ধর্ম

প্রতিদান লাভে নিয়তের পরিশুদ্ধতার গুরুত্ব অপরিসীম

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ আর আমল হলো আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগির অপর নাম।

Advertisement

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার ইবাদত-বন্দেগির জন্যই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি বান্দাকে তার কাজের স্বাধীনতাও দিয়েছেন।সুতরাং আমল বা কাজ সম্পাদনে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। ভালো কাজ বা নিয়তের ফলাফল ভালো এবং মন্দ কাজ বা নিয়তের ফলাফল হবে মন্দ।

নিয়ত সম্পর্কে প্রিয়নবির বক্তব্য>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে লক্ষ্য করেন।’ (মুসলিম)

>> অন্য এক হাদিসে প্রিয়নবি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভালো কাজের পরিকল্পনা করল; কিন্তু বাস্তবে সে ওই কাজ করতে পারল না, ওই ব্যক্তির (ভালো কাজের পরিকল্পনাকারীর) জন্যও সাওয়াব লেখা হবে।’ (মুসলিম)

Advertisement

হাদিসের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, শুধু ভালো কাজের পরিকল্পনা করার দ্বারাই কাজটি ভালো কাজ হিসেবে গণ্য হয়ে যায়; ভালো কাজের প্রতিদান সাব্যস্ত হয় এবং ভালো কাজের সাওয়াব অর্জন হয়। যা নিয়তের পরিশুদ্ধতার কারণেই সম্ভব হয়।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসে নিয়তের পরিশুদ্ধতার গুরুত্ব ফুঠে ওঠেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণিত নিয়তের পরিশুদ্ধতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো-

>> আল্লাহ তাআলা এক ব্যক্তিকে সম্পদ ও জ্ঞান (ইলম) দান করেছেন; অতঃপর ওই ব্যক্তি তার জ্ঞান দ্বারা আমল (ইবাদত-বন্দেগি) করে আর তার সম্পদকে হক (সঠিক) পথে খরচ করে।

পক্ষান্তরে অন্য এক ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা জ্ঞান (ইলম) দান করেছেন ঠিকই কিন্তু তাকে সম্পদের মালিক করেননি। তথাপিও ওই ব্যক্তি অভিব্যক্তি প্রকাশ করে যে, ‘আমার যদি ওই ব্যক্তির মতো ধন-সম্পদ থাকত তবে আমি ওই ব্যক্তির মতই কাজ (সঠিক পথে সম্পদ ব্যয়) করতাম।

Advertisement

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-‘সাওয়াবের ক্ষেত্রে সম্পদশালী ব্যক্তি ও সম্পদহীন ব্যক্তি উভয়ে সমন।’

>> আবার আল্লাহ তাআলা এক ব্যক্তিকে সম্পদ দান করেছেন কিন্তু তাকে জ্ঞান (ইলম) দান করেননি; অতঃপর ওই ব্যক্তি তার সম্পদকে অন্যায় পথে এলোমেলোভাবে খরচ করে।

অন্য এক ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ ও জ্ঞান (ইলম) কোনো কিছুই দান করেননি; অতঃপর ওই ব্যক্তি বলে, ‘আমার যদি সম্পদশালী ব্যক্তির ন্যয় ধন-সম্পদ থাকত তবে আমিও ওই ব্যক্তির নয় অন্যায় পথে এলোমেলোভাবে খরচ করতাম।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-‘গোনাহের ক্ষেত্রে তারা উভয়ে সমান (অপরাধী)।’ (ইবনে মাজাহ)

প্রথম ঘটনার দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পদহীন ব্যক্তি সম্পদ দান করা ছাড়াই সাওয়াবের অধিকারী হয়েছে শুধুমাত্র নিয়তের পরিশুদ্ধতার কারণে। নিয়ত যদি পরিশুদ্ধ হয় তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে কোনো বাধা থাকে না।

আবার দ্বিতীয় ঘটনার দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পদহীন ব্যক্তি অন্যায় পথে সম্পদ খরচ না করেও গোনাহগার বা অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে শুধুমাত্র নিয়তের কারণে। কারণ সম্পদ থাকলে সে-ও অন্যায় পথে এলোমেলোভাবে খরচ করার নিয়ত করেছিল।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা মানুষের নিয়তের পরিশুদ্ধতায় সাওয়াব দান করেন; আবার নিয়ত যদি খারাপ হয় তবে সে খারাপ নিয়ত পোষণ করার ফলে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করেন।

পরিশেষে...যেহেতু ভালো নিয়তের ফলে সাওয়াব হয় আর মন্দ নিয়তের ফলে গোনাহ হয় তাই নিয়তের পরিশুদ্ধতার গুরুত্ব অপরিসীম।

আল্লাহর তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় কথা ও কাজে নিয়তের পরিশুদ্ধতা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। খারাপ বা অন্যায় কাজ করার নিয়ত পোষণ করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আইআই