ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় কবর থেকে কঙ্কাল চুরির আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন মৃতের স্বজনরা। ৭-৮ জনের একেকটি দল বিভক্ত হয়ে কয়েকদিন যাবত এ পাহারা বসিয়েছে। সম্প্রতি দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে কবর থেকে কিছু মরদেহ ও হাড়-কঙ্কাল নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় চুরি ঠেকাতে এ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নলছিটির কুশঙ্গল ইউনিয়নের জামুড়া, মাদারঘোনা ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে সম্প্রতি বয়োজ্যেষ্ঠ এক নারীসহ পাঁচ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। তাদের মধ্যে জামুড়া গ্রামের মুজাহার হাওলাদার, মাদারঘোনা গ্রামের বেলাতুন্নেছা বেগম ও লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর এক থেকে ছয় মাসের মধ্যে রাতে কবর খুঁড়ে মরদেহগুলো নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। মরদেহে এক ধরনের ওষুধ (মেডিসিন) দিয়ে মাংস ছাড়িয়ে হাড়গুলো নিয়ে যায় তারা। অন্য দুটি কবর খোঁড়ার শব্দ পেয়ে স্বজনরা বের হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
কী কারণে কঙ্কাল চুরি হচ্ছে, তা জানে না মৃত ব্যক্তির স্বজনরা। তাই এসব গ্রামে সদ্যমৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা রাত জেগে কবর পাহারা দিচ্ছে। এ দুর্বৃত্তচক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ স্বজনরা।
জামুড়া গ্রামের মৃত মুজাহার হাওলাদারের ছেলে মাসুম হাওলাদার বলেন, ছয় মাস আগে আমার বাবা মারা যান। তার মৃত্যুর ২২ দিন পর সকালে কবরস্থানে গিয়ে মাটি খোঁড়া ও মরদেহের মাংস পড়ে থাকতে দেখি। রাতে কবর থেকে মৃতদেহ তুলে মেডিসিন দিয়ে হাড়গুলো নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।
Advertisement
তিনি বলেন, একটি সংঘবদ্ধচক্র এই অপকর্ম করছে। এভাবে অনেকেরই মরদেহ দুর্বৃত্তরা নিয়ে গেছে। যারা এমন অমানবিক কাজ করে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মাদারঘোনা গ্রামের মৃত বেলাতুনেচ্ছার মেয়ে নূরজাহান বেগম বলেন, আমার মায়ের মরদেহ চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। আমরা লোকলজ্জায় কাউকে বিষয়টি জানাতে পারিনি। মায়ের মরদেহ চুরি হওয়ার কিছুদিন পর পার্শ্ববর্তী লিয়াকত আলী খানের মরদেহও চুরি হয়।
কুশঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নে এমন তিন-চারটি ঘটনা শুনেছি। আমার মনে হয় সংঘবদ্ধ একটি চক্র মরদেহগুলো চুরি করছে। আমি ওয়ার্ড সদস্যদের (মেম্বার) বিষয়টি নজরদারি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কাউকে ধরতে পারলে চক্রটির সন্ধান পাওয়া যাবে।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, এমন অমানবিক ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement
আতিকুর রহমান/এফএ/এমএস