মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তবর্তী পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের রাখাইন পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটির সরকার। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনিও রাখাইন পরিদর্শনে যাবেন।
Advertisement
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
তিনি বলেন, আগামী ১০-২০ অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (আসাদুজ্জামান খান কামাল) মিয়ানমারে যাওয়ার তারিখ প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশটির সরকারের উত্তর পেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটি সফরে যাবেন।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী নতুন করে অভিযান শুরুর পর গত ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘ রাখাইনের ওই সেনা অভিযানকে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। গত কয়েক দশক ধরে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ বলে আসছে, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জায়গা দেয়া হলেও মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।
Advertisement
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও দেশটিতে সফরে যাওয়ার কথা সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।
এর আগে ২ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি’র দফতরের মন্ত্রী কিও তিন্ত সোয়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যাবাসন কীভাবে হবে সে বিষয়ে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে দুই দেশ। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ কাজ শুরু করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শিগগিরই মিয়ানমার সফরে যাবেন। সেই সফরে মিয়ানমারের সঙ্গে ‘সীমান্ত সুরক্ষা সম্পর্কিত একটি সমঝোতা স্মারক’ সই হতে পারে। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির প্রস্তাব করেছে। চুক্তির খসড়া প্রস্তাবও হস্তান্তর করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই সময় আরও জানান, এ বিষয়ে দু’দেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মত হয়েছে। একটা সভা দিয়ে তো সব সমাধান হবে না। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপটা তৈরি করতে হবে। সেখানে দু’দেশেরই লোক থাকবে। খুব তাড়াতাড়ি আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু করা হবে।
Advertisement
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অষ্টম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে সময়ে দুই মাসের মধ্যে শিবিরে থাকা তালিকাভুক্ত দুই হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিয়ানমার। তবে এখনও তাদের ফিরিয়ে নেয়নি দেশটি।
১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যায়। এরপর থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে।
এইউএ/এমএআর/জেআইএম