১.সুইটির বয়স বিশ বৎসর। ইতিহাস বিষয় নিয়ে ২য় বর্ষে অনার্স পড়ছে। মাঝারি উচ্চতা, হালকা-পাতলা চেহারা, টানাটানা চোখ, লম্বাটে মুখমণ্ডল, চোখা থুতনি, হাসলে দারুণ লাগে ওকে।
Advertisement
ফেসবুকে প্রোফাইল দেখছিল সোহেলের। সোহেল মডেলিং আর নাটকে আগ্রহী। ছেলেটা স্টাইলিস্ট। বয়স ২৪ বছর। মাঝারি উচ্চতা, গায়ের রং শ্যামলা, পেটানো স্বাস্থ্য, লম্বাটে মুখ। ছয় দিন আগে সোহেলের সাথে ফেসবুকে পরিচয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাটিং, মেসেজ আর ফোনে কথা হয় ওদের। ছেলেটা এরই মধ্যে পাগল হয়ে গেছে ওর জন্য। সোহেল সহজ-সরল, দেখতে হ্যান্ডসাম। কিন্তু কথা বলে আঞ্চলিক ভাষায়।
দাঁত দিয়ে ডান হাতের নখ কামড়াতে কামড়াতে ভাবছিল সুইটি। এমন সময় মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। সোহেল কল করেছে। হ্যালো, ফোন রিসিভ করে বললো সুইটি। হ্যালো, জান তুমি কেমন আছ? ভালো, আপনি? তোমাকে না দেখলে ক্যামনে ভালো থাকি। মনে হইতাছে মইরা যাবো। খুব আবেগ সোহেলের গলায়। মরে যান। আপনার মরাই উচিত। তুমি কি নিষ্ঠুর, আমার জন্য এতটুকু মায়া হয় না তোমার!আচ্ছা, আপনি এখন কোথায়? খুব আগ্রহ ভরে জিজ্ঞাসা করলো সুইটি। আমার রুমে, ক্যানো?আপনার রুমমেট নাই? না। আজিম ভাই ট্যুরে গেছে। পাঁচ দিন পরে ফিরবে। আর কেউ নাই? না, কে থাকবে?রান্না কে করে? বুয়া। সে কখন আসে? সকাল আটটায়। এসব কেন জিজ্ঞাসা করছো জান? অবাক সুরে বললো সোহেল। এমনিতেই জিজ্ঞাসা করছিলাম। বামহাতে মাথার চুলগুলোর উপর আঙুল চালিয়ে আচড়াচ্ছিল সুইটি।জান, দেখা করবা? জিজ্ঞাসা করলো সোহেল।কোথায়?যমুনা ফিউচার পার্কে। না, কেউ যদি দেখে ফেলে?দেখলে সমস্যা কি? বলবা আমি তোমার হবু বর। ইস! বর। বউ পালতে টাকা লাগে। কবে প্রতিষ্ঠিত হবেন তার কোন ঠিক আছে? তাহলে দূরে কোথাও? আশুলিয়ার দিকে যাই। আহত সুরে বললো সোহেল। না থাক। আপনার বাসাটা আমার দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পুরুষ মানুষ আমি বিশ্বাস করি না। জান, তুমি আমারে ওমন ভাবলা! হুম! আপনাকে অবশ্য বিশ্বাস করি আমি। থ্যাংক ইউ! এখন আসবা? খুশি হয়ে জিজ্ঞাসা করলো সোহেল।না, দেখি। যাবো হয়তো একদিন। আসো না জানু! তোমাকে দেখার জন্য মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে। খুব অনুনয় করে বললো সোহেল। জানাবো, বাই। ফোন কেটে দিল সুইটি।
২.চুল আঁচড়ে, ওড়না ঠিক করলো সুইটি। এই দ্যাখো তো, জামা-কাপড় ঠিক আছে কি না? সোহেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।সব ঠিক আছে, আর একটু থাকো না প্লিজ। নিজের তো ভাঙা খাট। অন্যের রুমে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ডেট করতে খুব ভালো লাগে, না? ঝাঁঝালো গলায় বললো সুইটি। আরে বাদ দাও। আজিম ভাইয়ের প্রমোশন হইছে। এখন ষাট হাজার টাকা বেতন। মেয়ে দেখতেছে বিয়ে করবো। উনার এসব নিয়া চিন্তা করার সময় নাই। এই শোনো, আজিম ভাই ফর্সামতো, একটু খাটো আর মোটা তাই না? হ্যাঁ, তুমি চেন? কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো সোহেল। উনি একসময় আমার ছোট ভাইকে পড়াতো। খুব ভালো ছাত্র ছিল। চাকরি পাবার পর দেখা হয় নাই কখনো। তাই, আজব তো। অ্যাই, তুমি কখনো ওনাকে আমার কথা বলবা না। তাহলে আব্বা-আম্মাকে বলে দেবে। বাসায় বিরাট ঝামেলা হবে। ঠিক আছে। ৩.গতমাসে একদিন সামান্য ব্যাপারে প্রচণ্ড ঝগড়া হয় সোহেল আর সুইটির মধ্যে। রাগে গট গট করে রিকশা থেকে নেমে চলে যায় সুইটি। তারপর ফেসবুকে, ফোনে, সামনা-সামনি অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে সোহেল। সুইটি আর ওকে পাত্তাই দেয় না। সোহেল শুনেছে- ওর বন্ধু আবিদের সাথে প্রেম চলছে সুইটির।
Advertisement
মন ভেঙে গেছে সোহেলের। স্থির করেছে, সে আর ঢাকা শহরেই থাকবে না। যাবার আগে শেষবারের মতো ফোন করলো সুইটিকে।হ্যালো।তোমাকে না বলছি আমাকে ফোন না দিতে। ধমকের সুরে বললো সুইটি। জান, আমি ঢাকা থেকে চলে যাচ্ছি। অনেক কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া। ও।আবিদ ছেলেটা ভালো না। অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো ওর। তাতে তোমার কি? আমি কার সাথে মিশবো, তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে? আমি তোমারে ভালোবাসি। তোমার মঙ্গল চাই। বলতে বলতে কেঁদে ফেললো সোহেল।আরে সোহেল! সোহেল! শোন এসব ছেলেমানুষি করো না। শরীরের সম্পর্ক কিছু না। আসল হলো মন। তুমি সব ভুলে যাও। সবকিছু এত সিরিয়াসলি নিও না। সম্পর্কে ব্রেকআপ হতেই পারে। আচ্ছা রাখি। বলে ফোন কেটে দিল সুইটি।
৪.আজিমের বয়স চল্লিশ হলো। এতদিনে বিয়ে করছে সে। পড়াশোনা, চাকরি, ছোট-ভাই বোনদের জন্য টাকা রোজগার করতে করতে নিজের কথা চিন্তা করার সময় পায়নি। বর্তমানে সেলস ম্যানেজার। অনেক বেতন তার। সুন্দর একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। ফ্রিজ, টেলিভিশন, সোফা সবই নতুন কেনা। সংসার সাজানো নিয়ে দারুণ ব্যস্ত এখন। আর একা থাকা নয়; এবার সত্যিই সংসার বাঁধছে আজিম। ঢাকা শহরে আসার পর প্রথম কয়েক মাস টিউশনি করতো আজিম। শফিক সাহেবের ছেলেকে পড়াতো। শফিক সাহেবের বড় মেয়ে সুইটি। তার সাথে এনগেজমেন্ট হল সাত দিন আগে। এরই মধ্যে সুইটিকে ভালোবাসতে শুরু করেছে আজিম।
আজিমের রুমমেট সোহেল ছেলেটার সাথে সেদিন দেখা। কী সুন্দর ফিগার ছিলো ছেলেটির! ব্যায়াম করতো নিয়মিত। এখন কেমন যেন হতাশ আর উদাসীন হয়ে গেছে। বিয়ের দাওয়াত দিলো সোহেলকে। কনে ‘সুইটি’ শুনে চমকে উঠেছিল সোহেল। কোন কথা না বলে হঠাৎ দ্রুত চলে গেল। ব্যাপারটা কী! একটু ফোন করি তো। ভাবলো আজিম। হ্যালো, সোহেল কেমন আছো? ভালো না ভাই। কেন, কী হয়েছে?আপনে শুনলে দুঃখ পাবেন ভাই। সোহেল হেয়ালি করো না তো। ধমক দিল আজিম। আমি তোমার বড় ভাইয়ের মতো। আমাকে বলো।ভাই, সুইটি আর আমার প্রেম ছিলো। ওরে নিয়া আপনার রুমেই ডেট করছি আমি। হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করছিল আজিমের। তবুও বললো, তারপর কী হল তোমাদের? আমার পরে ও অন্য একটা ছেলে আবিদের সাথে প্রেম করতো। ও, তুমি কি এখনো সুইটিকে ভালোবাসো? প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করার পর বুকের ভেতর হা-হা করছিল আজিমের। জ্বি ভাই। ঠিক আছে, রাখি সোহেল। আমি তোমাকে পরে ফোন করবো। ৫.সুইটিদের বাসায় সোফায় বসে আছে আজিম। কি খবর, কেমন আছো? এরই মধ্যে আপনি থেকে ওকে তুমি বলা শুরু করেছে সুইটি। ভালো। দুঃখের হাসি দিয়ে বললো আজিম। আজকে বিয়ের শাড়ি কিনতে যাবো মা’র সাথে।সুইটি, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। কেন! খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো সুইটি।সোহেল আমাকে সবকিছু বলেছে। ও এখনো তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। ওই কুত্তার বাচ্চা সোহেলরে আমার সামনে আইসা কথা বলতে বলো। রাগে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বসে পড়লো সুইটি। ওর কথা মিথ্যা হতে পারে। কিন্তু ওর হঠাৎ মানসিক বিপর্যয়টা মিথ্যা না। ও খুব হাসি-খুশি একটা ছেলে ছিলো। হঠাৎ কী এমন হলো ওর! এমনভাবে বললো যেন নিজেকেই প্রশ্ন করছিল আজিম। দ্যাখো। চারিদিকে সবাই জানে, তোমার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে। এখন এসব কথা বলে লাভ নেই। আমি দুঃখিত সুইটি। খেলা পাইছো! এতদিন পরে তুমি এসব বলতেছো। আগে খোঁজ-খবর নিতা, আমার মতো ভালো মেয়ে এই তল্লাটে নাই। রাগে প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করছিল সুইটি। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাচ্ছিল আজিম। আজিম প্লিজ। আমার সাথে সোহেলের কোন সম্পর্ক ছিলো না। অঝোরে কাঁদছিল সুইটি।
৬.সে রাতেই পুলিশ এসে গ্রেফতার করলো আজিমকে। সুইটি মামলা করেছে। বিয়ের প্রলোভনে তাকে ধর্ষণ করেছে আজিম। ডাক্তারি রিপোর্টে দেখা গেলো- সুইটি কুমারী নন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে আজিম, সেটা প্রমাণিত! কিন্তু আজিম যে কুমার। এখনো পর্যন্ত কোন নারীদেহ স্পর্শ করেনি। কেউ কি বিশ্বাস করবে তা?
Advertisement
এইচআর/আরআইপি