী চাচ্ছে তা ৩ দিনেও স্পষ্ট হওয়া যায়নি। তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে দফায় দফায় বিজিপির সঙ্গে চিঠি ও অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মিলছে না বিজিপির পক্ষ থেকে। উপরন্তু বিজিপি আব্দুর রাজ্জাককে হাতকড়া পরিয়ে অপরাধীর মতো কয়েক ধরনের ছবি তুলে তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রচার করা হচ্ছে। বিজিপির এ `রহস্যময়` আচরণে বেড়েছে ক্ষোভ ও শঙ্কা । শুক্রবার সন্ধ্যায় টেকনাফ ৪২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, মিয়ানমার তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে নায়েক রাজ্জাকের হাতকড়া পরিহিতসহ কয়েক ধরনের ছবি প্রকাশ করেছে। যা চরম অবমাননাকর ও প্রতিবেশি দেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার শামিল। বিজিবির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে, নায়েক রাজ্জাককে ফেরতের বিষয়ে মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় বিজিপি পতাকা বৈঠকের সময় দিতে পারছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে অপহৃত নায়েক রাজ্জাককে বিজিপি’র বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে এবং তার কাছ থেকে উদ্ধার করা রাইফেল ও অন্যান্য সামগ্রী সামনে রেখে অপরাধীর মতো ছবি তুলে এবং বিভিন্ন ভাষায় কটাক্ষ করে মিয়ানমারের সরকারি ওয়েবসাইটে তা প্রচার করা অমানবিক আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার সংস্থাসহ একাধিক সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা। উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব গফুর মিয়া চৌধুরী, সুজন-এর উখিয়া উপজেলা সভাপতি নূর মোহাম্মদ শিকদার ও কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামসহ অনেকের মতে, প্রতিবেশী দেশের একটি সরকারি বাহিনীর কর্মকর্তার সঙ্গে কী ধরনের শোভন আচরণ করতে হয় সে জ্ঞানটুকুও মিয়ানমার বিজিপির সদস্যদের নেই। এভাবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পোশাক পরিহিত সদস্যকে অপমানের যথাযথ জবাব সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তারা। বিজিবি সদস্যকে ফেরত না দিয়ে তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল উল্লেখ করে, উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বিজিবি সদস্যকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা। উল্লেখ্য, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার বিজিবির সদস্যরা বুধবার সকালে দমমিয়া চেকপোস্টের বিপরীতে লালদিয়া নামক স্থানে টহল দিচ্ছিলেন। ওই সময় একদল চোরকারবারীকে ধাওয়া করেন বিজিবি সদস্যরা। একপর্যায়ে চোরকারবারীরা বিজিবির আওতার বাইরে চলে যায়। এসময় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বিজিবির টহল দলের উপর গুলিবর্ষণ করে। এতে বিপ্লব নামে এক সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাক নাফ নদীতে পড়ে গেলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়।তবে বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম এম আনিসুর রহমান শুক্রবার ৩৭ বালাদেশিকে মায়ানমার থেকে ফেরত আনার পর বলেছিলেন, বুধবার টেকনাফের নাফ নদীর জাদিমুরা পয়েন্ট সীমান্তে বিজিবি-বিজিপির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে গোলাগুলির ঘটনায় ধরে নিয়ে যাওয়া বিজিবি সদস্য নায়েক রাজ্জাকের বিষয়টি নিয়ে পতাকা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে আরো একটি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে নায়েক রাজ্জাককে ফেরত দিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সেক্টর কমান্ডারের এ তথ্য প্রকাশ পাবার পর সবার মাঝে স্বস্তি দেখা দিলেও নায়েক রাজ্জাককে নিয়ে প্রকাশ করা ছবি শঙ্কা এবং ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সায়ীদ আলমগীর/এমজেড/এমএস/এসআরজে
Advertisement