খেলাধুলা

মুশফিককে নিয়ে দু’রকম পরামর্শ লিপু-ফারুকের

মুশফিক নিজে থেকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন কিংবা বোর্ড তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দিতে পারে- এমন গুঞ্জনে মুখরিত দেশের ক্রিকেটাঙ্গন।

Advertisement

জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু আর ফারুক আহমেদ এমন একটি আলোচিত-আলোড়িত ইস্যু নিয়েই কথা বলেছেন জাগো নিউজের সাথে।

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু মনে করেন, ‘যদি মুশফিক সত্যিই নিজেকে অধিনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে, যদি অন্য কারো দ্বারা তাকে পরিচালিত হতে হয়, তাহলে আমি বলবো মুশফিকের এখনই সড়ে দাঁড়ানো উচিৎ।’

আর সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ মনে করেন, ‘সিরিজের মাঝামাঝি বা সিরিজ চলাকালীন অধিনায়কের কাজ কর্ম, কথা-বার্তা নিয়ে এত হই চই না করে সিরিজ শেষে অধিনায়কের পারফরমেন্সের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা উচিৎ। এখন অধিনায়কত্ব নিয়ে কথা হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পারফরমেন্সও খারাপ প্রভাব পড়বে।

Advertisement

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, ‘অনেক সময় পরিবর্তন খারাপ হয় না। অধিনায়ক যদি দলে তার পরিপূর্ণ ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে না পারে, কিংবা সাহসের সাথে সব সিদ্ধান্ত নেয়ার অবস্থা না থাকে, যদি তাকে অন্য কেউ পরিচালিত করেন, তাহলে তার সড়ে দাঁড়ানো উচিৎ।’

তবে লিপুর জোর দাবি, মাঠের দায়িত্ব পুরোপুরি ক্যাপ্টেনের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিৎ। তার ব্যাখ্যা, কোচ লক্ষ্য ও কৌশল নির্ধারণ নিয়ে কাজ করবেন। অধিনায়কের সাথে গেম প্ল্যান শেয়ার করবেন। দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিয়েও কথা হবে; কিন্তু মাঠে অধিনায়ককে জায়গামত সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দিতে হবে।

মনে রাখতে হবে যদি মুশফিকের জায়গায় অন্য কাউকেও অধিনায়ক করাও হয়, তখনো কিন্তু এ বিষয়টি মাথাচাড়া দিতে পারে। তার পরিণাম ভাল হবে না। তাই আগেভাগে ঠিক করতে হবে, মুশফিকের জায়গায় যাকেই অধিনায়ক করা হোক না কেন, তাকে পুরোপুরি অথরিটি দিতে হবে।

বলা হচ্ছে সব দায় দায়িত্ব মুশফিকের একার। এ বিষয়ে লিপুর ব্যাখ্যা, আগে দেখতে হবে বাকি দুই ফরম্যাট মানে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি অধিনায়করা কি বলছেন। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অন্য ফরম্যাটে কি হচ্ছে, সেটা খুঁটিয়ে দেখা। যদি অন্য ক্যাপ্টেনরা ঠিক মানিতে নিতে পাওে, তাহলে এক রকম। আর সব জায়গা থেকে যদি একই রকম অভিযোগ আসে তাহলে বোর্ডের বিষয়টা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিৎ।

Advertisement

আমার কথা হচ্ছে, কোচ কৌশলগত বিষয় দেখবেন। ঠিক বরবেন। তবে নেতৃত্বের ব্যাপারে যেন কোচ ভুমিকা না রাখেন।

জাতীয় দল থেকে সড়ে দাঁড়ানোর পর বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ হওয়া গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর ধারণা, খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন মুশফিক

না ব্যাটসম্যান না বোলার কেউই ভাল খেলতে পারেননি যে কারণে মুশফিক হয়ত আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। লিপুর শেষ কথা, ‘টেস্ট ম্যাচের কঠিন অধ্যায়টা কঠিন ভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।’

অন্যদিকে সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘পুরো পরিস্থিতির দায় ভার সবার। একা মুশফিকের নয়। টিম ম্যানেজমেন্টেরও আছে। মুশফিককে একা দায়ী করবো না। মুশফিকের সমস্যা আছে। সে সব কথা বলে না। কিছু কিছু কথা বলে। তাকে থার্ড ম্যানে ফিল্ডিং করতে বলা হয়েছে। তার মানে বাইরে থেকে তাকে দুরে ফিল্ডিং করতে বলা হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট এসব কি করছে?’

ফারুকের উপলব্ধি মুশফিকের প্রেস মিটে সব কথা বলা উচিৎ হয়নি। ক্যাপ্টেন ভাল ফিল্ডার না। সে লাইনে ফিল্ডিং করবে- এমন কথা নিশ্চয়ই টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বলা হয়েছে। সেটাও ঠিক না। তাই যদি হয়, তাহলে ক্যাপ্টেন্সি নিশ্চয়ই মাঠের বাইরে থেকে হবে। এটা মোটেই ভাল চর্চা নয়। রীতিমত ক্রিকেটীয় রীতিনীতির বাইরে।

ফারুকের মূল্যায়ন, টিম কখনো ভাল খেলবে আবার কখনো খারাপ খেলবে। এই দলই তো দারুন নিখাদ ক্রিকেট খেলেছে। আমার কথা হলো, ভাল খেললে সবাই বাহবা নিবে আর খারাপ খেললে সব দায় দায়িত্ব ক্রিকেটারদের ওপর বর্তাবে, তা কেন?

ফারুকের শেষ কথা, কোনভাবেই সিরিজ চলাকালীন মুশফিকের অধিনায়কত্ব নিয়ে বেশি কথা বলা ও হই চই করা ঠিক হয়নি। তাতে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একটা সিরিজ শেষে আর একটা সিরিজের মাঝে বেশ কিছুদিন সময় থাকে, সাধারণত ওই সময় বোর্ড কর্তারা বসে অধিনায়কের পারফরমেন্স খুঁটিয়ে দেখেন। পর্যালোচনা করেন। তখনই ঠিক হয় অধিনায়ক থাকবে, না নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে! এখনই মুশফিকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কিছু নেই। সেটা পরে বসে ঠিক করা যেতে পারে।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম