রাজনীতি

তত্ত্বাবধায়ক নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চান এরশাদ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, নির্বাচনের আগে সরকার ভেঙে দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। একই সঙ্গে বিএনপি বর্তমান সংসদে না থাকায় তাদের এ সরকারের থাকার কোনো সুযোগ নেই বলেও মত দেন তিনি।

Advertisement

সোমবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে অন্যান্য কমিশনারসহ ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে এরশাদের নেতৃত্বে ২৫ সদস্য প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেন।

লিখিত বক্তব্যে এরশাদ দাবি করেন, প্রতিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জাতীয় পার্টির প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। ফলে দলটি মনে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ সাধনের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

লিখিত প্রস্তাবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনে স্বশস্ত্র বাহিনী মোতায়ন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করা, নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল দলের আনুপাতিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অন্তবর্তী সবকার গঠন করতে হবে। দলীয় প্রধানের সুপারিশের ভিত্তিতে অন্তবর্তী মন্ত্রিসভার সদস্য নিয়োগ করতে হবে। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনে কোনো বিতর্কিত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব রাখা যাবে না।

Advertisement

দলটি মনে করে, নির্বাচনী ব্যয় সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে সব খরচ তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করতে হবে। প্রচার কাজের গাড়িবহর সীমিত রাখার বিধান রাখতে হবে। সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ প্রসঙ্গে বার বার সীমানা নির্ধারণ না করে ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রয়োজনে সংবিধানের ধারা-উপধারা সংশোধন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-নির্বাচন কমিশনের অধীনে দিয়ে আসতে হবে।

নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনা করতে হবে মত দিয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, জাতীয় পার্টির একটি সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বচনের ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন। এ পদ্ধতিতে সন্ত্রাসী, মাস্তান, কালো টাকার মালিক, অর্থ ও বিত্তের জোরে রাজনীতিতে অনবিজ্ঞ ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন কিংবা নির্বাচনে জিতে আসার সুযোগ রয়েছে।

সৎ-বিজ্ঞ, ত্যাগী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনসেবা ও দেশসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থাই হচ্ছে দলীয় শাসন। আর গণতান্ত্রিক শাসনের মূল কথা হচ্ছে- সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেও দেখা যায় অনেক সময় সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন থাকে না। যেহেতু সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি যখন দলীয় শাসন ব্যবস্থা- সেক্ষেত্রে নির্বাচনও শুধু দলের ভিত্তিতে হতে পারে। অর্থাৎ ভোটারগণ দলকে ভোট দেবেন। সরাসরি প্রার্থীকে নয়।

দাবির মধ্যে আরও রয়েছে, প্রত্যেক দল প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসনের সদস্য পাবে। বর্তমানে বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত যেসব দেশে এ পদ্ধতি প্রচলন রয়েছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে ইসি। এরই ধারবাহিকতায় এই বৈঠক হয়। ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে মত বিনিময় করেছে ইসি। ২৪ আগস্ট থেকে দলগুলোর সঙ্গে মত বিনিময় শুরু হয়েছে। এর আগে ২৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি।

এইচএস/আরএস/জেআইএম